https://imrulkayesartgallery.blogspot.com/2025/06/blog-post.html

Friday, March 7, 2025

ইমরুল কায়েস এর রুবাই (০১-২০)


ইমরুল কায়েস এর রুবাই
রুবাই ০১:
তোমার কথা যখন ভাবি অফিস কিম্বা উদ্যানে
দেখি তুমি ছায়ার মতো সাথেই আছো সবখানে
একটু যদি ভুল পথে যাই সামনে তুমি তোলো বাধা
দিবানিশি তুমিই আমার জিন্দেগানির হাসি কাঁদা।
রুবাই ০২:
এই যে দেখো সুনীল আকাশ, পাহাড়-নদী, সাগর তরু
এর মাঝে যে সুপ্ত আছে যায় না দেখা খুবই সরু
দৃষ্টি আমার এতোই খারাপ, এমন আমি বদ নসীব যে
দেখতে তারে বৃথাই আমি খুঁজে ফিরি দূর মরু।

রুবাই ০৩:
এই যে দেখো ভোরের আলো, স্নিগ্ধ সন্ধ্যা, তরুলতা
পাহাড়-নদী, কীট-পতঙ্গ, ছোট্ট শিশুর সরলতা
এর মাঝে যে সুপ্ত আছে সার্বজনীন মহাশক্তি
তারই হাতে বিশ্বনিখিল, হায়াত-মউত, মানবতা।
রুবাই ০৪:
ইচ্ছে আমার জায়নামাজে তসবিহ্ হাতে রই বিভোর
পাককালামে পাখির মতো হর-হামেশা হই মুখর
কিন্তু আমায় এই পৃথিবী আঁকড়ে রাখে আষ্টে-পৃষ্ঠে
ব্যস্ত থাকি অর্থ-বিত্ত, লোভ-লালসা, ভুড়ি পুজোর।

রুবাই ০৫:
নামাজ রোজা হজ্জ্ব ও যাকাত আসবে না তোর কোনো কাজে
জিন্দেগানির কর্মকাণ্ডে ঈমান যদি থাকে বাজে
সবার আগে থাকতে হবে স্বচ্ছ ঈমান নিয়ত ভালো
তা না হলে বেহেশতি সুখ দিনের শেষে জুটবে না যে।

রুবাই ০৬:
ভঙবে খেলা সন্ধ্যাবেলা আঁধার যখন আসবে নেমেে
আমোদ-ফুর্তি, বিত্ত-বিলাস, দিন ফুরোলে যাবে থেমে
যখন তোমার ফিরবে চেতন বন্ধ হবে ঘড়ির কাঁটা
সময় তোমার যাচ্ছে চলে মগ্ন হবার খোদার প্রেমে।

রুবাই ০৭:
আমার অনেক ভ্রান্তি ছিল অনেক ছিল অবহেলা
জানি তুমি করছো খেলা আমার সাথে সারাবেলা
কোনটি তোমার পন্থা সঠিক সবই তোমার জানা ছিল
বোঝা কঠিন আদ্যপান্ত প্রভু তোমার লীলাখেলা।

রুবাই ০৮:
অর্থ-বিত্ত, দামী আসবাব, বিলাসিতার মূল্য কী যে
আমাদের এই জিন্দেগানী একটু ভাবো সবই মিছেে
একটুখানি পরমোল্লাস, একটু সুখের গল্প শেষে
সাঙ্গ হবে জীবন খেলা সকল কিছু রবে পিছে।

রুবাই ০৯:
অথই সাগর মাঝে আমি ধরে আছে অক্টেপাসে
ভাবছি কখন আসবে তুমি ত্রাতা হয়ে আমার পাশে
সন্ধ্যাবেলায় বুঝছি আমি তুমি ছাড়া আর কেহ নাই
গহীন রাতে তোমার আশীষ থাকে যেন আমার পাশে।

রুবাই ১০:
দৃষ্টি আমার যে দিকে যায় দূর দিগন্তে যত দূর
দেখি তোমার দানের বহর আকাশ জমিন অন্তঃপুর
চোখ থাকিতে অন্ধ যারা পায় না তারা সে সব খোঁজ
তবুও তোমার রহমতের দান খোঁজে না নিকট দূর।

রুবাই ১১:
ইচ্ছে হলেই আয়েশ করে খায়েশ মিটাও তোমরা জানি
হয়তো ভাবো এমনি করেই সাঙ্গ হবে জিন্দেগানী
কিন্তু যেদিন দিন ফুরোবে সাঙ্গ হবে পান্থশালা
সঙ্গি শুধু হবে তোমার নামাজ রোজা পাপের ঘাণি।

রুবাই ১২:
আকাশ ভরা চন্দ্র তারা সাগর ভরা নোনাজল
মায়ায় ভরা এই ধরণী জীবন ভরা কোলাহল
সময় হলে সাঙ্গ হবে এই পৃথিবীর আয়োজন
সৃষ্টি সবই আল্লাহ পাকের দয়ায় ভাসা শতদল। 

রুবাই ১৩:
নামাজিরা ভয় করো না পার হতে ঐ পুলসেরাত
আল্লাহ পাকের দিদার পেতে নিত্য জপে দোয়া কেরাত
হয়তো তারা জিন্দেগিতে পায় না খ্যাতি, বিত্ত-বিলাস
রোজ হাশরে ঠিকই তারা প্রাপ্ত হবে প্রভুর নাজাত।

রুবাই ১৪:
খোরমা খেজুর মরু-প্রান্তর মক্কা শরীফ মনের মাঝে
দিবানিশি খুঁজেফিরি মন বসে না কোনো কাজে
হেরা গুহা কা’বা শরীফ ধ্যানে-জ্ঞানে রেখে আমি
মুহাম্মদের জন্মভূমি মদিনা যাই নিত্য সাঁঝে।

রুবাই ১৫:
পোষা ময়না, তোলা গয়না, অর্থ-বিত্ত সবই মিছে
জিন্দেগানির পুজি পাট্টা সবই তোমার রবে মিছেে
আখিরাতের পূণ্য সওদা সঙ্গি শুধু হবে তোমার
মগ্ন হয়ে ভাবো তোমায় কোন জাদুকর পাঠাইয়াছে?

রুবাই ১৬:
প্রভু তুমি আমায় যখন এই দুনিয়ায় মুক্তি দিলে
চোখের জলে হই মুসাফির পাপের পাষাণ চক্ষু মেলে
এখন আমি শারাব নেশায় রুপের নহর লেহন করি
দাও না আবার অধমকে ঠাঁই তোমার ক্ষমার ছায়াতলে।

রুবাই ১৭:
ফোরাত নদীর শীতল হাওয়া মরু-প্রান্তর কারবালাতে
ইমাম হোসেন শহীদ হলেন ইয়াজিদের ভুল খেলাতে
অত্যাচারীর তরবারী শক্তিশালী হোক না যতোই
বিজয় তাহার ঠিকই হলো ইতিহাসের শেষ বেলাতে। 

রুবাই ১৮:
আমার নবী মুহাম্মদের নাম জপিলে শান্তি পাই
খুশবু মাখা নাম জপিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই
শেষ বিচারে পুলসেরাতে রাসুল যেন সহায় হন
তা না হলে কঠিন বিপদ পাপ মোচনে রক্ষা নাই।

রুবাই ১৯:
পাখির কণ্ঠে, ফুলের গন্ধে, নদীর স্রোতে আছেন যিনি 
সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাতে আমার সাথে আছেন তিনি
আমি যখন যেখানে যাই সবই তিনি দেখতে যে পান
বেলাশেষে যেতে হবে জেনেও পাপের পাহাড় কিনি।

রুবাই ২০:
যখন ভাবি তুমি ছাড়া আমার তো আর নেই ভরসা
তোমার দিকে ছুটতে থাকি অশ্রুজলের ঝরে বর্ষা
যেতে যেতে মোহের টানে আবার আমি আনমনা হই 
বসলে ধ্যাণে তুমি টানো, বাকি সময় ভুল মোহে রই।

Thursday, March 6, 2025

লিকলিকে মেয়ে ০৬

লিকলিকে মেয়ে ০৬
ই ম রু ল  কা য়ে স
 
লিকলিকে মেয়ে
এবার ফাগুন অন্য রকম; অস্থির ও অপ্রকৃতস্থ
কবি ও কবিতার সংসার খুব একটা ভালো নেই।
তোমার মায়াবী শরীর ও পলল মনন ভালো আছে তো?
 
