https://imrulkayesartgallery.blogspot.com/2025/06/blog-post.html

Monday, July 31, 2023

লিকলিকে মেয়ে


লিকলিকে মেয়ে পাঁচ
ই ম রু ল  কা য়ে স

লিকলিকে মেয়ে
তোমাকে ছাড়া এই অঝোর শ্রাবণ বড় একা একা লাগে।

কখনো ভাবিনি তুমি হতে পারো অবাধ্য আমার,
নিমেষেই সরে যেতে পারো দৃষ্টির ওপারে!
ভালোবাসা ছাড়া তোমাকে আর কী দিয়েছি উপহার!
কাঁটার আঘাত সয়ে গোলাপের ঘ্রাণ নিতে
তুমিই তো শিখিয়েছিলে প্রথম যৌবনে।

রক্তাক্ত হয়েছে, হৃদয় মায়াবী বিরহ-কাঁটায়।
পোড়া যৌবন মগজের ঘরোয়া মানচিত্রে 
নিভৃতে এঁকেছিল তোমারই তো আল্পনা!

শুধু সামনেই এগিয়ে গেলে একা !
ডানে-বামে-পশ্চাতে তাকানোর সময় 
তোমার কখনো কি হলো?
পড়েছো তো বিজ্ঞান, ব্যবহারিক ক্লাসে 
হয় তো দেখেছো মাংশল হৃদপিণ্ড, দেখোনি হৃদয়!
একবারও তো বোঝোনি, 
কবির হৃদরক্তেই লাল হয়েছে গোলাপের পাপড়ি।
অথচ সেই গোলাপই এখন কবিকে চেনে না!

এই ভেজা শ্রাবণে, অশ্রুপ্লাবনে, অহর্নিশ ভিজছি।
রাতভর বিৃষ্টিতে ভিজে গেলো দাঁড়কাক
ভিজে গেলে মানুষ, পশুপাখি, ধানক্ষেত
শুধু, ভিজলো না তোমার দ্যোদুল্যমান পাথর হৃদয়।

২৩ আগস্ট ২০০২ খ্রি.
খুলনা










Saturday, July 15, 2023

বাড়ি নম্বর চুয়াল্লিশ

বাড়ি নম্বর চুয়াল্লিশ
ই ম রু ল  কা য়ে স

চেনা স্বপ্নগুলো প্রতি মাঝরাতে 
দলবেঁধে পাখা মেলে সাঁই সাঁই উড়ে যায়,
প্রভাত হলেই তৃপ্ত অবয়বে ফিরে আসে ঘরে।

আমি বহুবার করেছি অপেক্ষা
বহু নিশি জেগে, করজোড়ে চেয়েছি জানতে
নিটোল অমানিশা বুকে ঠেলে দূরে, হরিণী চঞ্চলতা নিয়ে
নিঃভৃতে নির্জনে কোথা যায় ওরা?
উত্তর একটাই, `বাড়ি নম্বর চুয়াল্লিশ'।

আমি - বারবার অনুনয় করে বলেছি 
গহীন রাতে কারো বাড়ির অন্দরে করবে না প্রবেশ,
কোনো - মানবীর শরীরের ঘ্রাণ শুঁকবে না আর,
শিয়রের পাশে বসে নিঃস্বার্থ ভালোবেসে
রাত জেগে কাউকেই করবে না আদর।

ওরা না শোনে বাঁধা, না মানে বারণ।
প্রতি রাতে পাখা মেলে সাঁই সাঁই উড়ে যায়।

আমি - বসন্তের বিরহী কোকিলের মতো 
একা একা জেগে থাকি ঘরে,
জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে ভাবি-
কখন শান্ত হবে আঁখি? 
আঁখির পাপড়িগুলো মিলে যাবে ওদেরই মায়বিী ওমে। 
কখন আসবে ফিরে পোষা সেই স্বপ্নগুলো
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানবীর শরীরের গন্ধ মেখে ডানায়।

