https://imrulkayesartgallery.blogspot.com/2025/06/blog-post.html

Thursday, March 13, 2025

ইমরুল কায়েস এর রুবাই (৪১-৬০)

 

ইমরুল কায়েস এর রুবাই
রুবাই ৪১:
সকাল বেলা ইচ্ছে হলো একটু ছুঁতে তোমার শরীর
বললে তুমি এখন না থাক একটা যখন বাজবে ঘড়ির
এখন তুমি বলছো আবার আজকে না থাক কালকে হবে
এমনি করেই ইচ্ছে আমার অবহেলায় ধুকতে রবে।

রুবাই ৪২:
সখি আমার শারাব নেশা উসকে দিয়ে যাসনে ফিরে
তুই যে আমার হৃদয় রাণী বুকের ছাতি দেখ না চিরে
তোর কপোলে আঁকবো চুমো, দিল শারাবী নেশার দোল
একটুখানি সদয় হয়ে এই নিশিতে হৃদয় খোল।

রুবাই ৪৩:
তোমার আমার মিলন বাসর কোথায়, কখন কেমন হবে
এ সব কথা কেউ জানে না জানলে সবাই সজাগ রবে
দেহের মিলন নাইবা হলো, হচ্ছে নিতুই মনের মিলন
তুমিই ইমার শেষ ঠিকানা দিবানিশি সুখের দোলন।

রুবাই ৪৪:
আমার বাড়ির গুলবাগিচায় তুমি সখি নিত্য এসো
গোলাপ কাঁটার দহন শেষে একটুখানি ভালোবেসো
তোমার আমার অভিসারে গাইবে পাখি, ফুটবে ফুল
দুষ্টুমিতে একটু না হয় নাড়িয়ে যেও কানের দুল।

রুবাই ৪৫:
তোমার চোখে দৃষ্টি রেখে আমার এ মন তৃপ্ত হলো
অমন করে না তাকিয়ে ঘোমটাখানি একটু খোলো
তুমি ছাড়া জীবন আমার মরুদ্যানে তিতির পাখি
দিবানিশি তোমার ধ্যানে মগ্ন থাকার উপায় বলো।

রুবাই ৪৬:
বাহির বলে বাইরে এসো ভিতোর বলে যেও না
অন্য কারো মন্ত্রমোহে নিষিদ্ধ ফল খেও না
বাইরে আমার গমন নিষেধ নিত্য শাসায় ভিতোরওয়ালা
কাকে বলি আমি যে ভাই ভালোবাসার ফেরিওয়ালা।

রুবাই ৪৭:
একটুখানি থাকলে দূরে মুখটা করো এমন ভারী
দেখলে লোকে বলতে পারে বছর খানেক অনাহারী
ঘেঁষলে কাছে থাকো দূরে দেখাও তোমার মেজাজ গরম
বলতে পারো কোন উপায়ে ভাঙবো তোমার লজ্জ্বা শরম।

রুবাই ৪৮:
কাজের মাঝে ডুবে আছি তবু তুমি ডাকতে পারো
ইচ্ছে হলে মুঠোফোনে লাইক, কমেন্ট ছুঁড়তে পারো
আমি না হয় মনভুলো এক কর্মপাগল ব্যস্ত ভ্রমর
তাই বলে কি তুমি শুধু অধীর হয়ে গুনবে প্রহর।

রুবাই ৪৯:
একটু আশা স্বপ্নে ভাসাছোট্ট নীড়ে কাছে আসা
একটু সুখের বাউড়ি বাতাস অশ্রুজলে কান্না হাসা
জানি আমার চাওয়া-পাওয়া জুড়েই আছো তুমি একা
এতো আশা ভালোবাসা অন্তরালে নীল হতাশা।

রুবাই ৫০:
সখি আমার গুলবাগিচায় কোন সে ভ্রমর ঘ্রাণ শুঁকে যায়
নির্ভাবনায়, নিঃসঙ্কোচে ইচ্ছে মতো চুম এঁকে যায়
বলতে পারিস তোরা তাকে আমারও তো সমাজ আছে
ইচ্ছে যখন মজলে এমন আমার যে ভাই জাত চলে যায়।

