Sunday, October 22, 2023

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব দুই

 

কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব দুই

Charnock Hospital:
‘রূপসী বাংলা’ হোটেলের সন্নিকটে, নিউ টাউন জাংশন এর অদূরে, ভিআইপি রোডে অবস্থিত কলকাতার বড়সড় একটি হসপিটালের নাম Charnock। অত্যন্ত পরিপাটি ও সুবিশাল অবকাঠামো, কিছুটা ব্যয়বহুল। আপাততঃ এই হসপিটালটি আমার প্রতিবেশী বলা চলে।
এখানেই সপ্তাহে একদিন চেম্বার করেন বিখ্যাত অর্থপেডিক চিকিৎসক, ডা. অভিজিৎ এন কে সাহা। অ্যাপোলো হসপিটালসহ আরো কয়েকটি জায়গায় তিনি রোগী দেখেন। বন্ধুবর দীপান্বিতা ঘোষ আগেই উনার সাথে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে রেখেছিলেন। কারণ ডাক্তারের প্রতি তার আস্থা ছিল। কথা ছিল ০৯ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি. তারিখে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আমরা ডাক্তারের চেম্বারে উপস্থিত থাকবো। কিন্তু, গুরুত্বপূর্ণ এই এ্যাপয়েন্টমেন্টের অপেক্ষায় হোটেল কক্ষে থাকতে থাকতে চারটার দিকে ক্লান্তির ফাঁদে ফেলে তন্দ্রা আমাকে টেনে নিলো।
হঠাৎ ম্যাডাম ঘোষের ফোন কল। তড়িঘড়ি বিছানায় বসে পড়লাম। ফোনের ওপাশ থেকে মৃদু কণ্ঠে ভেসে এলো,
- ‘কোথায় আপনি? ডাক্তার অপেক্ষা করছে তো।
-‘এই তো পাশেই আছি, আসছি।’
একটা কপি-পেস্ট উত্তর দিয়ে দ্রুত হসপিটালের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। হসপিটালে উপস্থিত হতেই আবার ফোন বেজে উঠলো,
- হ্যালো, কোথায় আপনি? ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে আরো কিছু প্রসেস আছে তো। সেগুলো সেরে ফেলতে হবে। দ্রুত আসুন।
ডাক্তারের চেম্বারের সামনে রোগী এবং তাদের স্বজনদের বসার জন্য সুপ্রশস্ত একটি ওয়েটিং রুম আছে। সারিবদ্ধভাবে বসলে কয়েকশো লোক বসা যায়। আমি দীপান্বিতাকে একটি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম; বোঝার চেষ্টা করেছিলাম ব্যস্ত মানুষটা প্রথম দেখায় আমাকে চিনতে পারেন কিনা।
ডান দিকে ঘুরেই হরিণী দৃষ্টিতে তাকিয়ে অভিনেত্রী অভিনয় করে বললেন,
- হ্যালো, এবার ঢং রাখুন। ফেসবুকের কল্যাণে আপনাকে ঠিকই চিনতে পেরেছি।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করতেই বাম পাশে দেখি আরো একজন গুণী বন্ধু, বিশিষ্ট অভিনেতা ও সংগীত শিল্পী অমিত মিত্র বসে আছেন। বাংলাদেশে বিজনেস পলিসিতে মাঝে মাঝে লেখা দেখি, ‘একটা কিনলে আর একটা ফ্রি’। একসাথে দুই বন্ধুকে পেয়ে আমি আনন্দে অভিভূত হলাম।
অবশেষে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলাম। বলিউড নায়কের মতো অসাধারণ চেহারা ডাক্তার বাবুর। সাথে একজন সুদর্শনা এ্যাসিস্ট্যান্ট ডাক্তারও আছেন। আমার পরিচয় দিতেই তিনি বললেন,
- আপনার পরিচয় আগেই পেয়েছি। এখন বলুন, আপনি কেমন আছেন?
- আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। যে সমস্যা নিয়ে পরামর্শ করতে আমি ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি গত ৪-৫ দিন ধরে ঐ সমস্যাটাই তেমন অনুভূত হচ্ছে না। আমি ধীরে ধীরে আমার সমস্যাগুলো তাকে অবহিত করলাম।
তিনি খুঁটে খুঁটে সমস্যার গোড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করলেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ দীর্ঘ আলাপন শেষে তিনি কিছু টেস্ট করতে বললেন। রিপোর্টগুলো সাথে নিয়ে ১৪ অক্টোবর বিকেল পাঁচটায় আবার এপয়েন্টমেন্ট প্রদান করলেন।
আশ্বস্ত করে বললেন,
- রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখি, শনিবারে আসুন। প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবেন।
আমি হ্যান্ডশেক করে বেরিয়ে এলাম।
হসপিটালের পাশেই একটি ক্যাফেটোরিয়া। তিন বন্ধুর এক জায়গায় বসা এবং সেখানে বসে কিছু একটা খাওয়া মানেই স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত উপভোগ করা।
প্রতিষ্ঠিত মানুষ মানেই ব্যস্ত মানুষ। ব্যস্ততা সকল সফল মানুষের সফলতার অপরিহার্য অনুষঙ্গ। উনারা দু’জনই সেদিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু আন্তরিকতা থাকলে শত ব্যস্ততার মাঝেও কাছের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখানো যায়, তারা তা প্রমাণ করলেন ।
কলকাতায় আসার আগে কলকাতার মানুষের অতিথি পরায়নতা সম্পর্কে আমার প্রিয় সহকর্মীর মন্তব্যটি এই ক্ষেত্র ভুল প্রমাণিত হলো।
প্রিয় বন্ধু অমিত মিত্র ও দীপান্বিতা ঘোষের জন্য এক আকাশ ভালোবাসা এবং এক সাগর কৃতজ্ঞতা রইলো...
ইমরুল কায়েস/কলকাতা
১২ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.

No comments:

অপেক্ষা

  অপেক্ষা ই ম রু ল কা য়ে স মাঘের হিমবাহ শেষে এলো ফাগুন, এলো বসন্ত বসন্তের আগমনে পুষ্পে পুষ্পে ভরে গেলো বিষন্ন প্রকৃতি; প্রজাপতি রঙ ছড়ালো,...