২৩ আগস্ট ২০০১ খ্রি.
খুলনা

Friday, July 14, 2023

নীলগঞ্জের মেয়ে

নীলগঞ্জের মেয়ে
ই ম রু ল  কা য়ে স

পৌষের পড়ন্ত বিকেলে
মেঘের আঁচল ছিঁড়ে খসে পড়লো একফাঁলি সোনালি রোদ্দুর
আড়মোড়া ভেঙে ঘোমটা খুলে
খিলখিল করে হেসে উঠলো হলুদ সরিষার ক্ষেত।
দলবেঁধে ছুটে এলো ফেলে আসা স্মৃতির বহর
টেনে নিল অবসন্ন হৃদয়ের এক চিলতে শুষ্ক উঠোনে।
বহুদিন পর আকাশ হয়ে উঠলো গাঢ় নীল।
জলাসক্ত মেঘ, মেঘাসক্ত নীলাকাশ
আকাশের পাদদেশে অগোছালো লাজুক রোদ্দুর।

সেদিনের সেই সোনামাখা রৌদ্রের স্নান শেষে
স্বপ্নাতুর চোখ নিয়ে হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ালো
তুলনাহীন, উপমাহীন, আটপৌরে এক শহুরে মেয়ে।
ভীষণ অদ্ভুত সেই মিষ্টি মেয়ের মুখাবয়ব
প্রাচীন মিশরীয় বর্ণমালার মতো দুর্বোধ্য 
তার অব্যক্ত অভিব্যক্তি, হরিণী দৃষ্টি।
টানা টানা দু’টি চোখ অব্যক্ত বিষ্ময়ে ভরা
বড় শান্ত, বড় মনোহর তার চলার ভঙ্গি
যেন অতল সমুদ্রের সন্ধানে 
ধাবমান কুমারী পাহাড়ি ঝর্ণা এক।

মেয়েটির মুখোমখি হতেই হয়ে গেলো ভাসাভাসা পরিচয়
তারপর রৌদ্রে স্নান, স্বপ্নে অবগাহন
চঞ্চল প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে দেখা হলো চারপাশ
সরিষার ফুলে ঠাসা সবুজ খেসারি ক্ষেত
চিত্রার তীরঘেঁষা সর্পিল মেঠোপথ
জীর্ণ শীর্ণ জমিদার বাড়ি, রাজমন্দির, শিশুস্বর্গ সবখানে...
যেখানের পথে পথে খেলা করে প্রতিদিন
 বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের বাল্যস্মৃতিরা ।

ক্ষণিক দেখা সেই মিষ্টি মেয়েটির বাড়ি যশোরের নীলগঞ্জে
মনিহার সিনেমা হলের আশে-পাশে হয়তো।

মাত্র একটি বার তার সাথে হয়েছিল দেখা
মাত্র একটি বিকেল সে আমাকে দিয়েছিল উপহার
একটি রোমাঞ্চকর সন্ধ্যা সে আমাকে করেছিল পরিপূর্ণ দান
অথচ স্মৃতির  এ্যালবামে সে আজো অক্ষয় , চির অম্লান!

ভালো থাকুক নীলগঞ্জ।
ভালো থাকুক নীলগঞ্জের দুরন্ত কিশোরীরা।


২৫ ডিসেম্বর ২০০৫ খ্রি.
নড়াইল

Tuesday, May 23, 2023

স্বপ্নে আঁকা বাড়ি

 

স্বপ্নে আঁকা বাড়ি
       রু কা য়ে

 
ছোটকালে আমার একটি স্বপ্নে আঁকা বাড়ি ছিল
বাড়ির সাথে খেলার সথিী আমার অনেক স্বপ্ন ছিল 
দুইচালা ঘর, একটি উঠোন, লাউয়ের মাচা 
ব্যালকনিতে ছোট্ট একটি পাখির খাঁচা 
দুই জানালার মাঝে একটি সবুজ রঙের দুয়ার ছিল
ছোটকালে আমার একটি স্বপ্নে আঁকা বাড়ি ছিল।