রুবাই ৫১: 
এক জীবনে আর কতোবার নামবো সখি তোর সাগরেে
আর কতোবার আঁকবো তোকে পঁয়ত্রিশোর্ধ বুক পাজরে
তুই তো আমার অস্থি-মজ্জ্বা, রক্ত-মাংশ বুঝতে পারিস
ইচ্ছে আমার জিন্দেগীটা পার করে দেই তোর আদরে।

রুবাই ৫২:
এখন আমার দু‘চোখ জুড়ে বসত করে চেনা কষ্ট
স্বপ্নগুলো চোখের কোণে যত্ন ছাড়া হলো নষ্ট
ইচ্ছেগুলো দগ্ধ হয়ে আঁধার ঘরে জ্বালে পিদিম
ভাবনা আমার ছন্দ ক্ষয়ে আঁধার ঠেলে লক্ষভ্রষ্ট।

রুবাই ৫৩:
আর ডেকো না আমায় সখি তুমি যে কি খেল দেখালে
খোঁপায় বুনে বাগান বিলাস ঠোঁটের গায়ে রঙ মাখালে
হরিণ চোখের পাপড়িগুলো এমন করে ডাকলো আমায়
তোমার পিছে চলছি ছুটে এমন খেলা কেন শিখালে।

রুবাই ৫৪:
একটুখানি সময় হবে বেলকোণিতে পাশে বসার
একটুখানি সময় হবে আঁধার রাতে পথচলার
পাশে বসার, সাথে চলার সময় যদি নাই-ই থাকে
তোমার আমার মিলন হবে জীবন নদীর কোন সে বাঁকে।

রুবাই ৫৫:
বিশ্ব জুড়ে প্রতাপশালী পাণ্ডাগুলো কাঁপছে ত্রাসে
বাদশাহ ফাহাদ, ট্রাম্প, ট্রুডোর দর্প থামায় যে ভাইরাসে
সে ভাইরাসের স্রষ্ঠা কতো শক্তিশালী ভাবতে পারো
ছাক্কা ঈমান আছে যাদের তারাই শুধু বলতে পারে।

রুবা্ই ৫৬:
ভুল করো না সতর্ক হও আর করো না এমন ভুল
বন্দি এখন মানবতা চড়তে হচ্ছে কঠিন শুল
পাপের ফর্দ স্মরণ করে বিবেকটাকে শুধরে নাও
না শোধরালে করোনাতে ঠুকতে পারে বিষের হুল।

রুবাই ৫৭:
যখন আমার সুদিন ছিল সবাই ছিল খাটের পাশে
ড্রইং রুমে হর-হামেশা বসতো আসর বারো মাসেে
এখন আমি ঘোর বিপদে ওরা সবাই গেলো কোথায়?
যখন পাশে কেউ না থাকে তোমায় যেন পাই গো পাশে।

রুবাই ৫৮:
একটি সময় ছায়ার মতো তুমি ছিলে আমার সাথী 
ইচ্ছে হলেই আসতে কাছে হর-হামেশা দিনে রাতি
এখন তুমি ব্যস্ত অনেক অন্য গ্রহে প্রদীপ জ্বালো
আমার ঘরে বঞ্চনা আর অবহেলার চড়ুইভাতি।

রুবাই ৫৯:
একটুখানি সরলে বসন লজ্জ্বা তোমার কীসের এতো
আমায় দেখে হোক না তোমার স্বর্ণচূড়া অবনত
তোমার শহর নগর বন্দর চোরাগলি সবই চেনা
রাজধানীটা করতে বিজয় ছুটছি আমি অবিরত। 

রুবাই ৬০:
আমি যখন তোমার সাথে সময় কাটাই নির্ভাবনায়
ঘন্টা নেড়ে বলে দিও কেউ না যেন ডাকে আমায়
সারাদিনের ক্লান্তিঝাড়া তোমার আমার অভিসারে
অনাহুত অকারণে কেউ না যেন মাথা ঘামায়।


