ইমরুল কায়েস এর রুবাই
রুবাই ০১:
তোমার কথা যখন ভাবি অফিস কিম্বা উদ্যানে
দেখি তুমি ছায়ার মতো সাথেই আছো সবখানে 
দিবানিশি তুমিই আমার জিন্দেগানির হাসি কাঁদা।
রুবাই ০২:
এই যে দেখো সুনীল আকাশ, পাহাড়-নদী, সাগর তরু
এর মাঝে যে সুপ্ত আছে যায় না দেখা খুবই সরু
দৃষ্টি আমার এতোই খারাপ, এমন আমি বদ নসীব যে
দেখতে তারে বৃথাই আমি খুঁজে ফিরি দূর মরু।
রুবাই ০৩:
এই যে দেখো ভোরের আলো, স্নিগ্ধ সন্ধ্যা, তরুলতা
পাহাড়-নদী, কীট-পতঙ্গ, ছোট্ট শিশুর সরলতা
তারই হাতে বিশ্বনিখিল, হায়াত-মউত, মানবতা।
রুবাই ০৪:
ইচ্ছে আমার জায়নামাজে তসবিহ্ হাতে রই বিভোর
পাককালামে পাখির মতো হর-হামেশা হই মুখর
কিন্তু আমায় এই পৃথিবী আঁকড়ে রাখে আষ্টে-পৃষ্ঠে
ব্যস্ত থাকি অর্থ-বিত্ত, লোভ-লালসা, ভুড়ি পুজোর।
রুবাই ০৫:
নামাজ রোজা হজ্জ্ব ও যাকাত আসবে না তোর কোনো কাজে
জিন্দেগানির কর্মকাণ্ডে ঈমান যদি থাকে বাজে
সবার আগে থাকতে হবে স্বচ্ছ ঈমান নিয়ত ভালো
তা না হলে বেহেশতি সুখ দিনের শেষে জুটবে না যে।
রুবাই ০৬: 
ভঙবে খেলা সন্ধ্যাবেলা আঁধার যখন আসবে নেমেে
আমোদ-ফুর্তি, বিত্ত-বিলাস, দিন ফুরোলে যাবে থেমে
যখন তোমার ফিরবে চেতন বন্ধ হবে ঘড়ির কাঁটা
সময় তোমার যাচ্ছে চলে মগ্ন হবার খোদার প্রেমে।
রুবাই ০৭:
আমার অনেক ভ্রান্তি ছিল অনেক ছিল অবহেলা
জানি তুমি করছো খেলা আমার সাথে সারাবেলা
কোনটি তোমার পন্থা সঠিক সবই তোমার জানা ছিল
বোঝা কঠিন আদ্যপান্ত প্রভু তোমার লীলাখেলা।
রুবাই ০৮: 
অর্থ-বিত্ত, দামী আসবাব, বিলাসিতার মূল্য কী যে
আমাদের এই জিন্দেগানী একটু ভাবো সবই মিছেে
একটুখানি পরমোল্লাস, একটু সুখের গল্প শেষে
সাঙ্গ হবে জীবন খেলা সকল কিছু রবে পিছে।
রুবাই ০৯:
অথই সাগর মাঝে আমি ধরে আছে অক্টেপাসে
ভাবছি কখন আসবে তুমি ত্রাতা হয়ে আমার পাশে
সন্ধ্যাবেলায় বুঝছি আমি তুমি ছাড়া আর কেহ নাই
গহীন রাতে তোমার আশীষ থাকে যেন আমার পাশে।
রুবাই ১০:
দৃষ্টি আমার যে দিকে যায় দূর দিগন্তে যত দূর
দেখি তোমার দানের বহর আকাশ জমিন অন্তঃপুর
চোখ থাকিতে অন্ধ যারা পায় না তারা সে সব খোঁজ
তবুও তোমার রহমতের দান খোঁজে না নিকট দূর।
রুবাই ১১:
ইচ্ছে হলেই আয়েশ করে খায়েশ মিটাও তোমরা জানি
হয়তো ভাবো এমনি করেই সাঙ্গ হবে জিন্দেগানী
কিন্তু যেদিন দিন ফুরোবে সাঙ্গ হবে পান্থশালা
সঙ্গি শুধু হবে তোমার নামাজ রোজা পাপের ঘাণি।