ঘরের পাশে আমড়া গাছে টুনটুনিদের বাসা ছিল
ওদের জন ভীষণ চেনা, গল্প শোনার সাথী ছিল
ইচ্ছামতো আঁকা ছবি এলোমেলো 
বুক পকেটে জন্ম নেওয়া স্বপ্নগুলো 
লাল-কমলা, সবুজ-হলুদ, কালো-সাদার মিশেল ছিল 
ছোটকালে আমার একটি স্বপ্নে আঁকা বাড়ি ছিল।

 

ছোট্ট একটি রান্না ঘরের পাশে পানির কলটা ছিল 
তেষ্টা ছাড়াই কলের সাথে আমার অনেক সখ্য ছিল 
গোয়াল ভরা পোষা গরু, উপচে পড়া দুধের থালা
কাতলা মাছের ঝোলের শেষে স্বাদ মিলাতো ফলের ডালা
বাড়ির পাশে খড়ের গাদা, ফল বাগিচায় বোলতা ছিল
ছোটকালে আমার একটি স্বপ্নে আঁকা বাড়ি ছিল।
 
ছোট্ট ঘাড়ে স্কুল ব্যাগে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল
স্বপ্নগুলো মননতটে রঙিন বসত গড়েছিল
পুকুরপাড়ে ভরদুপুরে কিশোর মেলা 
সন্ধ্যা এলেই আমবাগানে ঝড়ের খেলা 
সুনীল ছিল, চম্পা ছিল, দিলু, ওবায়দুল্লাহ ছিল 
ছোটকালে আমার একটি স্বপ্নে আঁকা বাড়ি ছিল।
 
দুপুর থেকে সন্ধ্যা জুড়ে আমতলাতে আসর ছিল
কাঁচা-পাকা আমের সাথে মশলাপাতি ছুরি ছিল 
কৌটাভরা বিট লবনে ঝালের গুড়ো
কচিপ্রাণের দমকা হাসির গল্পগুলো 
জ্যৈষ্ঠ মাসের দারুণ খরায় অনেক বেশি মজার ছিল
ছোটকালে আমার একটি স্বপ্নে আঁকা বাড়ি ছিল।
 
ছোট্টকালে স্বপ্নে আঁকা আমার যে এক বাড়ি ছিল 
বাড়িসহ স্বপ্নগুলো কখন যেন  হারিয়ে গেলো!
রং তুলিতে আঁকা আমার স্বপ্নমোহন সেই বাড়িটা 
অনেক দামী, এখন যে আর পাই না খুঁজে
কেউ যদি পাও সেই ছবিটা স্মৃতির সেলে 
পাঠিয়ে দিও বন্ধু তুমি পার্সেলে বা ইমেইলে। 

Wednesday, May 17, 2023

দেশাত্মবোধক গান

 

ফারহিম আনজুম সোহানা

দেশাত্মবোধক গান
--- ই ম রু ল  কা য়ে স 

আমার মনটা ছুটে যায়রে আমার প্রাণটা ছুটে যায়রে পাখি-ডাকা, ছায়া-ঘেরা ছোট্ট সোনার গায়রে... আঁকাবাঁকা মেঠোপথে ফেলে আসা স্মৃতি রোজ বিকেলে খেলা করে মাটির সাথে প্রীতি মাঠে মাঠে সোনার ফসল বল্ না কোথায় পাইরে। মাঠে-ঘাটে জারী-সারী ভাটিয়ালী গানে পাগল করে দেয় আমারে সুরের মায়াটানে পথে পথে গায়ের বাউল প্রাণের কথা কয়রে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন
শিল্পী: ফারহিম আনজুম সোহানা
সুরকার: মোহাম্মদ ইছহাক
Youtube Link:
https://www.youtube.com/watch?v=JVltiBh5dno&list=RDJVltiBh5dno&start_radio=1&rv=JVltiBh5dno