মান্দারের মগডালে এ বছর শিমুল হাসেনি,
পারুল ফোটেনি চেয়ারম্যান বাড়ির গেটের উপর।
কৃষ্ণচূড়ার এবার এমন কি হলো জানি না;
ঠোঁটে লিপস্টিক মাখতে বেমালুম ভুলে গেছে সে।
যেমন ভুলেছি আমিও;
জন্মদিনে তোমাকে উইশ করতে পারিনি এবার!
হয় তো অবাক হয়েছো,
এমন ভুল 
কি করে করতে পারে কবি? করেছে কখনো?
 
বিশ্বাস করো, ইচ্ছে ছিল এবার তোমার জন্মদিনে
চুয়াল্লিশ নম্বর বাড়ির সামনে মহাসমাবেশ করবো,
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কনসার্ট হবে তোমার নামে।
পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে যাবে পুরো শহর
মঞ্চের পিছনে তোমার ছবি বড় করে সাটানো থাকবে;
তুমি তো জানো, আমার অজস্র ভক্ত আছে এই শহরে
তাদের কেউ হাফপ্যান্ট পরে, কেউ আবার ফুলপ্যান্ট
কারো মাথায় ঝুঁটি আছে, কারো বেণী একটি অথবা দু’টি,
কারো মাথায় মেসি, রোনালদো, নেইমারের মতো হেয়ারকাট।
এবার আমার ভক্তগুলো কেন জানি অন্য রকম!
 
এবার আগস্ট তেইশ ছিল ভিন্ন রকম; স্লোগান-মুখর
মিছিলে মিছিলে ফেরারি বাউল; কুমারি গোলাপ রক্ত ঝরালো
মনন জুড়ে অস্থিরতা, চুয়াল্লিশ নয়, 
সবাই  ছুটলো বত্রিশে।
ভাবনাগুলো বাঁধন-হারা, অন্ধকারে জন্মোৎসব কী করে হয়?
এসব ভেবে কবির মনন ভীষণ ব্যাকুল।

তুমি তো জানো -
কবিরা প্রথম জীবনে বিপ্লবী হয়, পরিনত বয়সে হয় প্রেমিক,
বয়সের সাথে সাথে অস্থিরতা বেড়ে গিয়ে নিঃশ্ব-রিক্ত হয়
আর, শেষ বয়সে মগজে পঁচন লেগে কবি হয় ক্ষমতাহীন দার্শনিক।
আমি এখন কোথায় আছি, কেমন আছি জানি না।

লিকলিকে মেয়ে
এক প্রস্থ প্রশান্ত মনন ও স্বাভাবিক জীবনের জন্য
একখণ্ড সুস্থ্য সমাজ ও কল্যাণময় রাষ্ট্রের জন্য
এদেশে এখন তোমার মতো অসংখ্য প্রেমিকা দরকার।

কিন্তু, তুমি তো এখন বার্মিংহামে ক্যাটবেরি খাচ্ছো!
 
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খুলনা
 

 

 


Friday, February 28, 2025

নীল প্রজাপতি ০১

 

নীল প্রজাপতি ০১
ই ম রু ল  কা য়ে স

রাতজাগা লাল চোখ অভিমানে অকারণে 
রাত্রির সাথে করে সন্ধি,
ঘুমঘোর জানালায় ভ্রুকুটি করে যায় অসুস্থ্য সমাজ,
কবির কষ্টকে কাছে এসে বোঝে না তো কেউ।

শেষরাতে শিশির পতনের মতো নেমে আসে ঘুম
নীল প্রজাপতি চোখের পাপড়িতে এঁকে যায় আল্পনা
‘কবির কল্পনা, সহজ গল্প না’ এই সত্যটুকু 
বোঝে না মানুষ, বোঝে না নীল প্রজাপতিও।

অনাহুত বঞ্চনা, সামাজিক জল্পনার মুখোমুখি হয়ে
কবির কষ্টকে বুকে নেবে, চোখ দু’টো লাল কেন জেনে যাবেে
এমন দরদী বলো এ সময়ে আছে নাকি কেউ।

১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
০২ পৌষ ১৪২২ বঙ্গাব্দ
খুলনা



Thursday, February 27, 2025

নীল প্রজাপতি ০২

 

নীল প্রজাপতি ০২
ই ম রু ল  কা য়ে স

এক নীল প্রজাপতি কৈশোরে ছুঁয়ে গেলো মন। 
যখন তখন পেয়ে তার মায়াবী স্পর্শ
উচাটন মন হয়ে গেলো মধুবন বিহারণী হরিণী।

যখন ইচ্ছে, যেমন ইচ্ছে তার
যৌবনে, সুগন্ধি মৌবনে, এঁকে গেলো বসন্ত আল্পনা,
স্পর্শে তার পূষ্পে পূষ্পে ভরে গেলো মননকুঞ্জ।
চারিদিকে তখন উড়ুউড়ু রঙিন স্বপ্নোৎসব
সাফল্যের জয়োযাত্রায় তখন আমি দিগ্বিজয়ী মহানায়ক।

সেই চেনা হৃদয়হীনা নীল প্রজাপতি
পরিনত যৌবনে হারিয়েছে বসন্ত বিহারে।
এখন আমি স্বপ্নহীন, ছন্দহীন এক তৃষিত চাতক।

নীল প্রজাপতিরা এভাবেই কাছে আসে, এভাবেই দূরে চলে যায়,
ভেঙ্গে যায় অজস্র সাজানো স্বপ্নপ্রাসাদ।
দুমড়ানো, মোচড়ানো দেবদাস স্বপ্নগুলো 
সাজাতে সাজাতে, আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত, যন্ত্রমানব।
জীবন সাজাচ্ছি, শুধুই সাজাচ্ছি, সাজিয়েই যাচ্ছি...

