মানবসত্ত্বার
জয়োগান গাওয়া এমনই হিমালয়সম অহংবোধ নিয়ে বিংশ শতাব্দির উষালগ্নে যে কবিযুবরাজ অগ্নিদগ্ধ ধরিত্রীর
বুকে সদর্ভে পা রেখেছিলেন, বাংলার সাহিত্যাকাশে বিদ্রোহের অগ্নিঝরা কণ্ঠ নিয়ে যিনি
‘ভগবানের বুকে এঁকে’ দিতে চেয়েছিলেন সাহসী পদচিহ্ন, বাংলা সাহিত্যের সেই আলোক বিচ্ছুরিত
ক্ষণজন্মা ধুমকেতুর নাম কাজী নজরুল ইসলাম। জীর্ণতা ভরা এই পৃথিবীর সকল অত্যাচার, অবিচার,
অসঙ্গতি, শ্রেণিভেদ ও দাসত্বের শৃঙ্খল ছিন্ন করে তিনি মানুষকে দিতে চেয়েছিলেন ক্ষুধামুক্ত,
শোষণমুক্ত নতুন এক সমতার পৃথিবীর ঠিকানা। বিদ্রোহের ঝঙ্কার তুলে, শোষণের সুপ্রাচীন
শৃঙ্খল ছিঁড়ে, ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠের খররৌদ্রদগ্ধ তপ্তপ্রহরে, আকাশ বিদীর্ণ
চিৎকার ছুঁড়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন আমাদের এই মর্তের ধরণীতে।
হিমালয়সম সৃজনীপ্রতিভার বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় সম্ভার থেকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে খণ্ডিত কোনো বিষয়বস্তুর উপর আলোচনা করার প্রয়াস বিশাল মহাসমুদ্র থেকে নগণ্য নূড়ি কুড়ানোর মতো। উল্লেখ্য, আজকের প্রবন্ধের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের আহ্বান’, যৌক্তিকভাবে, রচনার শিরোনাম থেকে বেশি দূরে পরিভ্রমণ করার সুযোগ কোথায়? তবুও মূল প্রসঙ্গে প্রবেশের পূর্বে পাঠকের ভাবনাগুলোর শৈল্পিক সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত অবয়বে জাতীয় কবির জীবনী এবং কিছু প্রাসঙ্গিক শব্দ যেমন ‘সাম্যবাদ’, ‘মানবতা’, ‘সমাজ’, ‘সমাজতন্ত্র’, ‘অসম্প্রদায়িকতা’ ইত্যাদি শব্দসমুহের অর্থবিস্তারে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা প্রয়োজন।
কবির জীবনী:
কাজী
নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে (বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের
বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম দুখু
মিয়া। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। অল্প বয়সেই নজরুল
পিতা-মাতা দু’জনকেই হারান। শৈশব থেকেই দারিদ্র্য আর দুঃখ-কষ্ট ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।
স্কুলের ধরাবাঁধা জীবনে কখনোই তিনি আকৃষ্ট হতে পারেননি। বারো বছর বয়সে তিনি লেটো গানের
দলে যোগ দেন ও পালাগান লেখেন। পরে বর্ধমানে ও ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাইস্কুলে
লেখাপড়া করেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯১৭ সালে ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে
যোগ দিয়ে করাচি যান। যুদ্ধশেষে নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন ও সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ
করেন। তিনি কিছুদিন মসজিদে ইমামতিও করেন। সাপ্তাহিক ‘বিজলি’ পত্রিকায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা
প্রকাশের পর সাহিত্যক্ষেত্রে তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিতি পান।
তাঁর
লেখায় তিনি বিদেশি শাসক, সামাজিক অবিচার ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে
প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নজরুল সাহিত্য রচনা ছাড়াও কয়েক হাজার গানের রচয়িতা। তিনি বেশ কয়েকটি
পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। তিনি গজল, খেয়াল ও রাগপ্রধান গান রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন।
আরবি-ফারসি শব্দের সার্থক ব্যবহার তাঁর কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। তিনি রবীন্দ্রনাথের
তৈরি করা পথে না চলে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে নিজেকে বিকশিত করেছেন; সাহিত্যে এনেছেন সাম্যবাদ
ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা। গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ রচনায়ও তিনি কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন।
সম্পাদক এবং সমালোচক হিসেবেও নজরুল খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি মূলত যৌবনের কবি। যৌবনের
ধর্মই হলো এক দিকে যেমন বিদ্রোহ এবং প্রতিবাদ, অন্যদিকে প্রেম। এ দু’টো অনুভূতিরই সূচনা
হয় আবেগের প্রাবল্য থেকে। নজরুলের ভাষণ, সম্পাদকীয়, সমালোচনা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প
প্রতিটি ক্ষেত্রই ভাষার কাব্যিক ব্যঞ্জনা এবং বলিষ্ঠতায় পরিপূর্ণ।
তিনি
দৈনিক ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’ ও ‘লাঙল’ পত্রিকায় সম্পাদকের কাজ করেছেন। মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে
দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭২ সালে কবিকে ঢাকায় আনা
হয় এবং তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়।
কবিকে ঢাকা ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘জগত্তারিণী
স্বর্ণপদক, ভারত সরকার ‘পদ্মভূষণ’ ও বাংলাদেশ সরকার
‘একুশে পদক’ প্রদান করে। ১৯৭৬
সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে পূর্ণ