Monday, April 24, 2023

ঈদুল ফিতর

ঈদুল ফিতর
ই ম রু ল  কা য়ে স

এক ফাঁলি শাওয়ালের চাদঁ গতকাল সন্ধ্যবেলায়
ইশারায় জানিয়ে দিলো আজ ঈদ, ঈদুল ফিতর।
মুহূর্তেই খুলে গেলো আল্লাহ’র আরশ
আসমান থেকে নেমে এলো ঐশি বাণীর অমীয় ঝর্ণাধারা
বাঁধভাঙ্গা আনন্দোল্লাসে, হইচই পড়ে গেলো চারিধারে
আমাদের ব্যস্ত শহর, পাখির বহর, পাড়া ও মহল্লায়।


খোশ আমদেদ! খোশ আমদেদ! আজ ঈদুল ফিতর!
শেষ হলো রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের রমজান
শেষ হলো তারাবিহ, সেহরি ও ইফতারের আয়োজন।
শেষ হলো ক্ষুধার যন্ত্রণা ভাগাভাগির সমান অনুভূতি
সিয়াম সাধনায় পূর্ণ হলো তাকওয়া, পূর্ণ খোদাভীতি।
ঈদ মুবারক, ঈদ মুবারক! ঈদ মুবারক!

এক ফাঁলি শাওয়ালের চাঁদ আকাশে উদিত হওয়ায়
শুরু হলো খুশির সুনামি, অনাবিল আনন্দোৎসব
ধনীর অন্দর থেকে বেরিয়ে এলো প্রাপ্তির উপটৌকন
গরীবের যাকাত, ঈদের ফিতরা, সাদকাহ ও উপহার।
গরীব ভুলে গেলো দুঃখ, কষ্ট হয়ে গেলো উধাও
ধনী ও গরীব মিলে, মিশে গেলো গভীর আলিঙ্গনে।

এক ফাঁলি শাওয়ালের চাঁদ এনে দেয় জীবনের পূর্ণতা
শত্রু-মিত্র মিলে দূর করে সমাজের জীর্ণতা!


২২ এপ্রিল ২০২৩ খি./ঈদুল ফিতর
খুলনা




Sunday, February 19, 2023

মিষ্টি মেয়ে

 

মিষ্টি মেয়ে
ই ম রু ল  কা য়ে স

ইদানীং ফেইসবুকে নিয়মিত বসে না রাজ। সামনে তার এম পরীক্ষা। চব্বিশতম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষাও সামনে। সবদিক বিবেচনায় অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার প্রবনতা কমিয়ে দিয়েছে সে।

ইংরেজি সাহিত্যের মেধাবী ছাত্র রাজ। পুরো নাম মেহেদী হাসান রাজ। তুখোড় ফুটবল খেলোয়াড় এবং দারাজ কণ্ঠের গায়ক হওয়ায় শহরের অনেকের কাছেই সে সুপরিচিত। ইংরেজি বাংলায় নিয়মিত সে কবিতাও লেখে। এক বোন বাবা-মায়ের সাথে তার বসবাস খুলনা শহরে, শেখপাড়া বাজারের পাশে। শহরে তার অনেক বন্ধু, ফেইসবুকেও হাজারখানেক; বেছে বেছে গ্রহণ করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।

সময়টা শীতকাল। বেশ কয়েকদিন ধরে আকাশ মেঘাছন্ন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চ্ছে। অলস বিকেলে বেডরুমের বেলকোনিতে বসে অনেকদিন পর ফেইসবুক ওপেন করলো রাজ। চোখ পড়লো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এর দীর্ঘ তালিকায়। একটি বিশেষ আইডির উপর তার চোখ নিবিষ্ট হলো। আইডির নাম ‘মিষ্টি মেয়ে’। প্রফাইল পিকচারে সুন্দর একটি মেয়ের মুখোছবি। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এর সাথে ইনবক্সে পাঠানো হয়েছে শতাধিক শর্ট মেসেজ ছবি। সবগুলোই রিকোয়েস্ট কবুল করার আবদার। রাজ মেয়েটির একাউন্টে প্রবেশ করে এবং খোঁজ খবর নেয়। টাইমলাইনে মেয়েটির ছবিগুলো অসম্ভব সুন্দর। রাজ জানতে পারে মেয়েটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। জন্মস্থান জেলা শহর ভোলায়। নাম শবনম মুস্তারী মিষ্টি রাজ তার পাঠনো দশ বারোটি মেসেজ পড়ে। এগারোতম মেসেজটি পড়ে তার রিকোয়েস্ট কবুল না করে না করে পারলো না।