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ খ্রিস্টাব্দ
২০ মাঘ ১৪২২ বঙ্গাব্দ
খুলনা

Wednesday, February 26, 2025

অতিথি পাখি

 

অতিথি পাখি
ই ম রু ল  কা য়ে স

নতুন পথের দিশা আঁচলে তোমার মায়াবতী
ওড়নার ভাজে ভাজে স্বপের ঝাঁড়বাতি জ্বেলে
শীতের উষ্ণতায় হয়েছিলে এক টুকরো ওম। ঝরাপাতার মিছিলে
নদীর মতো তুমিও মিশে যাবে সাগরের নীলিমায়।

ইদানীং ভালোবাসা কর্পুরের মতো মনে হয়।
শরীরের ঘ্রাণের মতো হাওয়ায় ভেসে যাবে তোমার ভালোবাসাও
রাতের অমানিশায় বুকের কার্ণিশে মাথা গোঁজে অতিথি পাখি;
তন্দ্রা ফেরি করে কেবলই উড়ে বেড়ায় বাসন্তী হাওয়ায়।

১০ নভেম্বর ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ
২৫ কার্তিক ১৪২০ বঙ্গাব্দ
খুলনা

Monday, September 23, 2024

অপেক্ষা

 

অপেক্ষা
ই ম রু ল কা য়ে স
মাঘের হিমবাহ শেষে এলো ফাগুন, এলো বসন্ত
বসন্তের আগমনে পুষ্পে পুষ্পে ভরে গেলো বিষন্ন প্রকৃতি;
প্রজাপতি রঙ ছড়ালো, ফিরে এলো মৌ মুখরিত মধুকর
তবু, তুমি এলে না।
চৈত্রের দাবদাহ শেষে এলো বৈশাখ, এলো বর্ষা
বর্ষার সতেজতায় সবুজের আল্পনা আঁকা হলো;
পুষ্প-পল্লবহীন মায়াবৃক্ষে ফিরে এলো প্রমত্ত যৌবন
তবু, তুমি এলে না।
নবগঙ্গার টলমল জলে কিশোরী পা দু’টো ভিজালো না
শরৎ অপরাহ্নে নিঃষ্পাপ দু'টি ছায়া পাশাপাশি বসলো না
অনেকগুলো অভিমানী বছর নিঃষ্ফল ঝরে যাবার পর
সফেদ পাঞ্জাবি পরে আবার ফিরে এলো শূভ্র শরৎ।
কবিতা- তোমাকে এখন ভীষণ মনে পড়ছে!
গ্রীষ্ম গেলো, বর্ষা ফুরালো শীতের মতোই, এখন শরৎ।
যদি চাও দেখা হতে পারে নবগঙ্গা তীরে;
পুরনো সেই পাখি ডাকা, ফলে ঢাকা
স্মৃতিময় কাশফুলে ঠাসা, চেনা বালুচরে।

Friday, September 13, 2024

কাবেদুল ইসলাম এর কবিতায় প্রকৃতি

 

