Showing posts with label নাটক. Show all posts
Showing posts with label নাটক. Show all posts

Friday, January 26, 2024

হাত কড়া

 

হাত কড়া
(গৃহপরিচারিকা নির্যাতন বিষয়ক নাটিকা)
ই ম রু ল  কা য়ে স

চরিত্রসমুহ:
সালাম সাহেব: কলেজ শিক্ষক
বীথি: গৃহিনী
রোজি: গৃহপরিচারিকা
সাহেদ সাহেব: আইনজীবী, সালাম সাহেবের বন্ধু
ফাতিমা নূর: থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
কনস্টাবল: উর্দি পরিহিত একজ কনস্টাবল 

(সকাল নয়টা। সালাম সাহেব ও তার স্ত্রী ড্রইং রুমে আলাপরত। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠবে... ক্রিং ক্রিং ক্রিং)
সালাম সাহেব: রোজি। এই রোজি।
রোজি: জী আঙ্কেল। কী হইছে?
সালাম সাহেব: দেখতো, কে আসলো? পরিচিত হলে দরোজা খুলবি। নইলে খুলবি না।
রোজি: জী, আইচ্ছা। আমি দেখতাছি।

(লুকিং গ্লাসের ভিতোর দিয়ে লোকটাকে দেখে রোজি দরোজা খুলবে এবং সালাম দিবে। অতঃপর সাহেদ সাহেব ঘরে প্রবেশ করে এবং ড্রইং রুমের দিকে আসবেন।)
সালাম সাহেব: আরে সাহেদ ভাই  যে। গরীবের দরোজায় হািতীর পাড়া দেখছি। ভালো আছেন নিশ্চয়ই? বসেন, বসেন ভাই।
সাহেদ সাহেব: আরে বলেন কী? ভালো না থাকলে এখানে আসলাম কী করে? বীথি ভাবী, আপনি ভালো আছেন তো?
বীথি: হ্যাঁ, ভাই। এই চলছে আর কি! কাজের ছেমড়িটা নিয়ে বিশাল যন্ত্রণায় আছি, ভাই।
সাহেদ সাহেব: কে ভাবী? সে আবার কী করলো?
বীথি: ও আর বলবেন না ভাই। কথা বোঝে না, কাজ বোঝে না। যখন তখন মাল-জিনিস ভাঙ্গে। আমার জীবন একদম অতিষ্ট করে তুললো। একটা মুর্খ, রাবিশ। গ্রাম থেকে ধরে এনেছে আপনার প্রাণের বন্ধু।
সালাম সাহেব: আচ্ছা ! এখন থামো তো। মেহমানের সামনে তুমি এসব কথা তুলছো কেন? নতুন নতুন সবাই একটু একটু ভুল করে। কিছুদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সাহেদ সাহেব: হ্যাঁ, ভাবী। একটু কষ্ট করে কাজগুলো বুঝিয়ে দিন। দেখবেন সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে।
বীথি: আরে, নারে ভাই! ঠিক না ছাঁই হবে। বানরের লেজ কিছুতেই সোজা হয় না। গুনে গুনে আর মাত্র তিন দিন দেখবো। ওকে না তাড়ালে আমি পিটিয়ে ওকে ঘর থেকে বের করে দেবো।

(এমন সময় রোজি ট্রেতে নাস্তা ও শরবতের গ্লাস নিয়ে ড্রইং রুমে ঢুকবে। টেবিলে পরিবেশনের সময় হাত থেকে পড়ে গিয়ে একটি গ্লাস ভেঙে যাবে।)

বীথি: এই জানোয়ারের বাচ্চা, তুই এ কী করলি? আমার দামী গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেললি। তোরে আজ মেরেই ফেলবো।


(রোজিকে চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে বীথি রান্না ঘরে নিয়ে যাবে।খুনতি দিয়ে নির্মমভাবে মারতে থাকবে। দূর থেকে পিটানোর শব্দ ও কান্নার শব্দ ভেসে আসবে।)