মিষ্টি ফেইসবুকে নিয়মিত বসে। রাজের সাথে লাইক, কমেন্ট, শেয়ারিং ও চ্যাটিং সে ভীষণ উৎসাহী। কিছুদিনের মধ্যেই রাজ বুঝতে পারে মিষ্টি ভীষণ সুন্দর একটি মেয়ে। অসম্ভব মেধাবী, সারাক্ষণ কৌতুক করতে চায়। রাজ তার নিষ্কলুষ বন্ধুত্ব উপভোগ করে, এক কথায় মুগ্ধ হয়। ওদের দুইজনের মধ্যে গড়ে ওঠে চটুল একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সময়ে অসময়ে রাজকে স্বভাবসুলভ বিরক্ত করে মিষ্টি। মিষ্টির পাগলামি রাজেরও ভালো লাগতে থাকে সুন্দর একটি ভালোলাগার সম্পর্ক এগিয়ে যায় সামনের দিকে।

সময়ের প্রবাহে রাজ এর এম.. পরীক্ষা শেষ হলো। বিসিএস এর লিখিত মৌখিক পরীক্ষা শেষ করে ফলাফলের জন্য অপেক্ষায় থাকে রাজ। মিষ্টির মিষ্টি মিষ্টি দুষ্টুমির কারণে ওদের সম্পর্কের ধরণও আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকে। মিষ্টি রাজকে সশরীরে দেখতে চায়, একসাথে ঘর বাঁধার স্বপ্নও দেখে। রাজ মিষ্টিকে পরীক্ষা করতে থাকে, অপেক্ষায় রাখে বিসিএস এর চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য।

অবশেষে বিসিএস এর ফলাফল প্রকাশ হলো; সিরিয়াল নম্বর একুশ। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের চাকরিতে যোগদানের সুযোগ পেলো রাজ। খবরটি শুনে উপলক্ষ্য না বলেই কলেজের হোস্টেলে কাছের বন্ধুদের মাঝে সন্দেশ বিতরণ করলো মিষ্টি। মিষ্টির অশান্ত মন চঞ্চল প্রজাপতির মতো উড়তে শুরু করলো। স্বপ্নগুলো অতি দ্রæ সঞ্চালিত হতে থাকলো। রাজের সাথে দেখা করার জন্য অস্তির হয়ে উঠলো সে। সমস্ত অনুভূতির মাঝে যে মিশে আছে তাকে মুখোমুখি বসে দেখার ইচ্ছে তাকে ব্যাকুল করে তুললো।

মিষ্টির প্রোফাইলে পোস্ট করা ছবিগুলো এতোদিন ঘুরে ফিরে দেখেছে রাজ। ফেইসবুকে আলাপ হয়েছে, মোবাইল ফোনে সরাসরি কথা হয়েছে অসংখ্যবার। মিষ্টির শব্দচয়ন আকর্ষণীয় কণ্ঠস্বরে বারবার মুগ্ধ হয়েছে সে আলাপের মাধ্যমে মিষ্টির অর্ন্তজগতে প্রবেশ করার সুযোগও পেয়েছে বেশ। কিন্তু সরাসরি একে অপরের সাথে দেখা হয়নি এখনো। রাজও মিষ্টিকে দেখার জন্য ব্যাকুল। ছবিতে দেখা মেয়েটি বাস্তবে সুন্দর হবে কিনা সে বিষয়ে অনেক প্রশ্ন আছে রাজের। কিন্তু চোখে দেখার সুযোগ এখনো হয়নি। সব ভেবে রাজ মিষ্টিকে আরো একটু অপেক্ষা করতে বলে। চাকরির নিয়োগপত্র পেলেই সাক্ষাতের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে বলে মিষ্টিকে সাফ জানিয়ে দেয় রাজ। মিষ্টি মন খারাপ করে অপেক্ষায় থাকে।