কাবেদুল ইসলাম এর কবিতায় প্রকৃতি
ই ম রু ল কা য়ে স
"সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি"০১ - কবি জীবনানন্দ দাশের এই প্রমিত সুন্দর শিল্পতত্বের নিরিখে কবি ও কবিতার মানদণ্ড নিরুপন করা বড়ই দুরুহ। মোটা কথায় বলতে গেলে, যারা কবিতা লেখেন তাদেরকে আমরা ‘কবি’ বলে থাকি, আর একজন কবি সাধারণতঃ যা লিখে থাকেন তাই ‘কবিতা’। কিন্তু একজন কবির লেখা ছন্দোময় মনোমুগ্ধকর রসাত্মক পঙক্তিমালা কবিতার শিল্পগুণ বিচারে কতোটা উত্তীর্ণ কিম্বা কবিতার লেখক তার শিল্পসত্ত্বার বিচারে কতোটা পারঙ্গম তা নিয়ে ঢের বিতর্ক হতে পারে।
"কে যেন ভিতোর থেকে আমাকে দিয়ে কবিতা লিখিয়ে নেয়।"০২ কবি কাবেদুল ইসলাম তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ তোমার জন্যে কবিতার ভূমিকায় নিজেই স্বীকার করেছেন এই কবিতার গুঢ়তত্ত্ব। কবিতা সম্পর্কে কবির একান্ত ব্যক্তিগত ও অকপট এই উচ্চারণ কবিতার অর্থ ও চরিত্র নির্ধারণে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ - এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। একই পরম্পরায় তিনি বলেছেন-
“... কবিতা বলতে আমি বুঝি স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ, উজ্জ্বল, দৃঢ় এক জীবনসত্যের মহৎ মন্ত্রোচ্চারণ, যা কবির রক্ত ও স্বেদ, হৃদয় ও মনন, অভিজ্ঞতা ও বোধি থেকে উৎজাত। ফলে কবিতা যা বলেন, তা মূলতঃ কবির মননে-মানসে ও জীবনচর্চায় পূর্বেই আলোড়িত, চর্চিত, প্রতিফলিত। এই অর্থে আমার কাছে কবিতা তাই-ই যা জীবন, তা-ই জীবন যা কবিতা।” ০৩
মূলতঃ কবিতা হলো শব্দে ও ছন্দে আবেগের স্বতঃস্ফুর্ত বহিঃপ্রকাশ; ছন্দেময় রসসিক্ত পঙক্তিমালা। সাহিত্যের সবচেয়ে ঘন, জীবনসম্পৃক্ত, শিল্পসমৃদ্ধ ও রসাত্মক শিল্পবিভাজনের সবচেয়ে জনপ্রিয় নামটিই কবিতা। কবিতার ফেরিওয়ালা কাবেদুল ইসলামও একজন কবি; মূলতঃ রোমান্টিক কবি। আধুনিকতা ও রোমান্টিকতার সমন্বিত যোগসূত্রে, যুগল স্রোততরঙ্গে তিনি তার কবিতায় লাগিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন মাধূর্যের প্রলেপ। বলাবাহুল্য, প্রেম ও প্রকৃতি সেখানে শক্তিশালী ও অপরিহার্য এবং এক অপরের সম্পুরক অনুষঙ্গ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘সাহিত্যের পথে’ প্রবন্ধে লিখেছেন- “আধুনিকতা হলো প্রবাহমান নদীর সুস্পষ্ট শেষবাঁক।”০৪ আমাদের সাহিত্যের চিরন্তন প্রবাহমানতায় কাবেদুল ইসলামের কবিতাও রয়ে যাবে স্বমহিমায়। প্রবাহমান স্রোতস্বিনীর সুস্পষ্ট বাঁক অতিক্রম করে আধুনিকতার সিঁড়িতে তার কবিতার শিল্পাসন কোথায় হবে সেটা গবেষণার বিষয়। কিন্তু আজকের প্রসঙ্গ ভিন্ন; বিশেষ লক্ষ্য অভিমুখে সত্য উৎঘাটনের শৈল্পিক অন্বেষণ ছাড়া লেখকের বাইরে পরিক্রমণের সুযোগ নেই।
বলাবাহুল্য, শিরোনামের মধ্যেই স্পষ্ট রয়েছে আমাদের আজকের প্রসঙ্গ; ‘কাবেদুল ইসলামের কবিতায় প্রকৃতি’। লক্ষ্যের শেষপ্রান্তে পৌঁছতে আমাদেরকে অবশ্যই কয়েকটি শব্দ; যেমন প্রকৃতি, কবি ও কবিতা, কাবেদুল ইসলামের কবিসত্বা ও তার কবিতার স্বরুপ বিশ্লেষণ করা দরকার।
কবি কাবেদুল ইসলামের জন্ম খুলনা শহরে। শৈশব ও কৈশোরের বিচরণক্ষেত্র এই শহরের ফেরিঘাট, শেখপাড়া, তারের পকুর ও বানরগাঁতী এলাকা। বাবা শেখ জোয়াদ আলী এবং মা আনোয়ারা আলীর মধ্যবিত্ত¡ সংসারে তিনি তৃতীয় সন্তান। সঙ্গতকারণে তার লেখালেখিতে মধ্যবিত্ত; ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, সংসারের ভিতোর ও বাহিরের পরিবেশ-প্রতিবেশ, মানবপ্রেম, প্রেমের গতিপথে গেঁথে থাকা চিরন্তন প্রতিবন্ধকতা, বিরহ, মননস্পর্শিত সমসাময়িক বিষয়াবলী, দ্রোহ, মিলন ও সাম্যবাদের অনুরণন এবং প্রকৃতি ও প্রাকৃতজ উপাদান অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। স্পষ্টতঃ আমাদের আজকের অনুষঙ্গ তার কবিতা; প্রকৃতি কীভাবে তার কবিমানসকে সংক্রমিত করেছে; কীভাবে তার সংক্রমিত অন্তর্জগৎ ও কবিতার শরীর বিনির্মাণে প্রকৃতি অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে তার স্বরুপ বিশ্লেষণ করা।
এক.
‘নৈশব্দের কালবেলা’; কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল: মে ১৯৮৭ খ্রি.। প্রকাশক শেখ আবদুল কাদের। খুলনা থেকে প্রকাশিত।
কবির অন্তর্জগত নিঃসৃত, প্রগাঢ় বিরহমিশ্রিত নৈরাশ্যবোধ ও মিলনের সুতীব্র অগ্নিআকাঙ্ক্ষার তুমুল বজ্জ্রবৃষ্টিপাত এই গ্রন্থখানির কবিতার শারীরিক অবয়বকে করেছে মহিমান্বিত। স্বতঃস্ফুর্ত আবেগের অকপট ও সাবলীল বহিঃপ্রকাশ কবির কবিসত্ত্বাকে দিযেছে নিজস্বতা; স্বতন্ত্র রচনাশৈলী ও ব্যক্তিনির্মিত উপমার ছড়াছড়িতে গ্রন্থখানি অনন্য।
‘নীলার কাছে শেষ চিঠি’ কবিতাটি কবির সীমাহীন বিরহবোধ ও নিসঃঙ্গতার পোড়াকষ্টের ধোয়ায় আচ্ছন্ন। শরৎচন্দ্রের দেবদাসের মতো উদাসীন, ভাবলেশহীন ও বিষন্নতাভরা এক জীবনের খণ্ডচিত্র প্রকাশ পেয়েছে কবিচরিত্রে। নীলাকে সম্বোধন করে কবির অনুযোগ-
            “দূরে সবুজাভ লোকালয়, গাছ্গাছালির মায়া,
            আমরা এখানে নিরালায় দু’জনে একান্ত পাশে,
            আদি মানবী তুমি আবক্ষ নগ্ন, ঘাসে গেছ মিশে,
            আমি নিঃশ্বাসে তোমার ঘিরে আছি বুনো কায়া।
            সেই ঝিল- টলটলে জল-কাকের গভীর চোখ,
            ওপাশে কড়ুই শাখে সিক্ত শিশিরে পাখির বাসা,
            ঘাসের হলুদ ফুলে ফড়িংগুলো জড়াজড়ি করে,” ০৭
কবির কাছে প্রকৃতি মানে অফুরন্ত প্রশান্তির সরোবর। নৈসর্গিক প্রশান্তির কাছে কবির বারবার ফিরে যাওয়া, বারবার কাছে যাওয়া এবং চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের ফলে কবিতার শব্দচয়নে যুক্ত হয়েছে গাছগাছালি, সবুজাভ লোকালয়, সবুজ ঘাস, বুনো কায়া, ঝিল- টলটলে জল, কাকের গভীর চোখ, কড়ুই শাখা, শিশির, পাখির বাসা, ঘাসের হলুদ ফুল, ঘাসফড়িং ইত্যাদি শব্দসমুহ। এই শব্দসমুহের ব্যবহার কবিতার শরীরে খুবই সাবলীল ও অপরিহার্য; কোনো একটি শব্দকে সরিয়ে নিলে খসে পড়বে কবিতার সমগ্র শরীরপ্রাসাদ।
‘কবেকার প্রাচীন অসুখ’ কবিতায় কবি এক ধরণের মানবিক অসুখে ভোগার কথা উল্লেখ করেছেন। শরীরের ভিতোর অসুখের বিস্তারের সাথে কবি বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা বিস্তারের বিষয়টি উপমিত করেছেন। ইংরেজ কবি Robert Frost তার ‘Tree at My Window’ কবিতায় জানালার পাশে থাকা গাছটির সাথে তার নিজের জীবনের রূঢ় অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন- “Your head is too much concerned with outer,/Mine with inner, weather.” 08 একইভাবে, কবি কাবেদুল ইসলামও নিঃস্ব প্রবীণ বৃক্ষের সাথে তার ব্যক্তি জীবনের কষ্টের অনুভূতি ভাগাভাগি করেছেন-
            “এই শ্রাবণের ঝরঝর বৃষ্টিত চিত্রল দিন
            এই অনিঃশেষ বেদনার একাকী নিঃসঙ্গ রাত,
            হিমদীর্ণ অন্ধকার ক্লান্তিতে শীর্ণ নিঃস্ব প্রবীণ
            বৃক্ষের মতো, আমি তো পারি না আর সুঅভিজাত
            ক্ষয়রোগ নিয়ে বেঁচে থাকতে, আর কতো বসন্ত
            নিঃষ্ফল হবে? সুদীর্ঘ পথ হেঁটে আমি বড়ো ক্লান্ত।” ০৯
দুই.
তোমার জন্যে কবিতা; কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল: জুলাই ১৯৯১ খ্রি.। প্রকাশনা: কথকথা প্রকাশনী। স্থান: বগুড়া।
কবিতার শিল্পগুণ বিচারে, এযাবত প্রকাশিত কবিতার মধ্যে কবির সবচেয়ে মানোত্তীর্ণ এবং সবচেয়ে আবেগময় শক্তিশালী কবিতার বসতি এই কাব্যগ্রন্থে।