সালাম সাহেব: সাহেদ ভাই, আপনি একটু বসেন। আমি আসছি। পরিস্থিতি িএকটু সামাল দিয়ে আসি।
সাহেদ সাহেব: হ্যাঁ, ভাই। আপনি ভিতোরে যান। ভাবীবে বোঝান। পরিস্থিতি সামাল দেন।

(একটু পরে সালাম সাহেব ফিরে আসবে। মারার শব্দও কমে যাবে।)

সালাম সাহেব: আমি যারপর নাই দুঃখিত, সাহেদ ভাই। আপনার ভাবী মাঝে একটু মাত্রাতিরিক্ত করে ফেলে, ভাই।

সাহেদে সাহেব: মেয়েটি কিন্তু খুব একটা অন্যায় করেনি। বড় মানুষের হাত থেকেও তো গ্লাসটা পড়ে ভেঙ্গে যেতে পারতো! তাছাড়া ও তো একনো শিশু।

সালাম সাহেব: আমি খুব লজ্জিত, ভাই।

সাহেদ ভাই: সালাম ভাই, ভাবীবে কিন্তু বোঝাতে হবে। উনি কিন্তু ভুল করে যাচ্ছেন। একটা বড় বিপদে পড়তে পারেন আপনারা। আমি কিন্তু আইনের লোক, আপনাদের সাবধান করে যাচ্ছি। আইন কিন্তু আপনাদের বিপক্ষে যাবে।

সালাম সাহেব: এসব বুছেই তো আপনার ভাবীকে অনবরত বুঝিয়ে যাচ্ছি।

সাহেদ সাহেব: সালাম ভাই, এবার বিদায় চাচ্ছি। আজ আর বসতে পারছি না। আমার একটু তাড়া আছে। অন্য একটি আবার আসবো।

সালাম সাহেব: অবশ্যই আসবেন। ভাবীকে সাথে নিয়ে আসবেন। আর শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন, ভাই।

সাহেদ সাহেব: ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ।

(সালাম সাহেব দরোজা লাগিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করবেন। রান্নাঘরের মেঝেতে শুয়ে রোজি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকবে। ওর ক্ষতস্থানে মলম লাগিয়ে দিয়ে তিনি বীথির ঘরে যাবেন এবং গলার স্বর মোটা করে তিনি বীথিকে বলবেন...)

কাজটা তুমি মোটেই ভালো করোনি, বীথি। ভদ্রতা এবং আইনের সীমা দুটোই তুমি লঙ্ঘন করেছো। আমি ওকে আগামী সপ্তাহে বাড়ীতে রেখে আসবো। ওর গায়ে যেন আর হাত দেওয়া না হয়। আমি কলেজে চলে যাচ্ছি। এবারের মতো সহ্য করলাম।

(সালাম সাহেব ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়ে দ্রুত বের হয়ে যাবেন। কিছুক্ষণ পর বীখি বেড রুম থেকে রান্না ঘরে প্রবেশ করবে।)

বীথি: এই ফকিরের বাচ্চা আমাকে অপমান করে তুই এখনো শয়ে আছিস? থালা বাসন ধোঁবে কে? বাথরুমে একগাদা কাপড়-চোপড় ভেজানো সেগুরো ধোঁবে কে?

রোজি: আমার অনেক লাগছে খালাম্মা। গতরডা ব্যথা করতাছে।আমি তো হাত নাড়াতে পারছি না।খালাম্মা, হু হু হু ...

বীথি: কী বললি! তোর এতো বড় সাহস! এতোগুলো থালা-বাসন, কাপড়-চোপড় ধোঁবে তোর ভাতার?  বান্দির বাচ্চা... তোকে দেখাচ্ছি মজা।

(রোজিকে উপুরযুপরি থাপ্পড়, লাথি মারতে থাকবে সে। এক পর‌্যায়ে রুটিবলা বেলন দিয়ে পিঠে ও ঘাঁড়ে মারতে থাকবে। আঘাত সহ্য করতে না পেরে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যাবে িএবং দৌড়াদে থাকবে রোজি...)

