https://imrulkayesartgallery.blogspot.com/2025/06/blog-post.html

Sunday, October 22, 2023

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব ছয়

 

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব ছয়
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি★রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়★রবীন্দ্র মিউজিয়াম★নাখোদা মসজিদ
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি:
কলকাতার রবীন্দ্র সরণিতে(পূর্বনাম চিৎপুর রোড) অবস্থিত নোবেল বিজয়ী প্রথম এশিয়ান, বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনস্থানের নাম ‘জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি’। ঐতিহ্যবাহী এই প্রাচীন বাড়িটিই বাংলার নবজাগরণ ও শিল্প-সাহিত্যের অন্যতম আঁতুড়ঘর; বাঙালির অহঙ্কার ও আবেগের তীর্থস্থান। ১৮৬১ সালের ০৭ মে এই বাড়িতেই কবিগুরু জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ৭ আগস্ট, ১৯৪১ সালে তিনি এখানেই দেহত্যাগ করেন।
এই বাড়িকে ঘিরে অনেক ইতিহাস শোনা যায়। বাড়ির ইতিহাস অনুসন্ধান করার আগে আমাদেরকে জানতে হবে ‘নীলমণি ঠাকুর’ সম্পর্কে। নীলমণি ঠাকুর ছিলেন রবীঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ঠাকুরদাদা।
নীলমণি ঠাকুরের পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের খুলনা শহরের সন্নিকটে পিঠাভোগ গ্রামে। ভ্রাতৃবিয়োগের কারণে পৈতৃক ভিটা ছেড়ে তিনি কলকাতায় এলে এই জায়গাটি তাকে উপহার দেন তদানীন্তন একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী।
নীলমণি ঠাকুরের ছিল তিন পুত্র; রামলোচন ঠাকুর, রামমণি ঠাকুর এবং রামবল্লভ ঠাকুর। রামমণি ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্রের ছিল তিন পুত্র; রাধানাথ, দ্বারকানাথ অর্থ্যাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা ও রমানাথ ঠাকুর। রামবল্লভ ঠাকুরের কোন পূত্র সন্তান না থাকায় তিনি তার ভাইয়ের দ্বিতীয় পুত্র দ্বারকানাথ ঠাকুরকে দত্তক নেন। এই দ্বারকানাথ ঠাকুরই জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িটিকে প্রায় ৩৫,০০ স্কয়ার মিটারের বিশাল অবয়বে রুপান্তরিত করেছিলেন।
ইংরেজ শাসনের সুদৃষ্টিতে থেকে এবং আইন ব্যবসার মারপ্যাচ সম্পর্কে সুচতুর থেকে তিনি একটার পর একটা জমিদারী কিনেছিলেন এবং ‘ইউনিয়ন ব্যাংক’ নামে বাংলার প্রথম ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও নীল, পাট, চা, কয়লা ও জাহাজ ব্যাবসার সাথে সম্পৃক্ত থেকে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন।
ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উত্তরাধিকারী হয়ে এই বাড়ির মাটি স্পর্শ করে ধরণীতে এসেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া ও পাবনা এলাকায় কিছুকাল অবস্থান ব্যাতিত মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এই বাড়িতেই অবস্থান করেন। বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ির অন্দরমহল এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়:
১৯৬২ সালের ৮ মে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’ হলো কলকাতার একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়; বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্রম তালিকায় যা কলকাতার তৃতীয় সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের উদ্যোগ ১৯৬১ সালে গৃহীত হয় এবং সেই বছরই পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৬১ পাস করানো হয়েছিল।
কলকাতা শহর ও শহরতলি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট তিনটি শিক্ষাপ্রাঙ্গন রয়েছে। প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গণটি কাশীপুরে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডের মরকত কুঞ্জে, দ্বিতীয় শিক্ষাপ্রাঙ্গনটি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে এবং তৃতীয় শিক্ষাপ্রাঙ্গনটি বিধাননগরে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রাঙ্গণ তিনটির মোট আয়তন ২২.১৯৮ একর ।
রবীন্দ্র মিউজিয়াম:
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার পরিবারের সদস্যদের রেখে যাওয়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক জিনিস-পত্র ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে ঠাকুর বাড়ির পুরো অন্দরমহল জুড়ে গড়ে উঠেছে রবীন্দ্র মিউজিয়াম। মাথাপিছু বিশ রুপি এবং বহিরাঙ্গনের ছবি তোলার জন্য মোবাইল প্রতি ৫০ রুপি ফি জমা দিয়ে নাম স্বাক্ষর করে দর্শানার্থীরা রবীন্দ্র মিউজিয়াম পরিদর্শন করতে পারেন।
রবীন্দ্র মিউজিয়াম পরিদর্শনের ইচ্ছে পুরণে পাশে থেকে আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন কলকাতার সিনেম্যটোগ্রাফার ও ক্যামেরা পার্সন মৌসুমী দেবনাথ।
কথা ছিল রবীন্দ্র সরণিতে ঠাকুর বাড়ির প্রধান ফটকে তিনি আমাকে অভ্যার্থণা জানাবেন বেলা বারোটায়। অপরিহার্য কারণে তার আসতে বিলম্ব ঘটায় আমি আরো একটি ভালো কাজ সেরে ফেলতে পারলাম।
ঠাকুর বাড়ির সন্নিকটে, রবীন্দ্র সরণি এবং জাকারিয়া স্ট্রিট এর সংযোগস্থলে অবস্থিত নাখোদা মসজিদ ও মুসাফিরখানার ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে আমি আগেই অবগত ছিলাম। জুম্মা’র নামাজটা যেন নাখোদা মসজিদে আদায় করতে পারি তার একটা ইচ্ছে আগেই করে রেখেছিলাম। মৌসুমীর আসতে দেরী হওয়ায় আমি মুসাফিরখানা পরিদর্শন করি এবং ঐতিহাসিক নাখোদা মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে সক্ষম হই...
নাখোদা মসজিদ:
কলকাতার সবচেয়ে বড় মসজিদের হলো নাখোদা মসজিদ। আগ্রা থেকে আগত নাবিক ওসমান সাহেবের নেতৃত্বে একদল ধর্মপ্রাণ মানুষ ১৯২৬ সালে এই মসজিদটি স্থাপন করেন কলকাতার বড়বাজার এলাকায়। ‘নাখোদা’ শব্দটি ফার্সী ভাষা থেকে এসেছে; ফার্সী ভাষায় ‘নাখোদা’ শব্দের অর্থ নাবিক।
এই মসজিদের পাশে আরো একটি মসজিদ ছিল। দুইটি মসজিদকে একত্রিত করে স্থানীয় দানশীল ব্যক্তি হাজী জাকারিয়া সাহেব এই মসজিদের ব্যাপক সংষ্কার করেন। প্রতি ওয়াক্তে প্রায় এক হাজার মুসল্লি এই মসজিদে নামাজ পড়েন। কিন্তু জুম্মার নামাজে, রোজার সময় এবং ঈদের নামাজে এখানের চারপাশ জুড়ে লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ পড়ে থাকেন। সুপরিসর অবয়ব, প্রাচীন ও মনোমুগ্ধকর স্থাপত্যশৈলী আমাকে ভীষণভাবে বিমোহিত করে।
এই মসজিদে স্থানীয় মুসল্লিদের সাথে জামায়াতে জুম্মার নামাজটা পড়তে পেরে আমি মানসিকভাবে প্রফুল্ল বোধ করলাম।
রবীন্দ্র মিউজিয়াম:
জুম্মার নামাজ শেষে পুনরায় ঠাকুর বাড়ির গেটে এসে বন্ধুবর মৌসুমী দেবনাথের সাথে দেখা করি এবং শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে গেট থেকে টিকিট নিয়ে আমরা ভিতোরে প্রবেশ করি।
কবির আঙিনায় পা রাখতেই দেহ-মনে এক ধরনের আরোগ্যময় প্রশান্তি অনুভব করলাম; নয়নাভিরাম স্থাপত্যশৈলী ও ছিমছাম পরিবেশ-প্রতিবেশ দেখে ঠাকুরবাড়ির রাজকীয় আভিজাত্য সম্পর্কে সহজেই আন্দাজ করা যায়। মহর্ষি ভবনের আর একটু কাছে যেতেই কবিগুরুর কৃষ্ণমূর্তি আমাদেরকে অভিভাদন জানালো। বাড়ির অভ্যন্তরে চার দালানের মাঝে সেই ঐতিহাসিক ঠাকুরবাড়ির নাট্যমঞ্চ দেখতে পেলাম, যেখানে রবীন্দ্রনাথসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদসস্যরা মাঝে মাঝেই নাটক মঞ্চস্থ করতেন।
কিছুক্ষণ পর জুতো খুলে দো’তলার সিড়ি বেয়ে রবীন্দ্র মিউজিয়ামে প্রবেশ করলাম। রবীঠাকুরের বসার ঘর, পড়ার ঘর, শয়নকক্ষ, ব্যবহৃত আসবাব-পত্র, পোশাকাদি ও দুর্লভ আলোকচিত্র দেখা হলো। মৃনালিনী দেবীর প্রশান্তিময় খোলামেলা রান্নাঘরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। দ্বারকানাথ ঠাকুরের চেয়ার,ঠাকুরবাড়ির আঁতুড়ঘর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা অসাধারণ চিত্রকর্ম ছিল দেখার মতো। কবিগুরুর চিন ও তিব্বত ভ্রমনের আলোকচিত্র, ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন এবং কবির লেখা ও কবিকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন মনীষীর ঐতিহাসিক লেখনি সম্পর্কে জানা হলো। ঠাকুরবাড়িতে রবীঠাকুরের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল ছাঁদ, সেখানেও পা রাখা হলো আমাদের।
অবশেষে, প্রবেশ করলাম কবির মহাপ্রয়াণ কক্ষে, যেখানে তিনি মানবের জন্য অনিবার্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন। বড়সড় একটি অপারেশন থিয়েটারের রেপ্লিকা স্থাপন করা আছে কক্ষের মাঝখানে; পাশে দাঁড়িয়ে আছে একদল বিমর্ষ চিকিৎসক ও নার্স।
ঠাকুরবাড়ির সর্বত্রে, একসাথে-একই রিদমে একটি কেন্দ্রীয় শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে রবীঠাকুরের লেখা প্রশান্তিময় জনপ্রিয় গান শোনা গেলো। প্রয়াণকক্ষের বিমর্ষ ভাবনাগুলো প্রশান্তিময় সুরের ইন্দ্রজালে মননতটে নির্মাণ করেছিল ভালোবাসার অদৃশ্য সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নীচে নেমে এলাম, এগিয়ে গেলাম ঠাকুরবাড়ির গেটে।
হঠাৎ মনে হলো, পিছন থেকে কবিগুরু যেন নিজকণ্ঠে গেয়ে উঠলেন,
        ‘ভালোবেসে সখি নিঃভৃত যতনে
        আমার নামটি লিখ তোমার মনের মন্দিরে…’
একটি এ্যাডভেঞ্চারাস বিয়োগান্তক সিনেমা দেখে প্রেক্ষাগৃহ থেকে ফেরার পর দর্শানার্থীদের যেমন অনুভব হয়, সেই অনুভূতি চোখে-মুখে নিয়ে, ঠাকুরবাড়ির সীমানা পেরিয়ে আমরা হাঁটতে থাকলাম…
দ্বারকানাথ লেন ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের চারখানা পা এক সময় পোঁছে গেলো মাহাত্মা গান্ধী রোডে। আরো কিছুক্ষণ পর, আমাদের ক্লান্ত দু’টি পথ ধীরে ধীরে দুই দিকে বেঁকে গেলে ...