এই গ্রন্থের অন্যতম কবিতা- ‘গন্তব্য এখন। তখনকার নোংরা সমাজ, দুঃখী লোকালয় ও চারপাশের মানুষের হিংসা-দ্বেষ কবির অন্তর্জগতকে ভীষণভাবে ব্যথিত করে। চরম নৈরাশ্যবোধের ভাবনা থেকে তিনি মুক্তি পেতে চান; সর্বস্ব বিকিয়ে কবি প্রকৃতির কোলে আশ্রয় পেতে চান। প্রকৃতিআশ্রিত কবির আকুতি-
            `এখন ইচ্ছে করে চ’লে যাই সুদূর কোনো কোলাহলহীন দ্বীপে
            চারিদিকে যার আকাশ-নীলিমা, সমুদ্রের জলের প্রহার
            সুগন্ধ জড়ানো সবুজ বাতাস যেনো শুয়ে আছে
            প্রতীক্ষায় উপোষী রমণীর যুগল প্রজাপতির চোখের ভিতোর’১০
এখানে, প্রকৃতিকে কবি মানসিক যন্ত্রণার গ্রাস থেকে আত্মত্রাণের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যেভাবে, একইসুরে ইংরেজ কবি William Wordsworth তার ‘Tintern Abbey’ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন-
            “Nature never did betray/The heart that loved her…” 11
একইভাবে, ‘অনাগত শিশুর প্রতি’- কবিতায় কবি ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের প্রতি বিষোদগার করেছেন। একটি স্বপ্নময় সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশা করে কবি তার অনাগত শিশুর প্রতি আহ্বান রেখেছেন-
            ‘তুমি আসছো, বাংলাদেশ নামের একদা উজ্জ্বল সবুজ এক ভূখণ্ডে
            তুমি আসছো এখানে
            একদা যেখানে ছিল
            পাখির ছোট বুকের মতো নরম সবুজ ঘাস
            চোখের সামনে খোলা আকাশ, কয়েকটা চিল, কবুতর
            অজানা বুনো ফুলের মতো নদীর জলের নোনা গন্ধ’১২
এখানে, প্রেমিকাসদৃশ প্রকৃতির অবক্ষয়ে কবির প্রেমসত্ত্বা দারুণভাবে মর্মাহত হয়েছে। ইংরেজ কবি পার্সি বিশি শেলীর মতো তিনিও প্রথাগত, ক্ষয়ে যাওয়া সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে নতুন এক সম্ভাবনাময় সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছেন।
‘তোমার জন্যে কবিতা’- কবিতাটির শিরোনামকেই এই গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে। এই কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্যময়তায় কবির সপ্রশংস মুগ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু, তাবৎ মুগ্ধতা দু’হাতে সরিয়ে, পিছনে ফেলে, প্রেমিকার শুভ্র শরীর সরোবরে তিনি নিমেষেই ডুবে যেতে পারেন। কবির অকপট স্বীকারোক্তি-
            “চিলেকোঠার ঘুলঘুলিতে রোদ,
            কার্ণিশে শর্সে ফুলের মতো হলুদ চড়ুই
            রমণীর সিঁথির মতো দূরের পিঙ্গল নদী
            এসব কিছু ছেড়ে চ’লে যেতে পারি যদি তোমাকে পাওয়ার
            এতোটুকু নিশ্চয়তা পাই।”১৩
কবি অকপটে ঘোষণা করেছেন “এই পৃথিবী শুধুমাত্র তাদের জন্য এবং পাখি ও প্রজাপতির জন্য। হরিণীদের জন্য অরণ্য, হৃদয়ের জন্য প্রেম এবং বৃষ্টির জন্য মৃত্তিকা।” ফলে, কবি, প্রকৃতি ও প্রেমিকা এই কবিতার ত্রিমাত্রিক অপরিহার্য অনুষঙ্গ।
‘পৃথিবী জোড়া বৃষ্ঠিতে’ বৃষ্টির সাথে কবির আজন্মের আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে। বৃষ্টির মাধ্যমে প্রকৃতি জীবন ফিরে পায়, পরিশুদ্ধতা আসে। জীবনের পরিশুদ্ধতা আনয়ণে কবি তার প্রেমিকাকে আহ্বান করেছেন-
            “অতএব অভিমানী নারী, উত্তর জানালা খুলে দাও
            কার্ণিসের উপর পড়ুক তুমুল বৃষ্টিপাত
            দুধের সরের মতো বৃষ্টি বিষন্ন পৃথিবী জুড়ে থৈ থৈ
            ভেসে যাক মাঠঘাট আর বাড়ীঘর অনন্তের জলের খেয়ায়
            ভেসে যাক সোনালি গমের ক্ষেত, নিশ্চুপ অন্ধকার অলক্ষ্যে
            ধুঁয়ে যাক নর আর নারীদের হৃদয়ের শরীরের পাপ” ১৪
তিন.
অলৌকিক সনেটগুচ্ছে; কবির তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল: জুন ২০০২ খ্রিস্টাব্দ। প্রকাশনা: কথকথা প্রকাশনী। স্থান: খুলনা। ব্যাক কভারে কবির জীবনী বর্ণনায় গ্রন্থের প্রকাশিকা পারভীন ইসলাম শিমুর (যিনি কবির সহধর্মিনী) সরল স্বীকারোক্তি-
“... স্বভবতই এ অঞ্চলের(খুলনাঞ্চলের) নিবিড় সবুজ প্রকৃতি, শস্যশ্যামল ক্ষেত্র, পানের বরোজ, জলবন্দি জনপদ, ধুসর জোয়ারের নদী, অন্ধকার ঝোপঝাড়, বাঁশবনে নিশিরাতের জোছনা-- সবকিছুই তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। অনিবার্যভাবে এসব তাঁর কবিতায় সুচারুরূপে ফুটে উঠেছে।” ১৫
‘ফিরে চাই বাউড়ি বাতাস’ শিরোনামের সনেটে প্রকৃতির সাথে কবির লেপ্টে থাকা জীবনের আটপৌরে সম্পর্কের শাব্দিক চিত্রকল্প স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। যেখানে কবির পিছনে পড়ে আছে-
            ‘‘... চিহ্নহীন জনপদ।
            কাক-মরা গ্রাম, চষাক্ষেত, শস্যের শূণ্য বসন,
            কাল স্রোতস্বিনী পদ্মার নিরিবিলি বয়েসী ভাঙন;
            ... গাঢ় সবুজ টেনে নিয়ে যায় কাছাকাছি
            অরণ্যের মধ্যিখানে। গৃহস্থের নিকোনো উঠোন,
            লাউডগা ঝুলে থাকে, বনরাজিনীলা গৃহকোণ;
            সেই সব শূণ্যতায় বড়বেশী জীর্ণ হয়ে আছি। ” ১৬
প্রকৃতির সাথে কবির অছেদ্য সম্পর্কের কারণে তিনি প্রকৃতির কাছেই চেয়েছেন বেঁচে থাকার অনুষঙ্গ, মৃত্যুর কাছাকাছি যাওয়ার শক্তি এবং সেখান থেকে ফিরে আসার মূলমন্ত্র-
            “আবারও জাহাজের পালে চাই বাউড়ি বাতাস
            ক্ষিপ্রগামী গাংচিল, মুখোমুখি নদী খোলামেলা,
            হাঙরের অন্ধকার অস্থির স্তুপ, পুরোনা মাস,
            অনুকূল নোনাপানি। সমুদ্রের গহিন সুরেলা
            ডাক নিয়ে যাবে মৃত্যু আর জীবনের কাছে ফের,
            শেখাবে যুদ্ধ, মৃত্যুতে বাঁচার মন্ত্র ঢের।” ১৭
জীবন মানেই মৃত্যু অনিবার্য - এই চিরন্তন সত্যটুকু কবি তার প্রিয়তমাকে স্মরণ করিয়ে মিলনের অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন। মানবপ্রেম ও প্রকৃতিপ্রেমের সাথে সুস্পষ্ট যোগসূত্র নির্মিত হয়েছে এই কবিতায়, যেখানে জীবনের সাথে বিচ্ছেদ মানেই চিরচেনা পরিবেশ-প্রতিবেশ ও প্রকৃতির সাথে চূড়ান্ত ছাড়াছাড়ি। আবহমান সনেটের অষ্টকে তিনি ‘ছেড়ে যাবো’ মানে জীবনের সাথে লেপ্টে থাকা পারিপার্শিকতার বাহুবন্ধন থেকে হারিয়ে যাবেন বোঝাতে চেয়েছেন-
            “একদিন নিশ্চয়ই ছেড়ে যাবো এই রূপবতী
            দেশ, সোনালি শস্যের ক্ষেত, বনভূমি, গাছপালা,
            মানুষের চেনাজানা গৃহস্থালি, উঠোন, গো-শালা,
            প্রিয়তম স্বজনের গহিন কালো চোখের জ্যোতি।
            শ্রাবণের কাজল বর্ষা, জলবতী মেঘের পাহাড়,
            সারাদিন রিমঝিম আশ্চর্য ভেজাবে পথঘাট, ”১৮
‘সারেং, চলো ফিরে যাই’ কবিতায় জীবনের সওদা নিয়ে বন্দরে বন্দরে নোঙ্গর ফেলা সারেং গৃহের টানে ভীষণ কাতর। প্রাণে প্রাণে ভালোবাসার সওদা ফেরি করা কবিও একসময় জাহাজের সারেং এর মতো চরম ব্যাকুলতা অনুভব করেন; ফিরে যেতে চায় আপন নীড়ে- উত্তর থেকে দক্ষিণে, আরো দক্ষিণে-
            “... যেখানে গৃহস্থের নিকোনো উঠোন
            শিমের মাচান, লাউডগা, সুপোরির কালো বন,
            লাল-পেড়ে শাড়িপরা বধূ রস জানালায় উনুনে;
            সোঁদাগন্ধ মাটি, কলমির বুকের নওলা ‘ওম’,
            ডাহুকের ডাক, কোড়া কালিমের ছানা, বক, লোম-
            ওঠা কুকুরের-শেয়ালের হল্লা, ভোরের স্নিগ্ধতা।” ১৯


