Sunday, October 22, 2023

কলকাতা ভ্রমন: পর্ব এক

 

কলকাতা ভ্রমন: পর্ব এক

আমার কলকাতা ভ্রমণের উদ্দেশ্য মূলতঃ দু’টি; উন্নত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ এবং কলকাতার দু’টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ।
অভিনেত্রী দীপান্বিতা ঘোষ ‘হোটেল রূপসী বাংলা’য় আমার থাকার জন্য একটি কক্ষ আগে থেকেই বুকিং করে রেখেছিলেন । তিনি শিল্পচর্চায় নৃত্য, আবৃত্তি ও অভিনয়শিল্পী ও পেশাগত পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা বিভাগের উর্ধতন অধীকর্তা।
হোটেলের নাম ‘রূপসী বাংলা’। কলকাতা ভিআইপি রোডে অবস্থিত সুপরিচিত একটি আবাসিক হোটেল। অভিনেত্রী যথেষ্ট পরিমানে ভদ্র ও বিনয়ী; বাংলাদেশের একজন লেখক ও শিল্পীকে অভ্যার্থনা জানাতে আমাকে তার বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যেহেতু, সে পথে হাঁটা হয়নি, সম্ভবতঃ সে কারণেই কলকাতা ভিআইপি রোডের এই চার তারকা হোটেলে তিনি আমাকে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। তা ছাড়া চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং যোগাযোগ সবকিছু তিনিই করিয়ে দিয়েছেন। ডাক্তার এবং হসপিটাল দু’টোই ভিআইপি রোডে। হোটেল বুকিং এবং আমার কক্ষটি নিঃসন্দেহে অসাধারণ ছিল।
কিন্তু, সমস্যা হচ্ছিল অন্য জায়গায়...
ভিআইপি রোড অনেকটা প্রশস্ত; প্রচুর গাড়ি, চলে দ্রুত গতিতে। আশেপাশে ভালো খাবারের হোটেল কিংবা কেনাকাটার জন্য সাধারণ কিম্বা মাঝারি মানের মার্কেট খুবই কম; কিছু আছে নির্দিষ্ট স্থানে যা বেশ ব্যায়বহুল। বাংলাদেশী অতিথিদের আনাগোনা এবং তাদের পছন্দের খাবারের হোটেল এদিকে নেই বললেই চলে। ফুটপাতের উপরে ছোট ছোট খাবারের দোকান। সেখানে বসে অথবা দাঁড়িয়ে পুরুষদের পাশাপাশি বস্ত্রকৃপণ কিছু নারীদের সাবলীলভাবে খাওয়ার দৃশ্য ব্যাপক হারে চোখে পড়লো। আমি চেষ্টা করেও সেখানে দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়ার সাহস পেলাম না। যদিও, এই শহরের সাধারণ মানুষের কাছে আমি তেমন পরিচিত নই। কয়েক কিলোমিটার হাঁটার পরেও আমার পছন্দের কোনো খাবারের হোটেল খুঁজে পাচ্ছিলাম না...
‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’। অবশেষে, নিকটস্থ একটি ‘ধাবা’য় প্রবেশ করলাম। মেন্যু দেখে সহজপাচ্য অল্প কিছু খাবারের অর্ডার করলাম। খাবার প্রস্তুত হয়ে আসতে আসতে প্রয়োজনীয় ফোনালাপগুলো সেরে ফেললাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ওয়েটার খাবার নিয়ে এলো। খাওয়া শেষে উপস্থাপিত হলো বিল; মাত্র ৩৩০ রূপি।
আমি ফোনে কথা বলে যাচ্ছি আর মানিব্যাগ থেকে একটা একটা করে মোট চারটি ১০০+১০০+১০০+৫০ নোট মেন্যুচার্টে রাখলাম। ওয়েটার ’থ্যাংক ইউ, স্যার’ বলে মেন্যুচার্ট হাতে নিয়ে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর মেন্যুচার্ট হাতে নিয়ে অসাধারণ সুন্দর ও স্মার্ট একজন অল্প বয়সী নারী আমার সামনে এসে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি হাসলেন এবং বললেন,
- এক্সকিউজ মি, স্যার। আপনি ভালো আছেন?
- আমি বললাম, জী হ্যাঁ।
মনে মনে ভাবলাম, ভদ্র মহিলা কীভাবে বুঝলেন আমি বাঙালি?
- পরের প্রশ্ন, খাবার কি ভালো ছিল, স্যার?
- আবারো একই উত্তর, জী হ্যাঁ।
- আপনি কি ব্যস্ত অথবা টেনশনে আছেন, স্যার? কিম্বা কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?
কিছুটা বিরক্ত হয়ে ভদ্রভাবে বললাম, আপনি কি কিছু বলতে চাচ্ছেন? প্রশ্নে উত্তরগুলো একান্তই আমার পার্সোনাল।
তিনি রহস্যময় একখানা হাসি দিয়ে আবারো বললেন,
- স্যার, আমি অঙ্কিতা ভট্টাচার্য; এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার। আপনি খেয়েছেন তো মাত্র ৩৩০ রূপি।
কিন্তু...
- কিন্তু কী?
- কিন্তু, আমার ওয়েটারকে আপনি পে করেছেন প্রায় ১৯,০৫০ রূপি।
- আমি অবাক হয়ে বললাম, কীভাবে?
তিনি নোটগুলো আমাকে দেখিয়ে বললেন,
- আপনি দিয়েছেন ১০০ ডলারের দুইটি নোট, ১০০ রুপির একটি নোট এবং পঞ্চাশ রূপির আরো একটি নোট। আপনি অনেক বেশি পে করে ফেলেছেন, স্যার...
আমরা কোন কাস্টমারের সাথে প্রতারণা করি না। প্লিজ, রিটার্ন ইট এন্ড রিপে ইউর বিল।
আমি বিলটা পে করলাম এবং অনিন্দ্য সুন্দর, সুহাসিনী, সৎ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সেই ভারতকন্যার মুখের দিকে অনেকক্ষণ অবাক তাকিয়ে থাকলাম...
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে তাকিয়ে আছেন যে। কিছু বলতে চাচ্ছেন, স্যার?
আমি কবি জীবনানন্দ দাশের সেই অসাধারণ পঙক্তিমালা মনে মনে স্মরণ করলাম,
‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর মুখ দেখিতে চাই না আর’।
মেয়েটির হরোণোন্মুক চাহুনীতে আমি শেখ মুজিব, মাহাত্মা গান্ধী ও জর্জ ওয়াশিংটনের ছবির পার্থক্য খুঁজে পেলাম।
তার মায়াবী মুখায়বে ডলার, রূপি ও টাকার নোটগুলোর বেসামাল উড়াউড়ি দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে এলো...
ইমরুল কায়েস/কলকাতা
১০ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.


No comments:

অপেক্ষা

  অপেক্ষা ই ম রু ল কা য়ে স মাঘের হিমবাহ শেষে এলো ফাগুন, এলো বসন্ত বসন্তের আগমনে পুষ্পে পুষ্পে ভরে গেলো বিষন্ন প্রকৃতি; প্রজাপতি রঙ ছড়ালো,...