ইমরুল কায়েস/কলকাতা
১৫ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব পাঁচ

 

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব পাঁচ

রবীন্দ্র সদন, কলকাতা মহানগরীর বাংলা সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্রস্থল। রবীন্দ্র সদনের বৃহৎ মঞ্চ “বাংলা” থিয়েটার ও শহরের অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটি প্রধান স্থল এটি। কলকাতায় রবীন্দ্র সদন বাঙালি সমাজের সাংস্কৃতিক ও বিনোদনের এক অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নাটক, নৃ্ত্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী দেখতে পাবেন।
কলকাতা ময়দানের দক্ষিণ-পূর্ব কেন্দ্রে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোড এবং ক্যাথিড্রাল রোডের সংযোগস্থলে কলকাতার রবীন্দ্র সদন অবস্থিত। রবীন্দ্র সদন এলাকায়, রবীন্দ্র সদন মঞ্চ, নন্দন, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি, গগনেন্দ্র প্রদর্শনশালা নিয়ে গঠিত, এগুলি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের প্রধান কেন্দ্র।
রবীন্দ্র সদনের আশেপাশে অবস্থিত নিম্নলিখিত সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলি রবীন্দ্র সদনকে এই ‘আনন্দ নগরী’ কলকাতার এক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র হিসাবে গড়ে তুলেছে। যেমন: রবীন্দ্র সদনের অভ্যন্তরে ভারতের বিখ্যাত কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের অবস্থান রয়েছে। সেগুলো হলো: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি, কলকাতা তথ্যকেন্দ্র (দ্য ক্যালকাটা ইনফোরম্যাশন সেন্টার), নন্দন, শিশির মঞ্চ,, বেঙ্গল ফাইন আর্টস একাডেমি।
ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রী জওহরলাল নেহেরু ১৯৬১ সালের ৮ই মে কলকাতার রবীন্দ্র সদনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৬৭ সালের অক্টোবর থেকে এটি জনসাধারণের জন্য খোলা হয়েছিল। কলকাতার রবীন্দ্র সদন আমাদের প্রিয় কবি এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম এশিয়ান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানে প্রতিষ্ঠিত হয়।
রবীন্দ্র সদনের পিছন দিকে অবস্থিত নন্দন থিয়েটার হল্, চলচ্চিত্র-প্রেমীদের জন্য একটি আগ্রহদীপ্ত স্থান। কলকাতার জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উৎসব নন্দন এবং কলকাতার রবীন্দ্র সদন, এই উভয় স্থানেই অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতা রবীন্দ্র সদন এলাকার আশেপাশের দর্শনীয় আরো বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক জায়গা রয়েছে। যেমন: দ্য ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যাল, বিড়লা তারামন্ডল, সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল, এস.এস.কে.এম হাসপাতাল, দ্য ক্যালকাটা ক্লাব, গোখলে মেমোরিয়্যাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশন।
বেঙ্গল ফাইন আর্টস এ্যাকাডেমির গোল চত্তরে গত ১০ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি. তারিখে ভাওয়াইয়া গানের আসর নিয়ে কোচবিহার জেলার একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে আমি আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম।
প্রতিদিন এখানে কোনো না কোনো সংগঠনের অনুষ্ঠান থাকে। সেদিনের সেই অনুষ্ঠানটিও অনেকটা সাদামাঠা কিন্তু সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত ছিল। অতিথির সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পরেই শুরু হলো নৃত্যানুষ্ঠান । অতঃপর কাক্ষিত সংগীতানুষ্ঠান। দুইজন কণ্ঠশিল্পী একটানা দশটি গান গাইলেন। যা অসাধারণ ছিল।
আমার বন্ধু কলকাতার বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী ও আবৃত্তির প্রশিক্ষক নিবেদিতা চৌধুরী এই অনুষ্ঠানে শুরু থেকেই থাকার কথা ছিল। উত্তর দমদম থেকে অনুষ্ঠানে পৌছাতে তিনি কিছুটা দেরী করে ফেলেন। রবীন্দ্র সদনে ঢুকেই তিনি ফোন দিলেন,
-দাদা, আপনি কোথায়? আমি রবীদ্র সদনে প্রবেশ করেছি।
আমি জানালাম, বেঙ্গল ফাইন আর্টস এ্যাকাডেমির গোল চত্তরে।
তিনি আমার দিকে না এসে অন্যদিকে হন্য হয়ে আমাকে খোঁজা শুরু করলেন। আমি তাকে দূর থেকে দেখতে পেলাম। নাম ধরে ডাকলাম। কিন্তু তিনি শুনতে পেলেন না। আমি তার পিছু পিছু হাঁটলাম। আমাকে না পেয়ে তিনি আবার ফোন করলেন। আমি ফোন রিসিভ না করে তাকে সারপ্রাইজ দিতে পিছু পিছু হেঁটেই চললাম। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর আমাকে না পেয়ে তিনি পিছনে তাকালেন। অবাক হয়ে বললেন ,
-আরে দাদা, আপনি এখানে। আমি অনেকক্ষণ আপনাকে খুঁজছি।
-আমি বললাম, সরি দিদি।
তারপর, অনেক্ষণ ঘোরাঘুরি হলো। উন্মুক্ত চত্তরের লেকের পাড়ের চেয়ারে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম। রবীঠাকুর ও রবীন্দ্র সদনের কার্য়ক্রম নিয়ে অনেক আলাপন হলো। আমার বেশ কয়েকটি কবিতার আবৃত্তি ভালোবেসে তিনি নির্মাণ করেছেন, সেগুলো প্রকাশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ হলো।
ইতোমধ্যে সন্ধ্যা বেশ ঘনিয়ে এলো। এর ফাঁকে ফাঁকে বেশ কিছু ছবি তোলা হলো; কোনোটা আমি একা, কোনোটায় আমরা দু’জন। কথা বলতে বলতে লেকের পাড়ের অপেক্ষাকৃত নির্জন ও সরু রাস্তা দিয়ে আমরা হেঁটে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।
নিবেদিতা হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠলেন এবং বললেন,
-দাদা, দ্রুত হাঁটুন।
আমি তার পিছনে দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম হঠাৎ কেন তিনি দ্রুত হাঁটলেন এবং কেনই বা আমাকে দ্রুত হাঁটতে বললেন।