Sunday, March 9, 2025

ইমরুল কায়েস এর রুবাই (২১-৪০)


ইমরুল কায়েস এর রুবাই
রুবাই ্২১:
তোমার যখন নিদ্রাবিলাস আমার তখন কালবৈশাখী
সহজ সরল ভাবনা আমার তোমার দ্বারে ব্যস্ত রাখি
তোমার চোখের এক ইশারায় মনকাননে ঝর্ণা ঝরে
সকাল দুপুর ব্যস্ত সন্ধ্যা তোমার ধ্যাণে মগ্ন রাখি।

রুবাই ২২:
এক পেয়ালা শরাব দিও একটু দিও নেশার দোলা
মধ্যরাতে চাইলে যেন পাই গো তোমার দরজা খোলা
যতই তুমি ব্যস্ত থাকো অন্তরীক্ষে অষ্টপ্রহর
স্মরণ রেখো আমি কিন্তু দিল শারাবী আত্মভোলা।

রুবাই ২৩:
ভেবেছিলাম এই রজনী শেষ হবে না কভু আর
সাথেই রবে শারাব সাকী রূপমহল আর বাহু তার
কিন্তু যখন সাঙ্গ হলো শারাব সাকীর নেশার ঘোর
দেখি শুধু আমিই একা শূন্যমহল খো দ্বার।

রুবাই ২৪:
আমার যদি পাখির মতো থাকতো ডানা নরম পালক
যেতাম উড়ে অনেক দূরে উৎসমূলে রবের আলোক
কিন্তু আমি এমন একটা হলাম বোকা বদনসিব
পাখনা ছাড়াই খুঁজেফিরি দ্বীনের নবী, বিশ্বচালক।

রুবাই ২৫:
বেলকোনিতে লাল দোপাট্টা, এলোকেশীর ব্যস্ত নূপুর
দোল দিয়ে যায় শান্ত মনে ক্লান্ত বিকেল, ব্যস্ত দুপুর
স্বপ্ন আমার পানশি ভাসায় দূর অজানায় অভিসারে
আলতাপরা নূপুর পায়ে ঢেউ খেলে যায় পদ্মপুকুর।


রুবাই ২৬:
কৃষ্ণচূড়া হাসনাহেনা সূর্যমুখি ভালোবাসি
তবু আমি সধ্যা হলেই তোমার নীড়ে ফিরে আসি
খুশবু তোমার তাদের চেয়ে কমতি যে নাই আমি জানি
তাই তো আমি আঁধার-আলোয় থাকি তোমার পাশাপাশি।

রুবাই ২৭:
হাসির পরে কান্না আসে , আলোর পরে অমানিশা
এমনি করেই জিন্দেগীতে কড়া নাড়ে ভালোবাসা
একটু সুখের ছোঁয়ায় জাগে মিষ্টি মধুর শিহরণ
শান্ত মনে তুফান তুলে জাগিয়ে দেয় ভালোবাসা।

রুবাই ২৮:
হঠাৎ তোমার খুশবু এলো বাতায়নের খিড়কি খুলে
ঢেউ খেলানো জলপ্রপাতে হৃদয় আমার উঠলো দুলে
কাজল চোখে স্বপ্ন তোমার অগোছালো বাস্তুহারা
যেমন ইচ্ছে নাচো তুমি নগ্ন পায়ে ছন্দ তুলে।

রুবাই ২৯:
একটুখানি সবুর করো সময় পেলেই আসবো ফিরে
কত্তখানি ভালোবাসি দেখাবো এই হৃদয় চিরে
বুঝবে তুমি কলি যুগের কেমন আমি শাহজাহান
ভালোবাসার বাবুইপাখি নাচবে তোমার ছোট্ট নীড়ে।

রুবাই ৩০:
আমার যখন ভোরের আলো তোমার নামে সন্ধ্যাবেলা
দিনের আলোয় পাও না সময় রাত্রে করো অবহেলা
তোমার যখন সূর্য ওঠে উপচে পড়ে রসের জোয়ার
আমার আকাশ জলে সিক্ত মেঘমালা করে খেলা। 

