কলকাতা ভ্রমণ: পর্ব তিন
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল:
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন কলকাতার Queen's Way তে এই ঐতিহাসিক স্থাপনার গোড়াপত্তন করেন যার স্থপতি ছিলেন William Emerson & Vincent Esch.
‘History is a record of the past... ’ যা নির্মম হলেও সত্য। এই সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই।
যেমন নবাব পরিবারের একাধিক সদস্য ও প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের ষড়যন্ত্রের কারণে এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল পলাশীর আম্রকাননে। অতঃপর, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের ঘাণি টানতে হয়েছিল সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশকে... এটাই বাস্তব, এটাই ইতিহাস। ইংরেজ শাসনের প্রতি ঘৃণা ও অশ্রদ্ধার কারণে ইংরেজ শাসনামলের ইতিহাস থেকে চোখ সরিয়ে নেয়া হবে এক রকমের ভুল।
ঐতিহাসিক সেই ভুলের অনুসন্ধান করা এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার অভিপ্রায় নিয়ে গতকাল পরিদর্শন করলাম কলকাতার ঐতিহাসিক সেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, রবার্ট ক্লাইভ এবং তদপরবর্তী বৃটিশ শাসনের প্রতি খুব একটা সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলেও বেশ কিছু কল্যানমুখি সিদ্ধান্তের কারণে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার প্রতি ভারতবাসীর যথেষ্ট সম্মান ছিল।
কলকাতার জনপ্রিয় নাট্যকার ও স্ক্রিপ্ট রাইটার অভিজিৎ চ্যাটার্জী সকাল ১১:০০ টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর সামনে আমাকে অভ্যার্থনা জানালেন। গেট থেকে টিকিট নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। কী নয়নাভিরাম দৃশ্য! এগিয়ে যেতেই মহারাণী ভিক্টোরিয়ার ভাস্কর্য আমাদেরকে স্বাগত জানালেন। মহারাণীর সাথে ফটো সেশন শেষে সারি ধরে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
শৈল্পিক ভবনের ভিতরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং বৃটিশ শাসনামলের বড়কর্তাদের ছোট ছোট ভাস্কর্য দেখতে পেলাম। দু'টো কামানের মাঝে রবার্ট ক্লাইভ দাঁড়িয়ে আছেন। তার ভাস্কর্যের দিকে একটানা প্রায় তিন মিনিট তাকিয়ে থাকলাম। কারণ ‘নবাব সিরজউদ্দৌলা’ সিনেমা দেখে তার প্রতি সীমাহীন অশ্রদ্ধা জমে আছে বুকের ভিতোর।
মনে মনে ভাবলাম। এই সেই লোক যিনি বাঙালি ও ভারতীয়দের সরলতাকে হাসতে হাসতে হরণ করেছিলেন। ‘মাই লর্ড, আমরা এসেছি বাণিজ্য করতে’ বলেই কত সহজেই পুরো দেশটাকে তিনি কোটের পকেটে ঢুকিয়ে ফেললেন।
ভিতোরে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মূর্তি ও দেয়ালে সাটানো ঐতিহাসিক চিত্রকর্মের ছবি তোলার পর পেছনে গেট দিয়ে উদ্যানে বের হয়ে গেলাম।
বাইরে চোখ জুড়ানো উন্মুক্ত সুপ্রশস্ত উদ্যানের দৃশ্য আমাকে মোহিত করলো। অবশেষে, হাঁটতে হাঁটতে পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকলাম।
যেতে যেতে শেষবারের মতো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দিকে আর একবার তাকালাম আর কুখ্যাত মীর জাফরের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে মনে স্মরণ করলাম:
‘শেঠজি, আমরা সবাই মিলে দেশটাকে বিক্রি করে দিচ্ছি না তো!?'
‘আসুন, মনে কষ্ট থাকলে ঘরের ভিতোরে পুকুর কাটি, কিন্তু খাল কেটে নদীর কুমির যেন ঘরে না আনি ...
ইমরুল কায়েস/কলকাতা
১২ অক্টৌবর ২০২৩ খ্রি.

No comments:
Post a Comment