কিছুদূর আসার পর কারণটি আমি স্পস্ট বুঝতে পারলাম। কিছু সংখ্যক টিনেজার ছেলেমেয়ের আপত্তিকর সহাবস্থান আমাকে খানিকটা বিব্রত করলো।
আমি মনে মনে ভাবলাম, আলোর নীচেই বুঝি অন্ধকার থাকে। রবীন্দ্র সদনের মতো একটি পবিত্রতম স্থানেও সভ্যতার অন্ধকার জমে আছে। নিবেদিতার মতো সুপরিচিত একজন সেলিব্রিটি শিল্পীর জন্য জায়গাটা বিব্রতকর হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আমরা এলাকা থেকে দ্রুত বের হলাম। অতঃপর, পার্শবর্তী বিখ্যাত একটি ধাবা ‘হলদি রামে’ প্রবেশ করলাম। জনতার বিশাল ভিড়। আমরাও বসলাম। তিনি আমার ক্ষুধা-তৃষ্ণার চাহিদা মেটালেন, এখানের সুস্বাদু খাবার দিয়েই।
যেহেতু, সন্ধ্যার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাত্রিও নেমে এসেছে। নিবেদিতা বললেন ,
-দাদা, আমার আর সময় দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। এখান থেকে আমার বাড়ি অনেক দূর এবার যেতে হবে। চলুন, আপনাকে কিছুটা এগিয়ে দিয়ে যাই।
-আমি বললাম, আমাকে নয়। চলুন আপনাকে এগিয়ে দেই।
আমরা মেট্রো রেলের আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে পৌঁছে তার জন্য টিকেট নিলাম। মেট্রো থামার সাথে সাথে আমাকে বিদায় জানিয়ে তিনি তাতে দ্রুত উঠে পড়লেন।
মাটির প্রায় ৩০ ফুট নীচ দিয়ে নিবেদিতার মেট্রোরেল শো শো, শো শো করে উত্তর দিকে চলে গেলো...
আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে তার দ্রুত প্রস্থানের পথটি মুখস্থ করতে থাকলাম আর মনে মনে ভাবলাম ‘বাঙালি মেয়েরা এমনই লক্ষ্মী হয়’...
ভীষণ ব্যস্ততা সত্বেও একজন বা্ংলাদেশী লেখক বন্ধুকে আতিথেয়তা ও সময় দিতে তিনি প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূর থেকে আমার কাছে ছুটে এসেছেন।
মেট্রোরেল তাকে ছোঁ মেরে তুলে নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানোর সুযোগটাও পাওয়া গেলো না…
ইমরুল কায়েস/কলকাতা
১৪ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.

কলকাতা ভ্রমন: পর্ব চার

 

কলকাতা ভ্রমন: পর্ব চার

গিরীশ মঞ্চ:
গিরিশ মঞ্চ হলো কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলের একটি নাট্যমঞ্চ। ১৯৮৬ সালের ০১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এই মঞ্চটির উদ্বোধন করেন। মঞ্চটির নামকরণ হয়েছে বিশিষ্ট নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষের নামে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডাইরেক্টরেট এন্ড স্টেট কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন এর একটি সাংস্কৃতিক অংগ-সংগঠন হলো ‘রিক্রিয়েশন ক্লাব’। সংগঠনটির ৬৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হলো গত ১১ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি. ঐতিহাসিক গিরীশ মঞ্চে। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের একজন লেখক হিসেবে আমি সশরীরে উপস্থিত ছিলাম। আমার সাথে আরো ছিলেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত অধীকর্তা শ্রীমতি বিদিশা মুখার্জী, বিখ্যাত আবৃত্তিশিল্পী কাজল সুর এবং অধিদফতরের প্রাক্তন অধীকর্তা শ্রী সজল দাশগুপ্ত মহাশয়।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসভার উচ্চশিক্ষা ও স্কুল শিক্ষামন্ত্রী শ্রদ্ধেয় ব্রাত্য বসু এবং নারী ও শিশু-কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা মহাশয়ের অংশগ্রহণ করার কথা ছিল।
অপরিহার্য কারণে অনুষ্ঠানে আসতে না পারায় তারা উভয়েই উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিল অতিথিদের অংশগ্রহণ, সংক্ষিপ্ত আলোচনা, নৃত্যানুষ্ঠান, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্মাননা প্রদান, অস্বচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জনাব সুনীত রায়চৌধুরী রচিত নাটক ‘আজব দেশের তাজ্জব কিসসা’ এর নান্দনিক মঞ্চায়ন।
সংগঠনের সভাপতি ড. অনিন্দিতা গাঙ্গুলী এবং সঞ্চালক শান্তনু চট্টোপাধ্যায় এর অসাধারণ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি ভীষণ মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠেছিল।
নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী দীপান্বিতা ঘোষ, অমিত মিত্র ও সুনীত রায়চৌধুরী।
পিন পতন নীরবতায় হল ভর্তি দর্শক-শ্রোতাবৃন্দ পুরো অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন যা আমাকে ভীষণভাবে মোহিত করেছে। সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের শিল্পীদের উষ্ণ আতিথেয়তা ভুলবার নয়।
কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রথাগত অনুষ্ঠান থেকে ভিন্ন ছিল। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে কেউ মোবাইল ফোন বের করেনি, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলার চেষ্টাও করেনি। একজন মাত্র ফটো ও ভিডিওগ্রাফার এই দুরুহ কাজটি সম্পন্ন করেছেন। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া অকারণে কেউ মঞ্চে ওঠেনি। সম্পূর্ণভাবে পরিপাটি ও মার্জিত একটি সফল অনুষ্ঠান উপহার দিতে পেরেছিল আয়োজক কমিটি।
বন্ধুবর উর্ধ্বতন শিক্ষা কর্মকর্তা ও টিভি অভিনেত্রী দীপান্বিতা ঘোষ এবং অমিত মিত্রের প্রাণময় আমন্ত্রণে সেদিনের অনুষ্ঠানে আমার অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছিল।
তাদের দু'জনের প্রতি এবং পুরো আয়োজক কমিটির সকল সুহৃদের প্রতি আমার নিজের পক্ষ থেকে এবং বাংলাদেশের সমগ্র লেখক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা, শারদীয় শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা রইলো...
💙
ইমরুল কায়েস/কলকাতা
১৩ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব তিন