রুবাই ৩১:
একটুখানি আলগা করো মেঘবালিকা ঘোমটা তোমার 
রূপ অনলে যাচ্ছে পুড়ে প্রেমপিয়াসী দৃষ্টি আমার
যতোই ঢাকো অঙ্গ তুমি রূপের ঝিলিক ঠিকরে বেরোয়
ভালোবাসার গোলাপ দিবো বাগান বিলাস খোঁপায় তোমার।

রুবাই ৩২:
আর যাবো না জলসা ঘরে , শারাব সাকী নেশার ঘোর
রাত পোহালে আসে যেন জিন্দেগীতে নতুন ভোর
উল্টোপথে আর হবে না সময় আমার অপচয় 
ভাবছি এখন কেমনে পাবো অন্ধকারে আলোর দোর।

রুবাই ৩৩:
আমি এখন ভিখারি নই, নিঃস্ব শুধু তোমার জন্য
সবাই ভাবে ইচ্ছে করেই আমি হলাম তোমার পন্য
যেমন ইচ্ছে নাড়াও আমায়, তুমি এখন নাটের গুরু
নাটাই এখন তোমার হাতে তাতেই আমার জীন ধন্য।

রুবাই ৩৪:
এখন আমি ভয় করি না প্রেম সাগরে কাটতে সাঁতার 
তুমি আমায় শিখিয়েছে জল-তরঙ্গ কঁচুপাতার
একটু ভালোবাসা দিলে একটু দিলে দেহের পরশ
অভিসারে আলতো করে সাহস দিলে ভালোবাসার।

রুবাই ৩৫:
আমার খেতে ইচ্ছে করে তোমার হাতের পানের খিলি
তাই তো প্রতি সন্ধ্যাবেলায় রয়্যাল মোড়ে দু’জন মিলি
সারাদিনের ক্লান্তি আমার দূর হয়ে যায় সন্ধ্যাবেলায়
আমার সাধের পানের বোটায় চুন মেখে যাও নিরিবিলি।

রুবাই ৩৬:
আর ডেকো না সুনয়না মধ্যরাতে তুমি আমায়
তোমার আমার গোপন প্রণয় রাষ্ট্র হবে পাড়ায় পাড়ায়
রক্তচোক্ষু, লোকলজ্জ্বায়, তোমার ছোঁয়া যাদি না পাই
নীল সাগরে মরবো ডুবে ব্যর্থ প্রেমের দহন জ্বালায়। 

রুবাই ৩৭:
হলদেপাখি এখন থাকে আমায় ছেড়ে অনেক দূরে
দূরগগনে পাখনা মেলে কণ্ঠ ছাড়ে অন্য সুরে
তবু আমি খুঁজি তারে মনকাননে অহর্নিশি
হয়তো আবার আসবে ফিরে মধু খেতে মনমুকুরে।

রুবাই ৩৮:
বুকের ভিতোর সযতনে গরান কাঠের আগুন জ্বেলে
এখন তুমি বসত করো অন্য ঘরের কপাট ঠেলেে
আমি এখন মধ্যরাতে অকারণে কলম চষি
তুমি ওড়াও সুখের ঘুড়ি দখিন হাওয়ায় শেষ বিকেলে।

রুবাই ৩৯:
ভোরের আলোয় শিশুর হাসি দগ্ধ দুপুর ক্লান্তি আনে
স্নিগ্ধ বিকেল অবশেষে সন্ধ্যাবেলার আঁধার টানে
মধ্যরাতে পন্ডিতেরা ব্যস্ত থাকে কাব্য লেখায়
আমি শুধু ছন্দ খুঁজি সারাবেলা তোমার গানে।