তথ্যসুত্র:
০১. জীবনান্দ দাশ/কবিতার কথা, পৃষ্ঠা: ১০, লাইন: ০১
০২. কাবেদুল ইসলাম/তোমার জন্যে কবিতা, ভূমিকা: লাইন ০২-০৩
০৩. কাবেদুল ইসলাম/তোমার জন্যে কবিতা, ভূমিকা: লাইন ১৭-২১
০৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/সাহিত্যের পথে, পৃষ্ঠা: ৪৮, লাইন: ?
০৫. কাবেদুল ইসলাম/নৈঃশব্দের কালবেলা, লাইন: ২৭-৩১
০৬. কাবেদুল ইসলাম/নৈঃশব্দের কালবেলা, লাইন: ৩৫-৩৮
০৭. কাবেদুল ইসলাম/নৈঃশব্দের কালবেলা, লাইন: ০৫-১১
০৮. Robert Frost/Tree at My Window, Line: 15-16
০৯. কাবেদুল ইসলাম/নৈঃশব্দের কালবেলা: লাইন: ০৯-১৪
১০. তোমার জন্যে কবিতা, গন্তব্য এখন, লাইন: ১৭-২০
১১. William Wordsworth/Tintern Abbey, Line: 15-16
১২. তোমার জন্যে কবিতা, অনাগত শিশুর প্রতি, লাইন: ০২-০৭
১৩. Percy Bysshe Shelley/Ode to the West Wind
১৪. তোমার জন্যে কবিতা, তোমার জন্যে কবিতা, লাইন: ০৫-০৯
১৫. তোমার জন্যে কবিতা, পৃথিবী জোড়া বৃষ্টি, লাইন ০৯-১৪
১৬. কাবেদুল ইসলাম/অলৌকিক সনেটগুচ্ছ, কবি-পরিচিতি: লাইন ০২-০৫
১৭. অলৌকিক সনেটগুচ্ছ, ফিরে চাই বাউড়ি বাতাস, লাইন ০১-০৮
১৮. অলৌকিক সনেটগুচ্ছ, ফিরে চাই বাউড়ি বাতাস, লাইন ০৯-১৪
১৯. অলৌকিক সনেটগুচ্ছ, আবহমান, লাইন ০১-০৬
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি:
০১. কাবেদুল ইসলাম/নৈঃশব্দের কালবেলা, ১ম সংস্করণ, মে ১৯৮৭ খ্রি.। প্রকাশক শেখ আবদুল কাদের, খুলনা
০২. কাবেদুল ইসলাম/তোমার জন্যে কবিতা, ১ম সংস্করণ, জুলাই ১৯৯১ খ্রি.। কথকথা প্রকাশনী, বগুড়া
০৩. কাবেদুল ইসলাম/অলৌকিক সনেটগুচ্ছ, ১ম সংস্করণ, জুন ২০০২ খ্রি.। কথকথা প্রকাশনী, খুলনা
০৪. কাবেদুল ইসলাম/অন্তর্গত দ্বৈরথ, ১ম সংস্করণ, জুন ২০০২ খ্রি.। কথকথা প্রকাশনী, খুলনা
০৫. কাবেদুল ইসলাম/আধুনিক বাংলা কাব্যপাঠের ভূমিকা, ১ম (জয়তী) সংস্করণ, এপ্রিল ২০১১ খ্রি., জয়তী প্রকাশনী, ঢাকা
০৬. জীবনানন্দ দাশ/কবিতার কথা, ২য় (বিশ^সাহিত্য কেন্দ্র) সংস্করণ, মে ২০১২ খ্রি., বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রকাশনা, ঢাকা
০৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/সাহিত্যের পথে, ১ম(কবি প্রকাশনী) সংস্করণ, মে ১৯৮৭ খ্রি., কবি প্রকাশনী, ঢাকা
08. Percy Bysshe Shelley/Selected Poems, 5th Edition, 1995, Unique Publishers, New Delhi
09. Robert Frost/Selected Poems, 12th Edition, 2011, Unique Publishers, New Delhi.
10. William Wordsworth/Selected Poems, 8th Edition, 1998, Unique Publishers, New Delhi.