 

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব তিন

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল:
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন কলকাতার Queen's Way তে এই ঐতিহাসিক স্থাপনার গোড়াপত্তন করেন যার স্থপতি ছিলেন William Emerson & Vincent Esch.
‘History is a record of the past... ’ যা নির্মম হলেও সত্য। এই সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই।
ইতিহাসের ভুল শিক্ষাই হলো, মানুষ ইতিহাস থেকে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করে না কিম্বা করতে চায় না।
যেমন নবাব পরিবারের একাধিক সদস্য ও প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের ষড়যন্ত্রের কারণে এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল পলাশীর আম্রকাননে। অতঃপর, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের ঘাণি টানতে হয়েছিল সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশকে... এটাই বাস্তব, এটাই ইতিহাস। ইংরেজ শাসনের প্রতি ঘৃণা ও অশ্রদ্ধার কারণে ইংরেজ শাসনামলের ইতিহাস থেকে চোখ সরিয়ে নেয়া হবে এক রকমের ভুল।
ঐতিহাসিক সেই ভুলের অনুসন্ধান করা এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার অভিপ্রায় নিয়ে গতকাল পরিদর্শন করলাম কলকাতার ঐতিহাসিক সেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, রবার্ট ক্লাইভ এবং তদপরবর্তী বৃটিশ শাসনের প্রতি খুব একটা সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলেও বেশ কিছু কল্যানমুখি সিদ্ধান্তের কারণে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার প্রতি ভারতবাসীর যথেষ্ট সম্মান ছিল।
কলকাতার জনপ্রিয় নাট্যকার ও স্ক্রিপ্ট রাইটার অভিজিৎ চ্যাটার্জী সকাল ১১:০০ টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর সামনে আমাকে অভ্যার্থনা জানালেন। গেট থেকে টিকিট নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। কী নয়নাভিরাম দৃশ্য! এগিয়ে যেতেই মহারাণী ভিক্টোরিয়ার ভাস্কর্য আমাদেরকে স্বাগত জানালেন। মহারাণীর সাথে ফটো সেশন শেষে সারি ধরে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
শৈল্পিক ভবনের ভিতরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং বৃটিশ শাসনামলের বড়কর্তাদের ছোট ছোট ভাস্কর্য দেখতে পেলাম। দু'টো কামানের মাঝে রবার্ট ক্লাইভ দাঁড়িয়ে আছেন। তার ভাস্কর্যের দিকে একটানা প্রায় তিন মিনিট তাকিয়ে থাকলাম। কারণ ‘নবাব সিরজউদ্দৌলা’ সিনেমা দেখে তার প্রতি সীমাহীন অশ্রদ্ধা জমে আছে বুকের ভিতোর।
মনে মনে ভাবলাম। এই সেই লোক যিনি বাঙালি ও ভারতীয়দের সরলতাকে হাসতে হাসতে হরণ করেছিলেন। ‘মাই লর্ড, আমরা এসেছি বাণিজ্য করতে’ বলেই কত সহজেই পুরো দেশটাকে তিনি কোটের পকেটে ঢুকিয়ে ফেললেন।
ভিতোরে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মূর্তি ও দেয়ালে সাটানো ঐতিহাসিক চিত্রকর্মের ছবি তোলার পর পেছনে গেট দিয়ে উদ্যানে বের হয়ে গেলাম।
বাইরে চোখ জুড়ানো উন্মুক্ত সুপ্রশস্ত উদ্যানের দৃশ্য আমাকে মোহিত করলো। অবশেষে, হাঁটতে হাঁটতে পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকলাম।
যেতে যেতে শেষবারের মতো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দিকে আর একবার তাকালাম আর কুখ্যাত মীর জাফরের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে মনে স্মরণ করলাম:
‘শেঠজি, আমরা সবাই মিলে দেশটাকে বিক্রি করে দিচ্ছি না তো!?'
‘আসুন, মনে কষ্ট থাকলে ঘরের ভিতোরে পুকুর কাটি, কিন্তু খাল কেটে নদীর কুমির যেন ঘরে না আনি ...
ইমরুল কায়েস/কলকাতা
১২ অক্টৌবর ২০২৩ খ্রি.

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব দুই

 

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব দুই

Charnock Hospital:
‘রূপসী বাংলা’ হোটেলের সন্নিকটে, নিউ টাউন জাংশন এর অদূরে, ভিআইপি রোডে অবস্থিত কলকাতার বড়সড় একটি হসপিটালের নাম Charnock। অত্যন্ত পরিপাটি ও সুবিশাল অবকাঠামো, কিছুটা ব্যয়বহুল। আপাততঃ এই হসপিটালটি আমার প্রতিবেশী বলা চলে।
এখানেই সপ্তাহে একদিন চেম্বার করেন বিখ্যাত অর্থপেডিক চিকিৎসক, ডা. অভিজিৎ এন কে সাহা। অ্যাপোলো হসপিটালসহ আরো কয়েকটি জায়গায় তিনি রোগী দেখেন। বন্ধুবর দীপান্বিতা ঘোষ আগেই উনার সাথে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে রেখেছিলেন। কারণ ডাক্তারের প্রতি তার আস্থা ছিল। কথা ছিল ০৯ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি. তারিখে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আমরা ডাক্তারের চেম্বারে উপস্থিত থাকবো। কিন্তু, গুরুত্বপূর্ণ এই এ্যাপয়েন্টমেন্টের অপেক্ষায় হোটেল কক্ষে থাকতে থাকতে চারটার দিকে ক্লান্তির ফাঁদে ফেলে তন্দ্রা আমাকে টেনে নিলো।
হঠাৎ ম্যাডাম ঘোষের ফোন কল। তড়িঘড়ি বিছানায় বসে পড়লাম। ফোনের ওপাশ থেকে মৃদু কণ্ঠে ভেসে এলো,
- ‘কোথায় আপনি? ডাক্তার অপেক্ষা করছে তো।
-‘এই তো পাশেই আছি, আসছি।’
একটা কপি-পেস্ট উত্তর দিয়ে দ্রুত হসপিটালের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। হসপিটালে উপস্থিত হতেই আবার ফোন বেজে উঠলো,
- হ্যালো, কোথায় আপনি? ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে আরো কিছু প্রসেস আছে তো। সেগুলো সেরে ফেলতে হবে। দ্রুত আসুন।
ডাক্তারের চেম্বারের সামনে রোগী এবং তাদের স্বজনদের বসার জন্য সুপ্রশস্ত একটি ওয়েটিং রুম আছে। সারিবদ্ধভাবে বসলে কয়েকশো লোক বসা যায়। আমি দীপান্বিতাকে একটি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম; বোঝার চেষ্টা করেছিলাম ব্যস্ত মানুষটা প্রথম দেখায় আমাকে চিনতে পারেন কিনা।
ডান দিকে ঘুরেই হরিণী দৃষ্টিতে তাকিয়ে অভিনেত্রী অভিনয় করে বললেন,
- হ্যালো, এবার ঢং রাখুন। ফেসবুকের কল্যাণে আপনাকে ঠিকই চিনতে পেরেছি।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করতেই বাম পাশে দেখি আরো একজন গুণী বন্ধু, বিশিষ্ট অভিনেতা ও সংগীত শিল্পী অমিত মিত্র বসে আছেন। বাংলাদেশে বিজনেস পলিসিতে মাঝে মাঝে লেখা দেখি, ‘একটা কিনলে আর একটা ফ্রি’। একসাথে দুই বন্ধুকে পেয়ে আমি আনন্দে অভিভূত হলাম।
অবশেষে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলাম। বলিউড নায়কের মতো অসাধারণ চেহারা ডাক্তার বাবুর। সাথে একজন সুদর্শনা এ্যাসিস্ট্যান্ট ডাক্তারও আছেন। আমার পরিচয় দিতেই তিনি বললেন,
- আপনার পরিচয় আগেই পেয়েছি। এখন বলুন, আপনি কেমন আছেন?
- আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। যে সমস্যা নিয়ে পরামর্শ করতে আমি ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি গত ৪-৫ দিন ধরে ঐ সমস্যাটাই তেমন অনুভূত হচ্ছে না। আমি ধীরে ধীরে আমার সমস্যাগুলো তাকে অবহিত করলাম।
তিনি খুঁটে খুঁটে সমস্যার গোড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করলেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ দীর্ঘ আলাপন শেষে তিনি কিছু টেস্ট করতে বললেন। রিপোর্টগুলো সাথে নিয়ে ১৪ অক্টোবর বিকেল পাঁচটায় আবার এপয়েন্টমেন্ট প্রদান করলেন।
আশ্বস্ত করে বললেন,
- রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখি, শনিবারে আসুন। প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবেন।
আমি হ্যান্ডশেক করে বেরিয়ে এলাম।
হসপিটালের পাশেই একটি ক্যাফেটোরিয়া। তিন বন্ধুর এক জায়গায় বসা এবং সেখানে বসে কিছু একটা খাওয়া মানেই স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত উপভোগ করা।
প্রতিষ্ঠিত মানুষ মানেই ব্যস্ত মানুষ। ব্যস্ততা সকল সফল মানুষের সফলতার অপরিহার্য অনুষঙ্গ। উনারা দু’জনই সেদিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু আন্তরিকতা থাকলে শত ব্যস্ততার মাঝেও কাছের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখানো যায়, তারা তা প্রমাণ করলেন ।
কলকাতায় আসার আগে কলকাতার মানুষের অতিথি পরায়নতা সম্পর্কে আমার প্রিয় সহকর্মীর মন্তব্যটি এই ক্ষেত্র ভুল প্রমাণিত হলো।
প্রিয় বন্ধু অমিত মিত্র ও দীপান্বিতা ঘোষের জন্য এক আকাশ ভালোবাসা এবং এক সাগর কৃতজ্ঞতা রইলো...