রুবাই ৪০:
ভোরের আলো ফুটবে যখন ছুটতে হবে কাজের খোঁজে
রুটি রিযিক সবার লাগে মহান প্রভু ঠিকিই বোঝেে
এরই মাঝে ধার্মিকেরা  ধর্ম কর্ম ঠিকই করে
বেনামাজী চোরের মতো আঁধার মাঝে মাথা গোঁজে।
 

Friday, March 7, 2025

ইমরুল কায়েস এর রুবাই (০১-২০)


ইমরুল কায়েস এর রুবাই
রুবাই ০১:
তোমার কথা যখন ভাবি অফিস কিম্বা উদ্যানে
দেখি তুমি ছায়ার মতো সাথেই আছো সবখানে
একটু যদি ভুল পথে যাই সামনে তুমি তোলো বাধা
দিবানিশি তুমিই আমার জিন্দেগানির হাসি কাঁদা।
রুবাই ০২:
এই যে দেখো সুনীল আকাশ, পাহাড়-নদী, সাগর তরু
এর মাঝে যে সুপ্ত আছে যায় না দেখা খুবই সরু
দৃষ্টি আমার এতোই খারাপ, এমন আমি বদ নসীব যে
দেখতে তারে বৃথাই আমি খুঁজে ফিরি দূর মরু।

রুবাই ০৩:
এই যে দেখো ভোরের আলো, স্নিগ্ধ সন্ধ্যা, তরুলতা
পাহাড়-নদী, কীট-পতঙ্গ, ছোট্ট শিশুর সরলতা
এর মাঝে যে সুপ্ত আছে সার্বজনীন মহাশক্তি
তারই হাতে বিশ্বনিখিল, হায়াত-মউত, মানবতা।
রুবাই ০৪:
ইচ্ছে আমার জায়নামাজে তসবিহ্ হাতে রই বিভোর
পাককালামে পাখির মতো হর-হামেশা হই মুখর
কিন্তু আমায় এই পৃথিবী আঁকড়ে রাখে আষ্টে-পৃষ্ঠে
ব্যস্ত থাকি অর্থ-বিত্ত, লোভ-লালসা, ভুড়ি পুজোর।

রুবাই ০৫:
নামাজ রোজা হজ্জ্ব ও যাকাত আসবে না তোর কোনো কাজে
জিন্দেগানির কর্মকাণ্ডে ঈমান যদি থাকে বাজে
সবার আগে থাকতে হবে স্বচ্ছ ঈমান নিয়ত ভালো
তা না হলে বেহেশতি সুখ দিনের শেষে জুটবে না যে।

রুবাই ০৬:
ভঙবে খেলা সন্ধ্যাবেলা আঁধার যখন আসবে নেমেে
আমোদ-ফুর্তি, বিত্ত-বিলাস, দিন ফুরোলে যাবে থেমে
যখন তোমার ফিরবে চেতন বন্ধ হবে ঘড়ির কাঁটা
সময় তোমার যাচ্ছে চলে মগ্ন হবার খোদার প্রেমে।

রুবাই ০৭:
আমার অনেক ভ্রান্তি ছিল অনেক ছিল অবহেলা
জানি তুমি করছো খেলা আমার সাথে সারাবেলা
কোনটি তোমার পন্থা সঠিক সবই তোমার জানা ছিল
বোঝা কঠিন আদ্যপান্ত প্রভু তোমার লীলাখেলা।

রুবাই ০৮:
অর্থ-বিত্ত, দামী আসবাব, বিলাসিতার মূল্য কী যে
আমাদের এই জিন্দেগানী একটু ভাবো সবই মিছেে
একটুখানি পরমোল্লাস, একটু সুখের গল্প শেষে
সাঙ্গ হবে জীবন খেলা সকল কিছু রবে পিছে।

রুবাই ০৯:
অথই সাগর মাঝে আমি ধরে আছে অক্টেপাসে
ভাবছি কখন আসবে তুমি ত্রাতা হয়ে আমার পাশে
সন্ধ্যাবেলায় বুঝছি আমি তুমি ছাড়া আর কেহ নাই
গহীন রাতে তোমার আশীষ থাকে যেন আমার পাশে।