Saturday, July 27, 2024

মননতটে মোহন বৃষ্টি

 

মননতটে মোহন বৃষ্টি

চোখের কোণে মেঘ জমেছে, বৃষ্টি হবে?
বৃষ্টি হলো দ্রোহানলে জ্বলতে থাকা মেঘের কষ্ট।
বৃষ্টি হবে? বৃষ্টি?
মনাত্বরে, মননতটে, মোহন বৃষ্টি?

কষ্টগুলো মেঘের মতোন, কষ্ট হবে?
ব্যথার তোড়ে ঝরে পড়ে চোখে জলে।
কষ্ট হবে? কষ্ট?
চোখেরতটে ব্যথার পলল, নীলকষ্ট?

দুঃখগুলো বারিধারা, দুঃখ হবে?
বরফ হয়ে ঝরে পড়ে, হিংসাঘাতে, বজ্জ্রপাতে
দুঃখ হবে? দুঃখ?
গহনমনে পুঞ্জিভূত পোষা কষ্ট?

১৯ অক্টোবর ২০১৮ খ্রি.
০৪ কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
খুলনা


Friday, February 23, 2024

চেতনার ফুল

 

চেতনার ফুল
ই ম রু ল কা য়ে স
এই দুরন্ত ফাগুনে, বাঙালির মননে মননে
ভালোবাসার রঙ মাখানো অজস্র বর্ণিল ফুল ফুটুক।
অহঙ্কারী শিমুল, অভিমানী পারুল আর কুমারী গোলাপ
এক হয়ে মিশে যাক কৃষ্ণচূড়ার মিছিলে মিছিলে।
মননের বিমুগ্ধ বারান্দায়, মৌ মৌ সুগন্ধি ফুলগুলো
মেতে উঠুক ফাগুনের এই দুরন্ত মিষ্টি হাওয়াও।
কষ্ট ভুলে দুলে উঠুক লাল টকটকে পাপড়ি
সুমিষ্ট ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ুক আকাশে-বাতাসে।
একটি লাল টকটকে চেতনার ফুল ফুটুক
নতুন প্রজন্মের মগজে-মননে
হৃদয়ের এক চিলতে উঠোনে, নিঃষ্পাপ কোমল যত্নে
রোপিত হোক চেতনার বীজ, অঙ্কুরিত হোক চারাগাছ,
সৌরভে, গৌরবে বেঁচে থাকুক অনন্তকাল।
অজস্র চেতনার ফুল ফুটুক, হৃদয়ে, হৃদয়ে।
সালামের অব্যক্ত কথামালা, জব্বারের শেষ অশ্রুফোঁটা
রফিকের রক্তের বুদবুদ, শফিকের সোনালি স্বপ্ন
আর বরকতের বুকফাঁটা কষ্টের আর্তনাদ
আষ্টে-পৃষ্ঠে লেগে থাকুক তাাতে...

Sunday, January 28, 2024

আমার যদি থাকতো ডানা


আমার যদি থাকতো ডানা

ই ম রু ল  কা য়ে স

আমার যদি পাখির মতো থাকতো ডানা পালকের
যেতাম উড়ে অনেক দূরে উৎসমূলে আলোকের।

দূর আকাশে যেতাম উড়ে মন পবনে দিয়ে ভর
চন্দ্রদীপে ঘর বানিয়ে যেতাম থেকে জীবন ভর।

যখন খুশি ইচ্ছে মতো দিতাম শরীর ভাসিয়ে
মস্ত বড় এই জীবনের দুঃখগুলো নাশিয়ে।

কল্পলোকের স্বর্গ ভুলে ফিরতে হবে তবু যে
বাংলাদেশের পাহাড়-নদী ফসলের ক্ষেত সবুজে।

০২ মে ২০০৯
১৯ বৈশাখ ১৪১৬ বঙ্গাব্দ
খুলনা

Friday, January 26, 2024

ছড়া খুব কড়া


ছড়া খুব কড়া
ই ম রু ল  কা য়ে স

ছড়া খুব কড়া ভাই চাও যদি শিখতে
প্রথমেই যেতে হবে ছন্দটা শিখতে।

তারপর ভারী চাই শব্দের ঝোলাটা
তাল লয় ঠিক রেখে চাই হাত খোলাটা।

পঙক্তিতে হবে ভাই মাত্রা গুনতে
চরণের শেষে মিল রাখা চাই বুনতে।

এই ভাবে চোখ কান খোলা রেখে চর্চা
করে গেলে পেয়ে যাবে ভালো ছড়ার  পর্চা।

৩ মে ২০০৯ খ্রি.
২০ বৈশাখ ১৪১৬ বঙ্গাব্দ
খুলনা

হাত কড়া

 

হাত কড়া
(গৃহপরিচারিকা নির্যাতন বিষয়ক নাটিকা)
ই ম রু ল  কা য়ে স

চরিত্রসমুহ:
সালাম সাহেব: কলেজ শিক্ষক
বীথি: গৃহিনী
রোজি: গৃহপরিচারিকা
সাহেদ সাহেব: আইনজীবী, সালাম সাহেবের বন্ধু
ফাতিমা নূর: থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
কনস্টাবল: উর্দি পরিহিত একজ কনস্টাবল 

(সকাল নয়টা। সালাম সাহেব ও তার স্ত্রী ড্রইং রুমে আলাপরত। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠবে... ক্রিং ক্রিং ক্রিং)
সালাম সাহেব: রোজি। এই রোজি।
রোজি: জী আঙ্কেল। কী হইছে?
সালাম সাহেব: দেখতো, কে আসলো? পরিচিত হলে দরোজা খুলবি। নইলে খুলবি না।
রোজি: জী, আইচ্ছা। আমি দেখতাছি।

(লুকিং গ্লাসের ভিতোর দিয়ে লোকটাকে দেখে রোজি দরোজা খুলবে এবং সালাম দিবে। অতঃপর সাহেদ সাহেব ঘরে প্রবেশ করে এবং ড্রইং রুমের দিকে আসবেন।)
সালাম সাহেব: আরে সাহেদ ভাই  যে। গরীবের দরোজায় হািতীর পাড়া দেখছি। ভালো আছেন নিশ্চয়ই? বসেন, বসেন ভাই।
সাহেদ সাহেব: আরে বলেন কী? ভালো না থাকলে এখানে আসলাম কী করে? বীথি ভাবী, আপনি ভালো আছেন তো?
বীথি: হ্যাঁ, ভাই। এই চলছে আর কি! কাজের ছেমড়িটা নিয়ে বিশাল যন্ত্রণায় আছি, ভাই।
সাহেদ সাহেব: কে ভাবী? সে আবার কী করলো?
বীথি: ও আর বলবেন না ভাই। কথা বোঝে না, কাজ বোঝে না। যখন তখন মাল-জিনিস ভাঙ্গে। আমার জীবন একদম অতিষ্ট করে তুললো। একটা মুর্খ, রাবিশ। গ্রাম থেকে ধরে এনেছে আপনার প্রাণের বন্ধু।
সালাম সাহেব: আচ্ছা ! এখন থামো তো। মেহমানের সামনে তুমি এসব কথা তুলছো কেন? নতুন নতুন সবাই একটু একটু ভুল করে। কিছুদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সাহেদ সাহেব: হ্যাঁ, ভাবী। একটু কষ্ট করে কাজগুলো বুঝিয়ে দিন। দেখবেন সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে।
বীথি: আরে, নারে ভাই! ঠিক না ছাঁই হবে। বানরের লেজ কিছুতেই সোজা হয় না। গুনে গুনে আর মাত্র তিন দিন দেখবো। ওকে না তাড়ালে আমি পিটিয়ে ওকে ঘর থেকে বের করে দেবো।

(এমন সময় রোজি ট্রেতে নাস্তা ও শরবতের গ্লাস নিয়ে ড্রইং রুমে ঢুকবে। টেবিলে পরিবেশনের সময় হাত থেকে পড়ে গিয়ে একটি গ্লাস ভেঙে যাবে।)

বীথি: এই জানোয়ারের বাচ্চা, তুই এ কী করলি? আমার দামী গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেললি। তোরে আজ মেরেই ফেলবো।


(রোজিকে চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে বীথি রান্না ঘরে নিয়ে যাবে।খুনতি দিয়ে নির্মমভাবে মারতে থাকবে। দূর থেকে পিটানোর শব্দ ও কান্নার শব্দ ভেসে আসবে।)

সালাম সাহেব: সাহেদ ভাই, আপনি একটু বসেন। আমি আসছি। পরিস্থিতি িএকটু সামাল দিয়ে আসি।
সাহেদ সাহেব: হ্যাঁ, ভাই। আপনি ভিতোরে যান। ভাবীবে বোঝান। পরিস্থিতি সামাল দেন।

(একটু পরে সালাম সাহেব ফিরে আসবে। মারার শব্দও কমে যাবে।)

সালাম সাহেব: আমি যারপর নাই দুঃখিত, সাহেদ ভাই। আপনার ভাবী মাঝে একটু মাত্রাতিরিক্ত করে ফেলে, ভাই।