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
কিছু প্রাসঙ্গিক শব্দ
বিশ্লেষণ:
মানবতা:
মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতা বা সমাজের প্রতিটি সদস্যের স্বার্থের প্রতি গভীর অনুরাগই হলো মানবতা। এটি সাধারণ মানুষের প্রয়োজন ও সমস্যাবলি যৌক্তিকভাবে সমাধানে কাজ করে। পরোপকার, দয়া, ক্ষমা প্রভৃতি মনুষ্যোচিত গুণাবলি মানবতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হীনতা, লালসা ও সংকীর্ণতাকে পরিত্যাগ করে চরিত্রকে সুষমামণ্ডিত করতে পারলে মানবতার উৎকর্ষ সাধিত হয়। যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি ও বিকাশ মূলতঃ মানুষকে কেন্দ্র করে হয়েছে। সকল ধর্মের মূল শিক্ষা হল মানবতা। মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় ধর্ম তার আবেদনময়ী হাত প্রসারিত করেছে। একটি সুন্দর সমাজ গড়তে হলে প্রয়োজন মানবতা। তিনিই ধর্মের প্রকৃত অনুসারী, যিনি মানবতার শিখা জ্বালান। সমাজে সেই ব্যক্তির মর্যাদা উচ্চ, যিনি সর্বদা মানবতার উন্নতির জন্য কাজ করেন। আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী ও নীতিশাস্ত্র ইউনিয়নের মতে:
‘সাম্যবাদ’ শব্দটি ইংরেজি “কমিউনিজম” শব্দের বাংলা অনুবাদ। শব্দটি মুলতঃ কল্পনাপ্রসুত একটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মতবাদ যা একটি কল্যাণমুখি সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সমাজে কোনো শ্রেণি, অর্থ ব্যবস্থাপনা এবং রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা হয় না এবং উৎপাদনের মাধ্যমের সাধারণ মালিকানার উপর ভিত্তি করে সমাজ গঠিত হয়। অনলাইনে শব্দটির অর্থ অন্বেষণ করতে গেলে বিশ্বজনীন স্বীকৃত তথ্যকোষ (ওয়েবসাইট) ‘উইকিপিডিয়া’য় পাওয়া গেলো:
“সাম্যবাদ বা কমিউনিজম হল শ্রেণিহীন, শোষণহীন, ব্যক্তিমুনাফাহীন এমন একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবাদর্শ যেখানে ব্যক্তিগত মালিকানার স্থলে উৎপাদনের সকল মাধ্যম এবং প্রাকৃতিক সম্পদ (ভূমি, খনি, কারখানা) রাষ্ট্রের মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। সাম্যবাদ হল সমাজতন্ত্রের একটি উন্নত এবং অগ্রসর রূপ, তবে এদের মধ্যেকার পার্থক্য নিয়ে বহুকাল ধরে বিতর্ক চলে আসছে। তবে উভয়েরই মূল লক্ষ্য হল ব্যক্তিমালিকানা এবং শ্রমিক শ্রেণির উপর শোষণের হাতিয়ার পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার অবসান ঘটানো।” ০৪
সমাজতন্ত্র (Socialism):
সমাজতন্ত্র হলো বিশেষ এক ধরণের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণের সামাজিক মালিকানা এবং অর্থনীতির একটি সমবায়ভিত্তিক সামাজিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত করে; এটি একটি রাজনৈতিক মতবাদ ও আন্দোলন যার লক্ষ্য হচ্ছে এই ধরণের সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্র একই জিনিস। সমাজতন্ত্রের উঁচু ও সেরা রূপের নাম সাম্যবাদ। সমাজতন্দ্রে ব্যক্তি মালিকানার নিয়ম নাই। সংবিধিবদ্ধ রাষ্ট্র বলে কিছু থাকে না। প্রলেতারিয়েত বা শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিরা সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করে। সমাজতন্ত্রের উল্টোপীঠে পুজিবাদের অবস্থান। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘সমাজতন্ত্র’কে "একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার উপকরণ" হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
“এটি
এমন একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ ও অর্থের মালিকানা সামাজিক বা
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিমালিকানা থাকে না। সমাজতান্ত্রিক
ব্যবস্থায় জনসাধারণের প্রয়োজন অনুসারে পণ্য উৎপাদন হয়। সমাজতান্ত্রিক
অর্থনীতিতে একটি দেশের কলকারখানা, খনি, জমি ইত্যাদি সামাজিক রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়।”
০৬
কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদ’ প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে তার ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থে। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থে মোট ১১টি কবিতা স্থান পেয়েছে; ‘সাম্যবাদী’, ‘নারী’, ‘মানুষ’, ‘বারাঙ্গনা’, ‘রাজা-প্রজা’, ‘ঈশ্বর’, ‘পাপ’, ‘কুলি-মজুর’, ‘চোর-ডাকাত’, ‘সাম্য’ ও ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’।
কবিতা: সাম্যবাদী:
‘সাম্যবাদী’
কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বরে লেবার স্বরাজ পার্টির মুখপত্র হিসেবে খ্যাত ‘সাপ্তাহিক লাঙল’ পত্রিকায়। কাজী নজরুল ইসলামকে ‘লাঙল’-এর প্রধান পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ‘লাঙল’-এর প্রথম সংখ্যাতেই কাজী নজরুল ‘সাম্যবাদী’ নামের কবিতাটি লিখলেন। নজরুলের
এই কবিতাটিতে ‘সাম্যবাদের সবচেয়ে পরিশীলিত ও গ্রহণযোগ্য অর্থের প্রতিধ্বনি শোনা
যায়:
“গাহি সাম্যের
গান-
যেখানে আসিয়া এক
হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি? –পার্সি?