রুবাই ১০:
দৃষ্টি আমার যে দিকে যায় দূর দিগন্তে যত দূর
দেখি তোমার দানের বহর আকাশ জমিন অন্তঃপুর
চোখ থাকিতে অন্ধ যারা পায় না তারা সে সব খোঁজ
তবুও তোমার রহমতের দান খোঁজে না নিকট দূর।

রুবাই ১১:
ইচ্ছে হলেই আয়েশ করে খায়েশ মিটাও তোমরা জানি
হয়তো ভাবো এমনি করেই সাঙ্গ হবে জিন্দেগানী
কিন্তু যেদিন দিন ফুরোবে সাঙ্গ হবে পান্থশালা
সঙ্গি শুধু হবে তোমার নামাজ রোজা পাপের ঘাণি।

রুবাই ১২:
আকাশ ভরা চন্দ্র তারা সাগর ভরা নোনাজল
মায়ায় ভরা এই ধরণী জীবন ভরা কোলাহল
সময় হলে সাঙ্গ হবে এই পৃথিবীর আয়োজন
সৃষ্টি সবই আল্লাহ পাকের দয়ায় ভাসা শতদল। 

রুবাই ১৩:
নামাজিরা ভয় করো না পার হতে ঐ পুলসেরাত
আল্লাহ পাকের দিদার পেতে নিত্য জপে দোয়া কেরাত
হয়তো তারা জিন্দেগিতে পায় না খ্যাতি, বিত্ত-বিলাস
রোজ হাশরে ঠিকই তারা প্রাপ্ত হবে প্রভুর নাজাত।

রুবাই ১৪:
খোরমা খেজুর মরু-প্রান্তর মক্কা শরীফ মনের মাঝে
দিবানিশি খুঁজেফিরি মন বসে না কোনো কাজে
হেরা গুহা কা’বা শরীফ ধ্যানে-জ্ঞানে রেখে আমি
মুহাম্মদের জন্মভূমি মদিনা যাই নিত্য সাঁঝে।

রুবাই ১৫:
পোষা ময়না, তোলা গয়না, অর্থ-বিত্ত সবই মিছে
জিন্দেগানির পুজি পাট্টা সবই তোমার রবে মিছেে
আখিরাতের পূণ্য সওদা সঙ্গি শুধু হবে তোমার
মগ্ন হয়ে ভাবো তোমায় কোন জাদুকর পাঠাইয়াছে?

রুবাই ১৬:
প্রভু তুমি আমায় যখন এই দুনিয়ায় মুক্তি দিলে
চোখের জলে হই মুসাফির পাপের পাষাণ চক্ষু মেলে
এখন আমি শারাব নেশায় রুপের নহর লেহন করি
দাও না আবার অধমকে ঠাঁই তোমার ক্ষমার ছায়াতলে।

রুবাই ১৭:
ফোরাত নদীর শীতল হাওয়া মরু-প্রান্তর কারবালাতে
ইমাম হোসেন শহীদ হলেন ইয়াজিদের ভুল খেলাতে
অত্যাচারীর তরবারী শক্তিশালী হোক না যতোই
বিজয় তাহার ঠিকই হলো ইতিহাসের শেষ বেলাতে। 

রুবাই ১৮:
আমার নবী মুহাম্মদের নাম জপিলে শান্তি পাই
খুশবু মাখা নাম জপিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই
শেষ বিচারে পুলসেরাতে রাসুল যেন সহায় হন
তা না হলে কঠিন বিপদ পাপ মোচনে রক্ষা নাই।

রুবাই ১৯:
পাখির কণ্ঠে, ফুলের গন্ধে, নদীর স্রোতে আছেন যিনি 
সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাতে আমার সাথে আছেন তিনি
আমি যখন যেখানে যাই সবই তিনি দেখতে যে পান
বেলাশেষে যেতে হবে জেনেও পাপের পাহাড় কিনি।

