ইমরুল কায়েস এর রুবাই
রুবাই ্২১:
তোমার যখন নিদ্রাবিলাস আমার তখন কালবৈশাখী
সহজ সরল ভাবনা আমার তোমার দ্বারে ব্যস্ত রাখি
তোমার চোখের এক ইশারায় মনকাননে ঝর্ণা ঝরে
সকাল দুপুর ব্যস্ত সন্ধ্যা তোমার ধ্যাণে মগ্ন রাখি।
রুবাই ২২:
এক পেয়ালা শরাব দিও একটু দিও নেশার দোলা
এক পেয়ালা শরাব দিও একটু দিও নেশার দোলা
মধ্যরাতে চাইলে যেন পাই গো তোমার দরজা খোলা
যতই তুমি ব্যস্ত থাকো অন্তরীক্ষে অষ্টপ্রহর
স্মরণ রেখো আমি কিন্তু দিল শারাবী আত্মভোলা।
রুবাই ২৩:
ভেবেছিলাম এই রজনী শেষ হবে না কভু আর
সাথেই রবে শারাব সাকী রূপমহল আর বাহু তার
কিন্তু যখন সাঙ্গ হলো শারাব সাকীর নেশার ঘোর
দেখি শুধু আমিই একা শূন্যমহল খো দ্বার।
রুবাই ২৪:
আমার যদি পাখির মতো থাকতো ডানা নরম পালক
যেতাম উড়ে অনেক দূরে উৎসমূলে রবের আলোক
কিন্তু আমি এমন একটা হলাম বোকা বদনসিব
পাখনা ছাড়াই খুঁজেফিরি দ্বীনের নবী, বিশ্বচালক।
রুবাই ২৫:
বেলকোনিতে লাল দোপাট্টা, এলোকেশীর ব্যস্ত নূপুর
দোল দিয়ে যায় শান্ত মনে ক্লান্ত বিকেল, ব্যস্ত দুপুর
স্বপ্ন আমার পানশি ভাসায় দূর অজানায় অভিসারে
আলতাপরা নূপুর পায়ে ঢেউ খেলে যায় পদ্মপুকুর।
রুবাই ২৬:
কৃষ্ণচূড়া হাসনাহেনা সূর্যমুখি ভালোবাসি
তবু আমি সধ্যা হলেই তোমার নীড়ে ফিরে আসি
খুশবু তোমার তাদের চেয়ে কমতি যে নাই আমি জানি
তাই তো আমি আঁধার-আলোয় থাকি তোমার পাশাপাশি।
রুবাই ২৭:
হাসির পরে কান্না আসে , আলোর পরে অমানিশা
এমনি করেই জিন্দেগীতে কড়া নাড়ে ভালোবাসা
একটু সুখের ছোঁয়ায় জাগে মিষ্টি মধুর শিহরণ
শান্ত মনে তুফান তুলে জাগিয়ে দেয় ভালোবাসা।
রুবাই ২৮:
হঠাৎ তোমার খুশবু এলো বাতায়নের খিড়কি খুলে
ঢেউ খেলানো জলপ্রপাতে হৃদয় আমার উঠলো দুলে
কাজল চোখে স্বপ্ন তোমার অগোছালো বাস্তুহারা
যেমন ইচ্ছে নাচো তুমি নগ্ন পায়ে ছন্দ তুলে।
রুবাই ২৯:
একটুখানি সবুর করো সময় পেলেই আসবো ফিরে
কত্তখানি ভালোবাসি দেখাবো এই হৃদয় চিরে
বুঝবে তুমি কলি যুগের কেমন আমি শাহজাহান
ভালোবাসার বাবুইপাখি নাচবে তোমার ছোট্ট নীড়ে।
রুবাই ৩০:
আমার যখন ভোরের আলো তোমার নামে সন্ধ্যাবেলা
দিনের আলোয় পাও না সময় রাত্রে করো অবহেলা
তোমার যখন সূর্য ওঠে উপচে পড়ে রসের জোয়ার
আমার আকাশ জলে সিক্ত মেঘমালা করে খেলা।