মিষ্টিকে চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করার জন্য কিছুদিনের জন্য যোগাযোগের বাইরে থাকে রাজ। এখন আর ফেইসবুকে বসে না সে, ফোনও রিসিভ করে না মিষ্টির। মিষ্টি রাজকে মোবাইলে বিরক্ত করতে থাকে। অনিশ্চিৎ উৎকণ্ঠা তাকে গ্রাস করে। কাছের বন্ধুদের সাথে রাজের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি শেয়ার করতে বাধ্য হয় সে।

সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে একদিন বিকেলে চাকরিতে যোগদানের নিয়োগপত্র হাতে পেলো রাজ। রাজের আনন্দ আর দেখে কে? আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের খবরটি জানানো হলো দিনের ব্যস্ততা সেরে রাতে ফেইসবুকে বসলো সে। এবার মিষ্টিকে চমকে দেওয়ার পালা। মিষ্টির ইনবক্সে পাঠালো একটি সারপ্রাইজ মেসেজ...

    মিষ্টি মেয়ে কেমন আছো?
    তোমার জন্য সুখবর আছে...
    তোমার রাজকুমার এখন সহকারী কমিশনার
 নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছি, পোস্টিং মনপুরা, ভোলা জেলায়
    শ্বশুরবাড়ি কাছেই হবে বলতে পারো...
    যোগদান মাসের বাইশ তারিখ।
    এখন থেকে তুমি ভাগ্যবতী, নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ভাবতে পারো
    তুমি খুশি তো ভাগ্যবতী?
    এবার নিশ্চয়ই দেখা হবে!

মিষ্টি ফেইসবুকেই ছিল। ইনবক্সের মেসেজটি পড়া মাত্রই আনন্দে চিৎকার করে উঠলো সে। অভিমান ভুলে রুমের ভিতরেই ফাটালো আবেগের বোমাটি। হৈ চৈ করে সবাইকে জানালো ব্যাপারটি। বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠলো সে। বেশ কিছুদিন ধরে মনের গহীনে জমে থাকা সঙ্কোচ নিয়ে কল করলো রাজকে। রাজ মিষ্টির ফোনের অপেক্ষাতেই ছিল। ফোন রিসিভ করতেই ভেসে এলো...
-অভিনন্দন রাজকুমার! কি যে খুশি হয়েছি তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না। তুমি কি সত্যি বলছো রাজ Ñ এই মুহূর্তে আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাগ্যবতী। তুমি ভালো আছো তো রাজ?
-আমি খুব ভালো আছি। তোমার ফোন পেয়ে আরো খুশি হলাম।
-ঠিক বলছো তো? তাহলে এতোদিন আমার ফোন রিসিভ করোনি কেন? আমি তো আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম।
-কি বাজে বলছো! তাহলে তোমার রাজকুমারের কী হতো? বোকা মেয়ে, আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি। তোমার একটু পরীক্ষা নিলাম আর কি!
-এমন পরীক্ষা আমি চাই না। এবার বলো, পরীক্ষায় কি পাশ করেছি, নাকি ফেল?
- প্লাসসহ পাশ করেছো, গোল্ডেন গার্ল। সামনে তোমার পুরুস্কার আছে।
-তুমি সত্য বলছো তো রাজ? তাহলে...