রুবাই ২০:
যখন ভাবি তুমি ছাড়া আমার তো আর নেই ভরসা
তোমার দিকে ছুটতে থাকি অশ্রুজলের ঝরে বর্ষা
যেতে যেতে মোহের টানে আবার আমি আনমনা হই 
বসলে ধ্যাণে তুমি টানো, বাকি সময় ভুল মোহে রই।

Thursday, March 6, 2025

লিকলিকে মেয়ে ০৬

লিকলিকে মেয়ে ০৬
ই ম রু ল  কা য়ে স
 
লিকলিকে মেয়ে
এবার ফাগুন অন্য রকম; অস্থির ও অপ্রকৃতস্থ
কবি ও কবিতার সংসার খুব একটা ভালো নেই।
তোমার মায়াবী শরীর ও পলল মনন ভালো আছে তো?
 
মান্দারের মগডালে এ বছর শিমুল হাসেনি,
পারুল ফোটেনি চেয়ারম্যান বাড়ির গেটের উপর।
কৃষ্ণচূড়ার এবার এমন কি হলো জানি না;
ঠোঁটে লিপস্টিক মাখতে বেমালুম ভুলে গেছে সে।
যেমন ভুলেছি আমিও;
জন্মদিনে তোমাকে উইশ করতে পারিনি এবার!
হয় তো অবাক হয়েছো,
এমন ভুল 
কি করে করতে পারে কবি? করেছে কখনো?
 
বিশ্বাস করো, ইচ্ছে ছিল এবার তোমার জন্মদিনে
চুয়াল্লিশ নম্বর বাড়ির সামনে মহাসমাবেশ করবো,
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কনসার্ট হবে তোমার নামে।
পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে যাবে পুরো শহর
মঞ্চের পিছনে তোমার ছবি বড় করে সাটানো থাকবে;
তুমি তো জানো, আমার অজস্র ভক্ত আছে এই শহরে
তাদের কেউ হাফপ্যান্ট পরে, কেউ আবার ফুলপ্যান্ট
কারো মাথায় ঝুঁটি আছে, কারো বেণী একটি অথবা দু’টি,
কারো মাথায় মেসি, রোনালদো, নেইমারের মতো হেয়ারকাট।
এবার আমার ভক্তগুলো কেন জানি অন্য রকম!
 
এবার আগস্ট তেইশ ছিল ভিন্ন রকম; স্লোগান-মুখর
মিছিলে মিছিলে ফেরারি বাউল; কুমারি গোলাপ রক্ত ঝরালো
মনন জুড়ে অস্থিরতা, চুয়াল্লিশ নয়, 
সবাই  ছুটলো বত্রিশে।
ভাবনাগুলো বাঁধন-হারা, অন্ধকারে জন্মোৎসব কী করে হয়?
এসব ভেবে কবির মনন ভীষণ ব্যাকুল।

তুমি তো জানো -
কবিরা প্রথম জীবনে বিপ্লবী হয়, পরিনত বয়সে হয় প্রেমিক,
বয়সের সাথে সাথে অস্থিরতা বেড়ে গিয়ে নিঃশ্ব-রিক্ত হয়
আর, শেষ বয়সে মগজে পঁচন লেগে কবি হয় ক্ষমতাহীন দার্শনিক।
আমি এখন কোথায় আছি, কেমন আছি জানি না।

লিকলিকে মেয়ে
এক প্রস্থ প্রশান্ত মনন ও স্বাভাবিক জীবনের জন্য
একখণ্ড সুস্থ্য সমাজ ও কল্যাণময় রাষ্ট্রের জন্য
এদেশে এখন তোমার মতো অসংখ্য প্রেমিকা দরকার।

কিন্তু, তুমি তো এখন বার্মিংহামে ক্যাটবেরি খাচ্ছো!
 