ইমরুল কায়েস/কলকাতা
১২ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.

কলকাতা ভ্রমন: পর্ব এক

 

কলকাতা ভ্রমন: পর্ব এক

আমার কলকাতা ভ্রমণের উদ্দেশ্য মূলতঃ দু’টি; উন্নত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ এবং কলকাতার দু’টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ।

অভিনেত্রী দীপান্বিতা ঘোষ ‘হোটেল রূপসী বাংলা’য় আমার থাকার জন্য একটি কক্ষ আগে থেকেই বুকিং করে রেখেছিলেন । তিনি শিল্পচর্চায় নৃত্য, আবৃত্তি ও অভিনয়শিল্পী ও পেশাগত পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা বিভাগের উর্ধতন অধীকর্তা।

হোটেলের নাম ‘রূপসী বাংলা’। কলকাতা ভিআইপি রোডে অবস্থিত সুপরিচিত একটি আবাসিক হোটেল। অভিনেত্রী যথেষ্ট পরিমানে ভদ্র ও বিনয়ী; বাংলাদেশের একজন লেখক ও শিল্পীকে অভ্যার্থনা জানাতে আমাকে তার বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যেহেতু, সে পথে হাঁটা হয়নি, সম্ভবতঃ সে কারণেই কলকাতা ভিআইপি রোডের এই চার তারকা হোটেলে তিনি আমাকে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। তা ছাড়া চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং যোগাযোগ সবকিছু তিনিই করিয়ে দিয়েছেন। ডাক্তার এবং হসপিটাল দু’টোই ভিআইপি রোডে। হোটেল বুকিং এবং আমার কক্ষটি নিঃসন্দেহে অসাধারণ ছিল।
কিন্তু, সমস্যা হচ্ছিল অন্য জায়গায়...
ভিআইপি রোড অনেকটা প্রশস্ত; প্রচুর গাড়ি, চলে দ্রুত গতিতে। আশেপাশে ভালো খাবারের হোটেল কিংবা কেনাকাটার জন্য সাধারণ কিম্বা মাঝারি মানের মার্কেট খুবই কম; কিছু আছে নির্দিষ্ট স্থানে যা বেশ ব্যায়বহুল। বাংলাদেশী অতিথিদের আনাগোনা এবং তাদের পছন্দের খাবারের হোটেল এদিকে নেই বললেই চলে। ফুটপাতের উপরে ছোট ছোট খাবারের দোকান। সেখানে বসে অথবা দাঁড়িয়ে পুরুষদের পাশাপাশি বস্ত্রকৃপণ কিছু নারীদের সাবলীলভাবে খাওয়ার দৃশ্য ব্যাপক হারে চোখে পড়লো। আমি চেষ্টা করেও সেখানে দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়ার সাহস পেলাম না। যদিও, এই শহরের সাধারণ মানুষের কাছে আমি তেমন পরিচিত নই। কয়েক কিলোমিটার হাঁটার পরেও আমার পছন্দের কোনো খাবারের হোটেল খুঁজে পাচ্ছিলাম না...
‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’। অবশেষে, নিকটস্থ একটি ‘ধাবা’য় প্রবেশ করলাম। মেন্যু দেখে সহজপাচ্য অল্প কিছু খাবারের অর্ডার করলাম। খাবার প্রস্তুত হয়ে আসতে আসতে প্রয়োজনীয় ফোনালাপগুলো সেরে ফেললাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ওয়েটার খাবার নিয়ে এলো। খাওয়া শেষে উপস্থাপিত হলো বিল; মাত্র ৩৩০ রূপি।
আমি ফোনে কথা বলে যাচ্ছি আর মানিব্যাগ থেকে একটা একটা করে মোট চারটি ১০০+১০০+১০০+৫০ নোট মেন্যুচার্টে রাখলাম। ওয়েটার ’থ্যাংক ইউ, স্যার’ বলে মেন্যুচার্ট হাতে নিয়ে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর মেন্যুচার্ট হাতে নিয়ে অসাধারণ সুন্দর ও স্মার্ট একজন অল্প বয়সী নারী আমার সামনে এসে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি হাসলেন এবং বললেন,
    - এক্সকিউজ মি, স্যার। আপনি ভালো আছেন?
    - আমি বললাম, জী হ্যাঁ।
মনে মনে ভাবলাম, ভদ্র মহিলা কীভাবে বুঝলেন আমি বাঙালি?
    - পরের প্রশ্ন, খাবার কি ভালো ছিল, স্যার?
    - আবারো একই উত্তর, জী হ্যাঁ।
    - আপনি কি ব্যস্ত অথবা টেনশনে আছেন, স্যার? কিম্বা কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?
কিছুটা বিরক্ত হয়ে ভদ্রভাবে বললাম, আপনি কি কিছু বলতে চাচ্ছেন? প্রশ্নের উত্তরগুলো একান্তই আমার পার্সোনাল।
তিনি রহস্যময় একখানা হাসি দিয়ে আবারো বললেন,
    - স্যার, আমি অঙ্কিতা ভট্টাচার্য; এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার। আপনি খেয়েছেন তো মাত্র ৩৩০ রূপি।
কিন্তু...
    - কিন্তু কী?
    - কিন্তু, আমার ওয়েটারকে আপনি পে করেছেন প্রায় ১৯,০৫০ রূপি।
    - আমি অবাক হয়ে বললাম, কীভাবে?
তিনি নোটগুলো আমাকে দেখিয়ে বললেন,
    - আপনি দিয়েছেন ১০০ ডলারের দুইটি নোট, ১০০ রুপির একটি নোট এবং পঞ্চাশ রূপির আরো একটি         নোট। আপনি অনেক বেশি পে করে ফেলেছেন, স্যার...
     আমরা কোন কাস্টমারের সাথে প্রতারণা করি না। প্লিজ, রিটার্ন ইট এন্ড রিপে ইউর বিল।
আমি বিলটা পে করলাম এবং অনিন্দ্য সুন্দর, সুহাসিনী, সৎ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সেই ভারতকন্যার মুখের দিকে অনেকক্ষণ অবাক তাকিয়ে থাকলাম...
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে তাকিয়ে আছেন যে। কিছু বলতে চাচ্ছেন, স্যার?
আমি কবি জীবনানন্দ দাশের সেই অসাধারণ পঙক্তিমালা মনে মনে স্মরণ করলাম,
    ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর মুখ দেখিতে চাই না আর’।
মেয়েটির হরোণোন্মুক চাহুনীতে আমি শেখ মুজিব, মাহাত্মা গান্ধী ও জর্জ ওয়াশিংটনের ছবির পার্থক্য খুঁজে পেলাম।
তার মায়াবী মুখায়বে ডলার, রূপি ও টাকার নোটগুলোর বেসামাল উড়াউড়ি দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে এলো...