সাহেদে সাহেব: মেয়েটি কিন্তু খুব একটা অন্যায় করেনি। বড় মানুষের হাত থেকেও তো গ্লাসটা পড়ে ভেঙ্গে যেতে পারতো! তাছাড়া ও তো একনো শিশু।

সালাম সাহেব: আমি খুব লজ্জিত, ভাই।

সাহেদ ভাই: সালাম ভাই, ভাবীবে কিন্তু বোঝাতে হবে। উনি কিন্তু ভুল করে যাচ্ছেন। একটা বড় বিপদে পড়তে পারেন আপনারা। আমি কিন্তু আইনের লোক, আপনাদের সাবধান করে যাচ্ছি। আইন কিন্তু আপনাদের বিপক্ষে যাবে।

সালাম সাহেব: এসব বুছেই তো আপনার ভাবীকে অনবরত বুঝিয়ে যাচ্ছি।

সাহেদ সাহেব: সালাম ভাই, এবার বিদায় চাচ্ছি। আজ আর বসতে পারছি না। আমার একটু তাড়া আছে। অন্য একটি আবার আসবো।

সালাম সাহেব: অবশ্যই আসবেন। ভাবীকে সাথে নিয়ে আসবেন। আর শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন, ভাই।

সাহেদ সাহেব: ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ।

(সালাম সাহেব দরোজা লাগিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করবেন। রান্নাঘরের মেঝেতে শুয়ে রোজি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকবে। ওর ক্ষতস্থানে মলম লাগিয়ে দিয়ে তিনি বীথির ঘরে যাবেন এবং গলার স্বর মোটা করে তিনি বীথিকে বলবেন...)

কাজটা তুমি মোটেই ভালো করোনি, বীথি। ভদ্রতা এবং আইনের সীমা দুটোই তুমি লঙ্ঘন করেছো। আমি ওকে আগামী সপ্তাহে বাড়ীতে রেখে আসবো। ওর গায়ে যেন আর হাত দেওয়া না হয়। আমি কলেজে চলে যাচ্ছি। এবারের মতো সহ্য করলাম।

(সালাম সাহেব ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়ে দ্রুত বের হয়ে যাবেন। কিছুক্ষণ পর বীখি বেড রুম থেকে রান্না ঘরে প্রবেশ করবে।)

বীথি: এই ফকিরের বাচ্চা আমাকে অপমান করে তুই এখনো শয়ে আছিস? থালা বাসন ধোঁবে কে? বাথরুমে একগাদা কাপড়-চোপড় ভেজানো সেগুরো ধোঁবে কে?

রোজি: আমার অনেক লাগছে খালাম্মা। গতরডা ব্যথা করতাছে।আমি তো হাত নাড়াতে পারছি না।খালাম্মা, হু হু হু ...

বীথি: কী বললি! তোর এতো বড় সাহস! এতোগুলো থালা-বাসন, কাপড়-চোপড় ধোঁবে তোর ভাতার?  বান্দির বাচ্চা... তোকে দেখাচ্ছি মজা।

(রোজিকে উপুরযুপরি থাপ্পড়, লাথি মারতে থাকবে সে। এক পর‌্যায়ে রুটিবলা বেলন দিয়ে পিঠে ও ঘাঁড়ে মারতে থাকবে। আঘাত সহ্য করতে না পেরে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যাবে িএবং দৌড়াদে থাকবে রোজি...)

কিছুক্ষণ পর। কলিংবেল বেজে উঠবে। ক্রিং, ক্রিং ক্রিং...

বীথি: (ঘরের ভিতর থেকে) কে?
ফাতিমা নূর: থানা থেকে আসছি । দরোজা খোলেন।
বীথি: (দরোজা খুলে বলবে) আপনারা কাকে চান?
ফাতিমা নূর: এটা কি সালাম সাহেবের বাসা?
বীথি: জীঁ,হ্যাঁ। কিন্তু কী হয়েছে?
ফাতিমা নূর: আপনি কি তার স্ত্রী?
বীথি: জীঁ, হ্যাঁ। কিন্তু কেন?
ফাতিমা নূর: আপনার স্বমী কোথায়? উনাকে ডাকেন।

(বীথি তার স্বমীকে ফোন করে বাসায় আসতে বলবেন। সালাম সাহেব দ্রুত হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ঢুকবেন। ঘরের ভিতোরে পুলিশের লোকজন দেখে অবাক হয়ে তিনি প্রশ্ন করবেন..)

সালাম সাহেব: কী হয়েছে অফিসার?

ফাতিমা নূর: আপনার দাজ্জাল স্ত্রী একটি তেরো বছরের বাচ্চাকে নির্দয়ভাবে প্রহার করেছেন। এমনিতেই তাকে দিয়ে আপনারা শিশুশ্রম করেছেন! তারপর আপনার স্ত্রী আধমরা করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।মেয়েটি এলাকার পথঘাট কিছুিই চেনে না। মহল্লার রোকজনের সহযোগিতায় সে এখন আমাদের হেফাজতে আছে।

সালাম সাহেব: আমি আমার স্ত্রীর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি, অফিসার। আমাদেরকে এবারের মতো ক্ষমা করে দেন।

ফাতিমা নূর: আপনার ক্ষমা চাইতে হবে না। আপনি মেয়েটিকে আগে হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করে তুলবেন। তারপর তাকে তার বাবার হাতে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসবেন।

সালাম সাহেব: ঠিক আছে , অফিসার। আমি তাকে সুস্থ করে তার বাবার হাতে পৌঁছে দেবো।

ফাতিমা নূর: আর আপনার বেগম সাহেবা মারাত্মকভাবে আইন ভঙ্গ করেছেন। মেয়েটিকে মারধর করেছেন। শিশুশ্রম নিরোধ আইন এবং নারী ও শিশু নির‌্যাতন আইন ভঙ্গ করায় আমরা তাকে গ্রেফতার করলাম। কনস্টাবল।

কনস্টাবল: ইয়েস স্যার। 
ফাতিমা নূর: মহিলাকে হাতকড়া পরাও এবং তানায় নিয়ে চলো।
কনস্টাবল: ইয়েস স্যার। (কনস্টাবল বীথিকে হাতকড়া পরাবে)
সালাম সাহেব: আমার স্ত্রীকে ছেড়ে দিন প্লিজ। প্লিজ অফিসার। এখন থেকে আমি আমার স্ত্রীর দায়িত্ব নিবো।
ফাতিমা নূর: রাখেন আপনার স্ত্রীর কথা। আপনি শিক্ষক মানুষ। আগে সমাজের দায়িত্ব নেন। সমাজের কথা ভাবেন। শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতন বন্ধে মনুষকে সচেতন করে তোলেন। সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেন আইন ভঙ্গ করলে তার শাস্তি আপনার দাজ্জাল স্ত্রীর মতোই হবে।

(বীথিকে নিয়ে পুলিশ গাড়িতে উঠবে। সালাম সাহেব চলন্ত গাড়রি দিকে নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকবে)

সমাপ্ত


চেতনায় কাজী নজরুল

  চেতনায় কাজী নজরুল ইমরুল কায়েস হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর, মানুষের মননে মননে বিদ্রোহের ঝঙ্কার তুলে কাঁপিয়ে দিয়েছিল যে আলোক বিচ্ছুরিত ক্ষণজন্...