রুবাই ৩১:
একটুখানি আলগা করো মেঘবালিকা ঘোমটা তোমার
রূপ অনলে যাচ্ছে পুড়ে প্রেমপিয়াসী দৃষ্টি আমার
যতোই ঢাকো অঙ্গ তুমি রূপের ঝিলিক ঠিকরে বেরোয়
ভালোবাসার গোলাপ দিবো বাগান বিলাস খোঁপায় তোমার।
রুবাই ৩২:
আর যাবো না জলসা ঘরে , শারাব সাকী নেশার ঘোর
রাত পোহালে আসে যেন জিন্দেগীতে নতুন ভোর
উল্টোপথে আর হবে না সময় আমার অপচয়
ভাবছি এখন কেমনে পাবো অন্ধকারে আলোর দোর।
রুবাই ৩৩:
আমি এখন ভিখারি নই, নিঃস্ব শুধু তোমার জন্য
সবাই ভাবে ইচ্ছে করেই আমি হলাম তোমার পন্য
যেমন ইচ্ছে নাড়াও আমায়, তুমি এখন নাটের গুরু
নাটাই এখন তোমার হাতে তাতেই আমার জীন ধন্য।
রুবাই ৩৪:
এখন আমি ভয় করি না প্রেম সাগরে কাটতে সাঁতার
তুমি আমায় শিখিয়েছে জল-তরঙ্গ কঁচুপাতার
একটু ভালোবাসা দিলে একটু দিলে দেহের পরশ
অভিসারে আলতো করে সাহস দিলে ভালোবাসার।
রুবাই ৩৫:
আমার খেতে ইচ্ছে করে তোমার হাতের পানের খিলি
তাই তো প্রতি সন্ধ্যাবেলায় রয়্যাল মোড়ে দু’জন মিলি
সারাদিনের ক্লান্তি আমার দূর হয়ে যায় সন্ধ্যাবেলায়
আমার সাধের পানের বোটায় চুন মেখে যাও নিরিবিলি।
রুবাই ৩৬:
আর ডেকো না সুনয়না মধ্যরাতে তুমি আমায়
তোমার আমার গোপন প্রণয় রাষ্ট্র হবে পাড়ায় পাড়ায়
রক্তচোক্ষু, লোকলজ্জ্বায়, তোমার ছোঁয়া যাদি না পাই
নীল সাগরে মরবো ডুবে ব্যর্থ প্রেমের দহন জ্বালায়।
রুবাই ৩৭:
হলদেপাখি এখন থাকে আমায় ছেড়ে অনেক দূরে
দূরগগনে পাখনা মেলে কণ্ঠ ছাড়ে অন্য সুরে
তবু আমি খুঁজি তারে মনকাননে অহর্নিশি
হয়তো আবার আসবে ফিরে মধু খেতে মনমুকুরে।
রুবাই ৩৮:
বুকের ভিতোর সযতনে গরান কাঠের আগুন জ্বেলে
এখন তুমি বসত করো অন্য ঘরের কপাট ঠেলেে
আমি এখন মধ্যরাতে অকারণে কলম চষি
তুমি ওড়াও সুখের ঘুড়ি দখিন হাওয়ায় শেষ বিকেলে।
রুবাই ৩৯:
ভোরের আলোয় শিশুর হাসি দগ্ধ দুপুর ক্লান্তি আনে
স্নিগ্ধ বিকেল অবশেষে সন্ধ্যাবেলার আঁধার টানে
মধ্যরাতে পন্ডিতেরা ব্যস্ত থাকে কাব্য লেখায়
আমি শুধু ছন্দ খুঁজি সারাবেলা তোমার গানে।
রুবাই ৪০:
ভোরের আলো ফুটবে যখন ছুটতে হবে কাজের খোঁজে
রুটি রিযিক সবার লাগে মহান প্রভু ঠিকিই বোঝেে
এরই মাঝে ধার্মিকেরা ধর্ম কর্ম ঠিকই করে
বেনামাজী চোরের মতো আঁধার মাঝে মাথা গোঁজে।
No comments:
Post a Comment