কিছুক্ষণ পর। কলিংবেল বেজে উঠবে। ক্রিং, ক্রিং ক্রিং...

বীথি: (ঘরের ভিতর থেকে) কে?
ফাতিমা নূর: থানা থেকে আসছি । দরোজা খোলেন।
বীথি: (দরোজা খুলে বলবে) আপনারা কাকে চান?
ফাতিমা নূর: এটা কি সালাম সাহেবের বাসা?
বীথি: জীঁ,হ্যাঁ। কিন্তু কী হয়েছে?
ফাতিমা নূর: আপনি কি তার স্ত্রী?
বীথি: জীঁ, হ্যাঁ। কিন্তু কেন?
ফাতিমা নূর: আপনার স্বমী কোথায়? উনাকে ডাকেন।

(বীথি তার স্বমীকে ফোন করে বাসায় আসতে বলবেন। সালাম সাহেব দ্রুত হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ঢুকবেন। ঘরের ভিতোরে পুলিশের লোকজন দেখে অবাক হয়ে তিনি প্রশ্ন করবেন..)

সালাম সাহেব: কী হয়েছে অফিসার?

ফাতিমা নূর: আপনার দাজ্জাল স্ত্রী একটি তেরো বছরের বাচ্চাকে নির্দয়ভাবে প্রহার করেছেন। এমনিতেই তাকে দিয়ে আপনারা শিশুশ্রম করেছেন! তারপর আপনার স্ত্রী আধমরা করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।মেয়েটি এলাকার পথঘাট কিছুিই চেনে না। মহল্লার রোকজনের সহযোগিতায় সে এখন আমাদের হেফাজতে আছে।

সালাম সাহেব: আমি আমার স্ত্রীর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি, অফিসার। আমাদেরকে এবারের মতো ক্ষমা করে দেন।

ফাতিমা নূর: আপনার ক্ষমা চাইতে হবে না। আপনি মেয়েটিকে আগে হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করে তুলবেন। তারপর তাকে তার বাবার হাতে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসবেন।

সালাম সাহেব: ঠিক আছে , অফিসার। আমি তাকে সুস্থ করে তার বাবার হাতে পৌঁছে দেবো।

ফাতিমা নূর: আর আপনার বেগম সাহেবা মারাত্মকভাবে আইন ভঙ্গ করেছেন। মেয়েটিকে মারধর করেছেন। শিশুশ্রম নিরোধ আইন এবং নারী ও শিশু নির‌্যাতন আইন ভঙ্গ করায় আমরা তাকে গ্রেফতার করলাম। কনস্টাবল।

কনস্টাবল: ইয়েস স্যার। 
ফাতিমা নূর: মহিলাকে হাতকড়া পরাও এবং তানায় নিয়ে চলো।
কনস্টাবল: ইয়েস স্যার। (কনস্টাবল বীথিকে হাতকড়া পরাবে)
সালাম সাহেব: আমার স্ত্রীকে ছেড়ে দিন প্লিজ। প্লিজ অফিসার। এখন থেকে আমি আমার স্ত্রীর দায়িত্ব নিবো।
ফাতিমা নূর: রাখেন আপনার স্ত্রীর কথা। আপনি শিক্ষক মানুষ। আগে সমাজের দায়িত্ব নেন। সমাজের কথা ভাবেন। শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতন বন্ধে মনুষকে সচেতন করে তোলেন। সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেন আইন ভঙ্গ করলে তার শাস্তি আপনার দাজ্জাল স্ত্রীর মতোই হবে।

(বীথিকে নিয়ে পুলিশ গাড়িতে উঠবে। সালাম সাহেব চলন্ত গাড়রি দিকে নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকবে)

সমাপ্ত