মিষ্টি আর কথা বলতে পারলো না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সে। কথা বলতে বলতে বিচ্ছিন্ন হলো ওদের ফোন-সংযোগ। রাজ বুঝতে পারলো মিষ্টির অন্দরের চলমান অস্থিরতা।

সেই রাতে আরো তিন চারবার মিষ্টির সাথে ফোনে কথা বললো রাজ। অনেক কথা। বর্তমান ভবিষ্যতের কথা। মিলন বিরহের কথা। রাজের সাথে দেখা করার জন্য মিষ্টি বারবার আকুতি জানালো। মিষ্টির অনুরোধে শেষমেশ রাজি হলো রাজ। সিদ্ধান্ত হলো Ñ রাজের সাথে দেখা করতে মিষ্টি খুলনা আসবে পরের দিন। রাজ মিষ্টিকে আরেকটি মেসেজ পাঠালো...
   মিষ্টি, তুমি ট্রেনে আসবে খুলনায়, এক্সপ্রেস ট্রেন
   যে ট্রেনটি সোয়া চারটা দিকে খুলনা এসে থামে
            আমি তোমাকে রিসিভ করবো
            আমার পরণে থাকবে জিন্সের প্যান্ট হলুদ রঙের গেঞ্জি, মাথায় একটি সাদা হ্যাট।
            হলুদ তো তোমার পছন্দ, তাই না!
            আর হ্যাঁ, মোবাইলটা খোলা রেখো প্লিজ...

মিষ্টি রাজের মেসেজটি পড়লো। কিছুক্ষণের জন্য ভাবনার জগতে হারিয়ে গেলো। হোস্টেলে তার সবচেয়ে কাছের একটি আপু আছে। ইন্টার্নিস্ট ডাক্তার, নাম সাদিয়া। ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে মিষ্টিও একটি মেসেজ পাঠালো রাজের ইনবক্সে...
        মিষ্টি মেয়ে খুলনা আসছে কাল...
        রাজকুমার প্রস্তুত তো?
        তোমার কথামতো ট্রেনেই আসবো, নামবো খুলনা রেল স্টেশনে।
        কিন্ত তোমার সাথে আমার দেখা হবে অন্য কোথাও,
        শিববাড়ি মোড়ে, ফোয়ারার পাশে
        কারণ আমাদের হলের একটি বড় আপু সাথে থাকবে,
         যাবে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায়।
        যাবার সময় আমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবে
        আমি শাড়ি পরে আসবো, লাল শাড়ি
        তোমার নাকি শাড়ী ছাড়া চলেই না...
        যাবার পথে বকুল ফুলের মালা কিনবো, খোঁপায় পরবো
        খোঁপার মাঝে হারিয়ে যেও না যেন
        তুমি কিন্তু একা থাকবে... একদম একা... ফোয়ারার পাশে
        মোবাইলটা খোলা রেখো, প্লিজ।
        আমি কথা বলতে বলতে তোমার সাথে দেখা করতে চাই...

পরের দিন সকাল সোয়া ছয়টায় ট্রেনে উঠলো মিষ্টি। মনে তার অনেক কথা, অনেক স্বপ্ন। বুঝতে শেখার পর যে ছেলেটিকে প্রথম সে আপন করে ভেবেছে আজ তার সাথে দেখা হবে। অনেক দুষ্টুমি, অনেক অনিশ্চয়তার গল্পগাঁথা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোমš’ করে মিষ্টি। ঝিক্ ঝিক্ ঝিক্, ঝিক্ ঝিক্ Ñ ট্রেন চলে। মিষ্টির মগজে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলতে থাকে সমান্তরালে। মনের ক্যানভাসে বারবার শুধু ভেসে উঠে রাজের মুখোছবি। ছেলেটি কেমন হবে? বাস্তবে দেখা ছেলেটির সাথে ছবিতে দেখা রাজপুত্রের মিল থাকবে তো? ছেলেটি প্রতারণা করবে না তো? ওর বাবা-মা মেনে নেবে তো Ñ ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ভেসে ওঠে তার মনের পর্দায়। সব দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে মিষ্টির মনে একটি মাত্র বিশ্বাস স্থায়ী হয়ে ওঠে। রাজ খারাপ হতে পারে না। তার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই সঠিক আছে।