ইমরুল কায়েস/কলকাতা
১০ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.


Thursday, October 19, 2023

কৃষ্ণচূড়া

কৃষ্ণচূড়া
ই ম রু ল কা য়ে স

কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটেছে আমার বাড়ির সামনে।
এই খবরটা তোমার কাছে ক্যামনে পাঠাই,
ক্যামনে বলি, বুকের ভিতোর কালবৈশাখী ঝড় উঠেছে,
ছুটছে শিরায় পাগলা ঘোড়া, অক্সিটক্সিন...
ভালোবাসার পাপড়িগুলো, ভীষণ ব্যাকুল, দুলছে দ্যোদুল
তোমার খোঁপার ব্যালকনিটা কেমনে সাজাই!
তুমিই বলো, ক্যামনে রাঙাই...
তোমার নিটোল পটোল-চেরা ঠোঁটের কিনার,
ঈগল পাখির বাসার মতো মায়াভরা চোখ দু’টিতে
স্বপ্ন আমার পশরা সাজায় দিবানিশি।
কার্নিশে তার সুখাশ্রু...
কপোল জুড়ে রক্ত শিরায়, মগ্ন নেশার অবগাহন,
গণ্ডদেশে নতুন ফাগুন, আগুন ছড়ায় বুকের মাঝে,
হৃদপিণ্ডে ভালোবাসার নীল সুনামি ঢেউ খেলে যায়।
দখিন দিকের মন বাতায়ন একটুখানি খোলা রেখো
স্বপ্ন যেন ছুঁতে পারে হাত বাড়িয়ে অবলীলায়...
কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটেছে আমার বাড়ির সামনে
এই খবরটা ছন্দদোলায় তোমার কানে পাঠিয়ে দিলাম,
পাঠিয়ে দিলাম ভালোবাসার পাপড়িগুলো
তোমার খোঁপার ব্যালকনিটা ইচ্ছে মতো সাজিয়ে নিও।


২৯ মে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ
০৯ শ্রাবণ ১৪২১
খুলনা


Saturday, October 7, 2023

বিবেকের বিলাপ

 



বিবেকের বিলাপ
ই ম রু ল  কা য়ে স


আমি এখন আর কষ্টের কথা লিখি না।
কোনো কষ্টের গল্প শুনি না, কারো কাছে বলিও না
আমার বুকে অনেক কষ্ট, কষ্ট ছাড়া দিন কাটে না, রাত কাটে না
নীল কষ্ট, কালচে লাল কষ্ট, রঙ-বেরঙের হাজার কষ্ট
ঘরে-বাইরে মিছিল করে... 

আমার কাঁধে হাজার বছরের কষ্টের ইতিহাস।
বসনিয়া, চেচনিয়া ও প্যালেস্টাইনের ইতিহাস,
কাশ্মির, সিরিয়া ও আরাকানের ইতিহাস,
আস্তিনের ঝুল পকেটে নানান কষ্ট ঝুলছে।
ঘরের ভিতর রোহিঙ্গা কষ্ট, বাইরে মত্ত মীর জাফরের প্রেতাত্মারা,
উঠোনের মাঝে পাঁচিল তোলার কষ্টগুলো কুরে কুরে খায়! 
সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন, বায়ান্ন থেকে উনসত্তর
কষ্টের ধূম্রশিখায় ভাস্বর।
যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত কষ্টের ভারে কুজো হয়ে গেছে মেরুদণ্ড
হৃদপিণ্ড অস্থির, অকেজো ফুসফুস, দৃষ্টিশক্তি কমে এসেছে
গগজ ছাড়া মগজ অচল,
স্নায়ুটাও ঠিকমতো কাজ করে না ইদানীং।

নতুন করে যুক্ত হলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার কষ্ট।

আমি ক্লান্ত পথিক এক; সভ্যতার মশাল হাতে হেঁটেই চলেছি
কখনো গিরিখাঁদে, কখনো মানব ফাঁদে আটকা পড়ি
ভীষণ পিচ্ছিল আমার গতিপথ,
শতাব্দির সিড়ি বেয়ে বন্ধুর পথে অনন্তকাল ধরে হাঁটছি এবং হাঁটবো
ভূগোলের সীমারেখা আমি মানি না,
মানি না সময়ের ধরাবাধা এই কক্ষপথ,
কষ্টের সাথে নিয়মিত করি নিশি জাগরণ
অকারণে ভাগাকরি দ্রোহানলে নষ্ট প্রাণের ঘ্রাণ।

আমি এখন আর কষ্টের গান লিখি না
কোনো কষ্টের ছবি আঁকি না, কষ্টের কোনো ছবি দেখিও না
আমার বুকে অনেক কষ্ট...
ক্ষুধার কষ্ট, শীতের কষ্ট, অবহেলা আর বঞ্চণার কষ্ট
কিছু কষ্ট আমার সাথে আমারই বিছানায় শায়িত
কিছু কষ্ট শিয়রে বসা, কিছু দরোজায় দণ্ডায়মান
আমার আঙিনায় নাম না জানা হাজার কষ্টের মিছিল।

আমি এখন আর কষ্টের ইতিহাস লিখি না
আমার বুকে অনেক কষ্ট, অনেক...

২৫ মার্চ ২০০৩ খ্রি.
খুলনা
 

 


Thursday, September 28, 2023

আসসালাম স্বাগতম

 

আসসালাম স্বাগতম হে রাসুল (স.)
ই ম রু ল  কা  য়ে স



আসসালাম। স্বাগতম ।
হে রাসুল সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসসালাম,
হাশরের ময়দানে যেন পাই তোমার সাফায়াত।

আঁধার যখন তাবৎ পৃথিবী চেয়েছিল গিলে খেতে
নৈতিকতা ভেসে গিয়েছিল অবক্ষয়ের স্রোতে
ঐশি আলোর ঝর্ণা হয়ে রবের আরশ থেকে
তখন তুমি  নেমে এলে এ পাপের ধরণীতে। 

যখন পাপে ডুবে গিয়েছিল আরবের মসনদ
ঘরে ঘরে ছিল নগ্ন নৃত্য, সুদ ঘুষ জুয়া মদ
পাপের সাগর আরব জাহান যখন দিশাহীন
তখন তুমি তাদের দেখালে নতুন আশার পথ।

যখন মূর্তি দূরে ঠেলেছিল বিশ্ব প্রতিপালক
অন্ধকারে নিভে গিয়েছিল সভ্য জাতির আলোক
যখন আরব অসহায় ছিল লালসার কাছে হেরে
তখন তুমি প্রেরিত হলে, দেখালে রবের ঝলক।

আসসালাম। স্বাগতম।
হে রাসুল সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসসালাম,
তুমি আমদের  আলোকের পথ দেখাও।

যখন তুমি প্রেরিত হলে খুললো বন্ধ দ্বার
বিতাড়িত হলো সমাজের মাঝে গুমোট অন্ধকার
তুমি দেখালে সোনার আলোয় উদ্ভাসিত ভূবণ
তোমায় পেয়ে থেমে গেলো ধূধূ মরুর হাহাকার।