রুবাই ১২:
আকাশ ভরা চন্দ্র তারা সাগর ভরা নোনাজল
আকাশ ভরা চন্দ্র তারা সাগর ভরা নোনাজল
মায়ায় ভরা এই ধরণী জীবন ভরা কোলাহল
সময় হলে সাঙ্গ হবে এই পৃথিবীর আয়োজন
সৃষ্টি সবই আল্লাহ পাকের দয়ায় ভাসা শতদল। 
রুবাই ১৩:
নামাজিরা ভয় করো না পার হতে ঐ পুলসেরাত
আল্লাহ পাকের দিদার পেতে নিত্য জপে দোয়া কেরাত
হয়তো তারা জিন্দেগিতে পায় না খ্যাতি, বিত্ত-বিলাস
রোজ হাশরে ঠিকই তারা প্রাপ্ত হবে প্রভুর নাজাত।
রুবাই ১৪:
খোরমা খেজুর মরু-প্রান্তর মক্কা শরীফ মনের মাঝে
দিবানিশি খুঁজেফিরি মন বসে না কোনো কাজে
হেরা গুহা কা’বা শরীফ ধ্যানে-জ্ঞানে রেখে আমি
মুহাম্মদের জন্মভূমি মদিনা যাই নিত্য সাঁঝে।
রুবাই ১৫:
পোষা ময়না, তোলা গয়না, অর্থ-বিত্ত সবই মিছে
জিন্দেগানির পুজি পাট্টা সবই তোমার রবে মিছেে
আখিরাতের পূণ্য সওদা সঙ্গি শুধু হবে তোমার
মগ্ন হয়ে ভাবো তোমায় কোন জাদুকর পাঠাইয়াছে?
রুবাই ১৬:
প্রভু তুমি আমায় যখন এই দুনিয়ায় মুক্তি দিলে
চোখের জলে হই মুসাফির পাপের পাষাণ চক্ষু মেলে
এখন আমি শারাব নেশায় রুপের নহর লেহন করি
দাও না আবার অধমকে ঠাঁই তোমার ক্ষমার ছায়াতলে।
রুবাই ১৭:
ফোরাত নদীর শীতল হাওয়া মরু-প্রান্তর কারবালাতে
ইমাম হোসেন শহীদ হলেন ইয়াজিদের ভুল খেলাতে
অত্যাচারীর তরবারী শক্তিশালী হোক না যতোই
বিজয় তাহার ঠিকই হলো ইতিহাসের শেষ বেলাতে।
ইমাম হোসেন শহীদ হলেন ইয়াজিদের ভুল খেলাতে
অত্যাচারীর তরবারী শক্তিশালী হোক না যতোই
বিজয় তাহার ঠিকই হলো ইতিহাসের শেষ বেলাতে।
রুবাই ১৮:
আমার নবী মুহাম্মদের নাম জপিলে শান্তি পাই
খুশবু মাখা নাম জপিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই
শেষ বিচারে পুলসেরাতে রাসুল যেন সহায় হন
তা না হলে কঠিন বিপদ পাপ মোচনে রক্ষা নাই।
রুবাই ১৯:
পাখির কণ্ঠে, ফুলের গন্ধে, নদীর স্রোতে আছেন যিনি 
সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাতে আমার সাথে আছেন তিনি
আমি যখন যেখানে যাই সবই তিনি দেখতে যে পান
বেলাশেষে যেতে হবে জেনেও পাপের পাহাড় কিনি।
রুবাই ২০:
যখন ভাবি তুমি ছাড়া আমার তো আর নেই ভরসা
তোমার দিকে ছুটতে থাকি অশ্রুজলের ঝরে বর্ষা
যেতে যেতে মোহের টানে আবার আমি আনমনা হই 
বসলে ধ্যাণে তুমি টানো, বাকি সময় ভুল মোহে রই।

 
 
 
No comments:
Post a Comment