অবশেষে, খুলনা স্টেশনে ট্রেন থামলো। বড় আপু সাদিয়ার সাথে মিষ্টিও প্লাটফর্মে নামলো। সাদিয়া একটি রিক্সা ভাড়া করলো সোনাডাঙ্গা পর্যন্ত। যাবার সময় সাদিয়া মিষ্টিকে শিববাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলে। শিববাড়ি নেমেই মিষ্টি রাজকে ফোন করলো:
    -হ্যালো রাজ, তুমি কোথায়?
    -এই তো আমি শিববাড়ি মোড়ে, ফোয়ারার পাশে। তুমি কোথায়?
    -আমি মোড়ের পশ্চিম পাশে ... লাল শাড়ি পরা ... দেখতে পাচ্ছো?
    -, না তো! দেখো, আমার মাথায় সাদা রঙের বড় একটি হ্যাট আছে।
    -হ্যাঁ, হ্যাঁ। সম্ভবত: দেখতে পেয়েছি। হাত উঁচু করো, রাজ।
   -হ্যাঁ, আমিও তোমাকে দেখতে পেয়েছি, মিষ্টি।

মিষ্টি রাজকে দেখা মাত্রই আবেগতাড়িত হয়ে উঠলো। একটি অসম্বব ভালোলাগার অনুভূতি তার সমস্ত কল্পনাকে অস্থি করে তুললো। কিছুক্ষণের জন্য তার স্নায়ু ঠিকমতো কাজ করলো না। কোনো দিক না তাকিয়ে তীব্রগতিতে রাজের দিকে এগিয়ে আসতে থাকলো সে। রাজও মিষ্টির দিকে এগোতে লাগলো। রাজ দেখতে পেলো পূর্বদিক থেকে একটি মালবাহী ট্রাক বেপরোয়া গতিতে পশ্চিম দিকে ছুটে আসছে। শাড়িতে অনভ্যস্থ মিষ্টি টালমাটালভাবে রাজের দিকে এগিয়ে আসছে। কানে মোবাইল ফোন ধরা। ট্রাকটি মিষ্টির দিকে খুব কাছে চলে আসছে। রাজ চিৎকার করে মিষ্টিকে সাবধান করলো...
    -মিষ্টি থামো ... মিষ্টি, মিষ্টি ওখানে থামো ... ট্রাক...

বলতে বলতে ট্রাকটি মিষ্টির শরীরের উপর দিয়ে তীব্রবেগে চলে গেলে। রাজ চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলো ... মিষ্টি...। চোখ খুলে দেখতে পেলো মিষ্টি রাস্তায় পড়ে আছে। বুকের নীচের অংশ ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে তছ্নছ্ হয়ে গেছে। রাজ মিষ্টির কাছে ছুটে এলো। তার বিধ্বস্ত শরীরের মাথার অংশটি কোলের উপর তুলে রাজ পাগলের মতো চিৎকার করতে লাগলো। তার চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। চারদিক থেকে লোকজন ছুটে এসে ঘিরে ধরলো মিষ্টি রাজের মিলনস্থল।

রাজ শুনতে পেলো অস্ফুট কণ্ঠে মিষ্টি কি যেন বলে যাচ্ছে। মুখের কাছে কান নিতেই রাজ শুনতে পেলো মিষ্টির শেষ চারণ...
        ‘রাজ, আমি তোমাকে ভালোবাসি, রাজ,,,’
        আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি ... অনেক... অনেক

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো রাজ। মুছে গেলো তার পুঞ্জিভূত সোনালি অতীত।

এখন সে আর নিজেকে চিনতে পারে না। স্মৃতি হারিয়ে গত তেরো বছর ধরে একটানা শুধু মিষ্টিকেই খুঁজে ফিরছে সে খুলনা পাওয়ার হাউজ মোড় এলাকায়। স্থানীয় লোকজন তাকে পাগল বলে।


(গল্পটি অনেকটা সত্য ঘটনার উপর লিখিত)
২৩ আগস্ট ২০১৮ খ্রি.
খুলনা



চেতনায় কাজী নজরুল

  চেতনায় কাজী নজরুল ইমরুল কায়েস হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর, মানুষের মননে মননে বিদ্রোহের ঝঙ্কার তুলে কাঁপিয়ে দিয়েছিল যে আলোক বিচ্ছুরিত ক্ষণজন্...