তুমি এনে দিলে ঐশি কিতাব পবিত্র আল কুরআন 
মানব জাতির জীবনাদর্শ , পূর্ণ জীবন বিধান 
তুমি পড়লে, ‘ইকরা বিইসমি রাব্বিকাল্লাজি খলাক’
শোনালে যখন , আনলো ঈমান সমগ্র আরব জাহান।

বন্ধ হলো মূর্তি পুজো, দেহ পুজোর স্বপ্ন বিলাস
তিক্ত নষ্ট অতীত ভুলে সৃষ্টি হলো নতুন সমাজ
মূর্তিগুলো নত হলো খুলে ফেলে আলখাল্লা
ঘোষণা দিল মালিক মোদের অদ্বিতীয়, এক আল্লাহ।

আসসালাম। স্বাগতম।
হে রাসুল সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসসালাম,
তুমি আমদের বেহেশতের পথ দেখাও।

তুমি না এলে সৃষ্টি হতো না পৃথিবী চন্দ্র তারা
তুমি না এলে মিষ্টি হতো না মানব জীবন ধারা
তুমি না এলে কে আমাদের এনে দিতো রহমত
তুমি না এলে কে চিনাতো নাজাতের সরু পথ।

শেষ বিচারে পুলসেরাত আর হাসরের ময়দানে
তোমার আশীষ যেন পাই যেতে স্বর্গের উদ্যানে
তোমাকে ছাড়া পাবো কি বেহেশত, কে দেখাবে দিশে
পাবো কি নাজাত, ছুটবো কোথায় মুক্তির সন্ধ্যানে?

মানবতার পথপ্রদর্শক নবীকূল শিরোমনি
তুমিই মোদের হৃদস্পন্দন, মমতার মহাখনি
শেষ বিচারে যখন আমরা হয়ে যাবো জড়সড়
পাপের হিসাব ছোট করে দিও, পূণ্য দেখাইও বড়।

আসসালাম। স্বাগতম। 
হে রাসুল সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসসালাম,
হাশরের ময়দানে যেন পাই তোমার সুপারিশ।

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রি.
ঈদ ই মিলাদুন্নবী (স.)
খুলনা
       





Tuesday, August 22, 2023

ওয়াদুদুর রহমান পান্না

 


ওয়াদুদুর রহমান পান্না
ই ম রু ল  কা য়ে স

মৃত্যুই কি সবকিছুর শেষ?
সীমানার ওপারে চলে যাওয়াই কি মুক্তির মোক্ষম গন্তব্য?
তাহলে কেন এই তাড়াহুড়ো, অসময়ে অসমাপ্ত প্রস্থান!
জনতার আগ্রহ শেষ না হতেই জীবনের খেলা হলো শেষ।

আচমকাই চলে গেলেন ওয়াদুদুর রহমান পান্না ভাই!
তার তো আরো অনেক কিছু দেওয়ার ছিল?
আমাদেরও পাওয়ার ছিল অনেক, দেওয়ারও ছিল তাকে,
অনেক কিছু বলার ছিল, করার ছিল ভালোবাসার পঙক্তিমালা লিখে।

প্রেসক্লাবে অঝোর শ্রাবণ, শুনসান নীরবতা হনন করছে মননের কষ্ট।
জন্মভূমির চেয়ারগুলো দুঃখে কাতর, বিরহী খুলনা বিলাপ করছে,
ব্যথার তিমির গিলে খাচ্ছে জোহরা খাতুন শিশু বিদ্যানিকেতন।
ছোট্ট ছোট্ট ফেরেস্তাদের চোখের অশ্রু কে মুছাবে?
কে চালাবে বেতার পাড়ায় কচি-কাচার আসরগুলো?

মৃত্যুই যদি জীবনের শেষ হয়, মৃত্যুকেও জয় করে অবিনশ্বর স্মৃতি।
স্মৃতির বাতিঘরে অমরত্বের অনল শিখা জ্বেলে
মনের মন্দিরে বেঁচে রবে আমাদের পান্না ভাই। 

সত্যে অটল, অবিচল পথচলা, সাহসী কলম ও দৃঢ় ব্যক্তিত্ব নিয়ে
হঠাৎ তিনি হয়ে গেলেন স্মৃতির জলজ্যান্ত পোস্টার।

২২ আগস্ট ২০২০ খ্রি.
খুলনা

Monday, August 21, 2023

ওয়াসফিয়া নাজরীন

 

ওয়াসফিয়া নাজরীন
ই ম রু ল  কা য়ে স

নারী
তুমি- পাহাড় বেয়ে উপরে ওঠো শুনে, ভীষণ অবাক হই
কে তোমাকে ঘরের বাহির ডাকে?
দেশের নিশান, নারীর হাতে, পাহাড় চূড়ায় দেখে ,
অবাক হয়ে ভাবি...
পাহাড় তোমায় কীসের নেশায় ডাকে?

নারী
তুমি - দেশের নিশান ওড়াতে ছুটেছো এশিয়া থেকে ইউরোপ,
ইউরোপ থেকে আফ্রিকা, ওসেনিয়া, আমেরিকা।
এভারেস্ট চূড়া ছুঁয়েছে তোমায়, তুমি ছুঁয়েছো কিলিমানজারো,
একোনকাগুয়া, কারাস্তনেজ, পুনাক জায়া, এলব্রুজ।
সবার শিখরে পতাকা উঁচিয়ে লিখেছো একটি নাম, বাংলাদেশ।
তোমাকে ঘিরে জাতির উচ্ছ্বাস, গর্ব অনিঃশেষ।

নারী
তুমি - পাহাড় চূড়ায় ছড়িয়ে দিয়েছো লাল সবুজের নাম
অবাক বিশ্ব তোমাকে চিনেছে ’পাহাড়-কন্যা’ নামে
দেশের পতাকা উঁচিয়ে ধরে নিজের সীমানা ছাড়ি
সীমাবদ্ধতার দেওয়াল ভেঙ্গে বুঝিয়েছো পারে নারী!

নারী
লুরি পর্বত, আইল্যান্ড পিক তোমার কাছে নত
সাত মহাদেশ টেক্কা দেওয়া পাহাড় রয়েছো যতো।
সাহসী কন্যার খেতাব দিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফী
’বর্ষসেরা অভিযাত্রি’র মুকুট দিয়েছে তোমার মাথায় রাখি।
বিশ্ব মাতিয়ে তুমি হয়েছো ব্রাক শুভেচ্ছা দূত
মনন থেকে দূর করেছো প্রতিবন্ধকতার ভূত।

সাবাস নারী!
সাবাস তোমায়, এগিয়ে চলো সামনে
তোমার জন্য অজস্র শুভ কামনা, ভালোবাসা রেখে গেলাম।

২৭ অক্টোবর ২০২২ খ্রি.
খুলনা

Tuesday, August 15, 2023

দুরন্ত সাধ

দুরন্ত সাধ
ই ম রু ল  কা য়ে স

মনে হয় ডানা মেলে উড়ে যাই আকাশে
পেড়ে চাঁদা খেলা করি বৈশাখি বাতাসে
মধুকর হয়ে বসি বকুলের শাখাতে
এঁকে দেই স্বপ্নটা ফুল আর পাতাতে।

মনে হয় মেঘ হয়ে খুঁজে ফিরি সুখটা
বাজপাখি হয়ে ফুড়ি আকাশের বুকটা
সারাদিন লেখাপড়া রুটিনের ঝাকাতে
মনে হয় চলে যাই মামা বাড়ি ঢাকাতে।

১৪ মে ২০০৭ খ্রি.
৩১ বৈশাখ ১৪১৪
খুলনা



পুলিশ অফিসার

 

পুলিশ অফিসার
ই ম রু ল  কা য়ে স

তোমায় দেখে সটকে গেলো গৌর চাচার নষ্ট ছেলে
বুঝি তুমি কেউ একজন অন্যরকম হর্তা-কর্তা
তুমি আসছো জানতে পেরে ফাঁকা হলো মহসিন মোড়
বুঝি তুমি কেউ একজন সমীহ করে আমজনতা।