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খুলনা
 

 

 


Friday, February 28, 2025

নীল প্রজাপতি ০১

 

নীল প্রজাপতি ০১
ই ম রু ল  কা য়ে স

রাতজাগা লাল চোখ অভিমানে অকারণে 
রাত্রির সাথে করে সন্ধি,
ঘুমঘোর জানালায় ভ্রুকুটি করে যায় অসুস্থ্য সমাজ,
কবির কষ্টকে কাছে এসে বোঝে না তো কেউ।

শেষরাতে শিশির পতনের মতো নেমে আসে ঘুম
নীল প্রজাপতি চোখের পাপড়িতে এঁকে যায় আল্পনা
‘কবির কল্পনা, সহজ গল্প না’ এই সত্যটুকু 
বোঝে না মানুষ, বোঝে না নীল প্রজাপতিও।

অনাহুত বঞ্চনা, সামাজিক জল্পনার মুখোমুখি হয়ে
কবির কষ্টকে বুকে নেবে, চোখ দু’টো লাল কেন জেনে যাবেে
এমন দরদী বলো এ সময়ে আছে নাকি কেউ।

১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
০২ পৌষ ১৪২২ বঙ্গাব্দ
খুলনা



Thursday, February 27, 2025

নীল প্রজাপতি ০২

 

নীল প্রজাপতি ০২
ই ম রু ল  কা য়ে স

এক নীল প্রজাপতি কৈশোরে ছুঁয়ে গেলো মন। 
যখন তখন পেয়ে তার মায়াবী স্পর্শ
উচাটন মন হয়ে গেলো মধুবন বিহারণী হরিণী।

যখন ইচ্ছে, যেমন ইচ্ছে তার
যৌবনে, সুগন্ধি মৌবনে, এঁকে গেলো বসন্ত আল্পনা,
স্পর্শে তার পূষ্পে পূষ্পে ভরে গেলো মননকুঞ্জ।
চারিদিকে তখন উড়ুউড়ু রঙিন স্বপ্নোৎসব
সাফল্যের জয়োযাত্রায় তখন আমি দিগ্বিজয়ী মহানায়ক।

সেই চেনা হৃদয়হীনা নীল প্রজাপতি
পরিনত যৌবনে হারিয়েছে বসন্ত বিহারে।
এখন আমি স্বপ্নহীন, ছন্দহীন এক তৃষিত চাতক।

নীল প্রজাপতিরা এভাবেই কাছে আসে, এভাবেই দূরে চলে যায়,
ভেঙ্গে যায় অজস্র সাজানো স্বপ্নপ্রাসাদ।
দুমড়ানো, মোচড়ানো দেবদাস স্বপ্নগুলো 
সাজাতে সাজাতে, আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত, যন্ত্রমানব।
জীবন সাজাচ্ছি, শুধুই সাজাচ্ছি, সাজিয়েই যাচ্ছি...

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ খ্রিস্টাব্দ
২০ মাঘ ১৪২২ বঙ্গাব্দ
খুলনা

Wednesday, February 26, 2025

অতিথি পাখি

 

অতিথি পাখি
ই ম রু ল  কা য়ে স

নতুন পথের দিশা আঁচলে তোমার মায়াবতী
ওড়নার ভাজে ভাজে স্বপের ঝাঁড়বাতি জ্বেলে
শীতের উষ্ণতায় হয়েছিলে এক টুকরো ওম। ঝরাপাতার মিছিলে
নদীর মতো তুমিও মিশে যাবে সাগরের নীলিমায়।

ইদানীং ভালোবাসা কর্পুরের মতো মনে হয়।
শরীরের ঘ্রাণের মতো হাওয়ায় ভেসে যাবে তোমার ভালোবাসাও
রাতের অমানিশায় বুকের কার্ণিশে মাথা গোঁজে অতিথি পাখি;
তন্দ্রা ফেরি করে কেবলই উড়ে বেড়ায় বাসন্তী হাওয়ায়।

১০ নভেম্বর ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ
২৫ কার্তিক ১৪২০ বঙ্গাব্দ
খুলনা

চেতনায় কাজী নজরুল

  চেতনায় কাজী নজরুল ইমরুল কায়েস হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর, মানুষের মননে মননে বিদ্রোহের ঝঙ্কার তুলে কাঁপিয়ে দিয়েছিল যে আলোক বিচ্ছুরিত ক্ষণজন্...