রোমিওরাও বুঝে গেছে তুমি আছো, তুমি আসছো
অবাঞ্চিত ভিড় দেখি না এই শহরের স্কুল গেটে
তুমি আছো বলেই কাছে আর আসে না চোর বাটপাড়
গুণ্ডা-বদমাশ সটকে গেছে, অন্তরালে চলে গেছে টপটেরর 
সবাই জানে তুমি উর্ধ্বে সকল ভয়ের, সকল লোভের 
নষ্ট হাতে পরাও তুমি হাতকড়া যে যখন-তখন।

ভিতোর তোমার কতোটা কঠিন, ক’জন জানে
যখন শুনি তোমার জন্য প্রহর গোনে অভাগিনী
অভাগীদের কাছে তুমি আলোর কন্যা ‘নাইটিঙ্গেল’
তুমি নাকি নষ্ট-প্রাণে সলতে জ্বালাও, বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাও।
আঁধো আলোয় তুমি ওদের গল্প শোনো, গল্প শোনাও-
ওদের কাছে তুমি নাকি কষ্টচোষা নীলকণ্ঠ
কল্পনাকে হার মানানো গল্প লেখো চোখের জলে।
নিজের হাতে জাগিয়ে তোলো মানব বিবেক ছন্দতালে।

সবাই বলে, তোমার গালে দুধে-আলতা; সাধ্বী সুন্দর, অনুপমা।
নানান ছলে নানান মানুষ নিত্য তোমার কাছে ঘেঁষে,
কাছে এসে মুচকি হেসে দেখে তুমি অন্য মানুষ!
কাঁকন হাতে দৃঢ়চেতা অন্য নারী, লাল-খয়েরি লিপিস্টিকে উর্দিপরা
একটি হাতে ধরে আছো হরণোন্মুখ নারীত্বকে
অন্যহাতে মানব বিবেক, মুষ্টিবদ্ধ শক্ত হাতে।

সবাই বলে তুমি নাকি শুভশ্রী; গায়ের রঙটা ফর্সা বলে 
পানির দরে বাড়তি একটু সুবিধা পাও!
উপর দিকে উঠতে হলে গুণ লাগে; গুণের সাথে নুন মাখানো সাহস লাগে।
আঁধার রাতে সবাই যখন কোলবালিশে আদর ছড়ায়
তুমি তখন ধাওয়া করো সন্ত্রাসীদের; চোর-বাটপাড় জেলে ঢুকাও।
রোদ-বৃষ্টি আঁচড় কাটে তোমার শরীর; তবু তুমি দ্বীপ্তি ছড়াও
ধুলোর শহর অবাক চোখে দেখে তোমার রূপ মিশানো গুণের বহর!


সাবাস পুলিশ! স্যালুট তোমায়!
কেড়ে নিলে আত্মভোলা মগ্নকবির ছন্নছাড়া কল্পনাকে
সামনে চলো গহীন সুদূর, পার হয়ে সব নিন্দাবৃষ্টিি।
আশীষ তোমার সাথে আছে বসন হয়ে
সাথে থাকবে কবির কলম, ভালোবাসা, শুভদৃষ্টি।

১৭ জুলাই ২০১৭ খ্রি.
খুলনা

 

 


মুজিব বাঙালির নিশ্বাসে, বিশ্বাসে

 

মুজিব বাঙালির নিঃশ্বাসে, বিশ্বাসে
ই ম রু ল  কা য়ে স 

নিঃশ্বাসের চিরচেনা অলিগলিতে যার নিরন্তর বসবাস
বিশ্বাসের গোপন প্রাসাদে যার একান্ত আনাগোনা
স্মৃতির সোনালি আকাশ, জুড়ে ঘন সাদা মেঘের মতো
মিশে আছে যে বিষ্ময়কার অনুভূতি 
কালবৈশাখির ভয়ঙ্কর থাবা অথবা একটি বুলেট 
হৃদয় থেকে পারে কি মুছে দিতে?

উড়ন্ত পতাকার লাল বৃত্তে যার রক্ত মিশে আছে
ঘন সবুজের মাঝে লুকিয়ে আছে যার সোনার বাংলার স্বপ্ন
বাঙালির স্পন্দিত শিরা-উপশিরায় গর্জে ওঠা পাহাড় ফাটা বজ্জ্রকণ্ঠ
কালজয়ী মহান পূরুষ অথবা সময়ের সুতীব্র প্রয়োজন
উদ্ভ্রান্ত নরখাদকের নগ্ন সিদ্ধান্তে অথবা ঘাতকের বিষাক্ত বিষ নিঃশ্বাসে
হৃদয় থেকে তাকে পারে কি মুছে দিতে?

অবারিত সবুজ ফসলের মাঠ, উন্মুক্ত সুনীল আকাশ
মৃত্তিকার ধমনীতে প্রবাহমান ছলাৎ ছলাৎ জলতরঙ্গ
গৃহত্যাগি বাউলের একতারা, মাঝির ভাটিয়ালি গান 
দিবস-রজনী আরাধনা করে তোমার জীবন্ত অস্তিত্বের
তুমি কোটি মানুষের হৃদয়ে পেয়োছে ঠাঁই, তুমি কালজয়ী মহামfনব 
তোমার মুত্যু নাই, মৃত্যু নাই, মৃত্যু নাই।

আমাদের পতাকার মতো তুমি সত্য, সবুজের বুকে তুমি লাল টকটকে  বৃত্ত
আমাদের মহান স্বাধীনতা, শ্যামল প্রকৃতি, সোনালি রোদ্দুরের মতো তুমি সত্য
আমার দৈনিন্দন বেঁচে থাকায়, আটপৌরে স্বপ্ন দেখায় তুমি মিশে আছো
কোনো ভূ্ঁইফোঁড় দেশদ্রোহীর রোষানল, গাদ্দারের অভিশপ্ত নিষ্ঠুর বুলেট
গৃহপালিত বিভিষণ, কিম্বা ঘৃণার সাইক্লোন
মানুষের ভালোবাসা থেকে তোমাকে উঁপড়ে ফেলতে পারে কি?
পারেনি, পারবে না কখনো।

হে পিতা, তুমি সন্তানের হাতে প্রাণ সঁপে দিয়ে সন্তানকে দিলে শিক্ষা
দীক্ষা নিয়ে আজকে হলে বীর বাঙালির সার্বজনীন যিশু
পিতৃ হত্যার কষ্ট নিয়ে কাঁদছে এখন জাতি, কাঁদছে বিশ্ববাসী
বুকের ভিতোর অগ্নি নিনাদ, বহ্ণি শিখায় কাঁপছে খুনির ত্রাহি ত্রাহি প্রাণ
ওরা এখন ঘৃণার আগুনে দগ্ধ হয়ে ধুকতে ধুকতে মরছে এবং মরবে।
আমরা ওদের ছাড়িনি জাতির পিতা, ঘৃণা ওদের ছাড়বে না কোনোদিন।

হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি ,বাঙালি জাতির পরম শ্রদ্ধেয় পিতা
বিশ্ববাসীর অবাক বিষ্ময়, বিশ্ব কাঁপানো অকুতোভয় নেতা।
বুকের গহীন অতল থেকে এনেছি আমার অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধা
কাঙ্ক্ষিত অক্সিজেনের মতো তুমি মিশে আছো, 
তুমি কালজয়ী মহা ইতিহাস; তুমি বাঙালি জাতির পিতা, 
তোমার মুত্যু নাই, মৃত্যু নাই, মৃত্যু নাই...
মৃত্যুহীন আদর্শ হয়ে
তুমি মিশে রবে আমাদের ধমনিতে নিঃশ্বাসে ও বিশ্বাসে । 

১৫ আগস্ট ২০১০ খ্রি.
খুলনা

চেতনায় কাজী নজরুল

  চেতনায় কাজী নজরুল ইমরুল কায়েস হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর, মানুষের মননে মননে বিদ্রোহের ঝঙ্কার তুলে কাঁপিয়ে দিয়েছিল যে আলোক বিচ্ছুরিত ক্ষণজন্...