জৈন? ইহুদি? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কন্ফুসিয়াস?
চার্বাক চেলা? বলে যাও, বল আরো!
বন্ধু, যা খুশি
হও,
পেটে-পিঠে, কাঁধে-মগজে
যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থ-সাহেব
পড়ে যাও যত শখ,-
কিন্তু, কেন এ
পণ্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?
দোকানে কেন
এ দর কষাকষি? পথে ফোটে তাজা ফুল!” ০৭
সাম্যবাদের সুর
স্পষ্ট করতে একই কবিতার নীচের অংশে কবি আরো লিখেছেন:
“বন্ধু বলিনি ঝুট,
এইখানে এসে
লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।
এই হৃদয়ে সে
নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,
বুদ্ধ গয়া এ,
জেরুজালেম এ,মদিনা, কাবা-ভবন,
মজজিদ এই,মন্দির
এই, গীর্জা এই হৃদয়,
এইখানে বসে ঈসা
মুসা পেল সত্যের পরিচয়।” ০৮
কবিতাটির একদম
শেষ লাইনে তিনি ঘোষাণা করেছেন:
--- মিথ্যা শুনিনি
ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির-কাবা নাই। ০৯
কবিতা: সাম্য:
প্রকাশকাল: ১৯২৫
খ্রি. কাব্যগ্রন্থ: সাম্যবাদী। কবিতায় তিনি শ্রেণিহীন, বৈষম্যহীন, মানবতাবাদী এক
অসাম্প্রদায়িক সমাজের সচিত্র রুপরেখা আবিষ্কার করে তিনি তার পাঠক ও ভক্তবৃন্দকে
তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। উপমহাদেশের তখনকার পাড়া-মহল্লায় চলমান
শ্রেণি-বিভক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে উত্তাল ভারতীয় সমাজে বাস করে তিনি এ
কোন সমাজের ছবি দেখালেন! মানুষের জয়গান গাইতে যেয়ে কবিতার শুরুতেই তিনি উপস্থাপন
করলেন তার জড়তাহীন দৃপ্ত উচ্চারণ:
“গাহি সাম্যের গান-
বুকে বুকে হেতা তাজা ফুল ফোটে, মুখে মুখে
তাজা প্রাণ!
বন্ধু, এখানে রাজা-প্রজা নাই, নাই দরিদ্র-ধনী,
হেতা পায় না ক কেহ ক্ষুদ-ঘাটা, কেহ
দুধ-সর-ননী।” ১০
একই কতিায় তিনি
আরো ঘোষণা করেন:
“সাম্যবাদী-স্থান-
নাই কো এখানে কালা ও ধলার আলাদা গোরস্থান।
নাই কো এখানে কালা ও ধলার আলাদা
গীর্জা-ঘর,
নাই কো পাইক বরকন্দাজ নাই পুলিশের ডর।
এই সে স্বর্গ, এই সে বেহেশত, এখানে বিভেদ
নাই,
যত হাতাহাতি হাতে হাত রেখে মিলিয়েছে ভাই
ভাই!” ১১
এখানেও. একদম শেষ
লাইনে তিনি উচ্চারণ করেছেন:
পায়জামা প্যান্ট ধুতি নিয়া হেতা হয় না ক’ ঘুষাঘুষি
ধুলায় মলিন দুধের পোশাকে এখানে সকলে খুশি।
কবিতা: কুলি-মজুর:
প্রকাশকাল: ১৯২৫
খ্রি. কাব্যগ্রন্থ: সাম্যবাদী। জীর্ণতা ভরা এই পৃথিবীর সকল অত্যাচার, অবিচার,
অসঙ্গতি, শ্রেণিভেদ ও দাসত্বের শৃঙ্খল ছিন্ন করে কবি মানুষকে দিতে চেয়েছিলেন ক্ষুধামুক্ত,
শোষণমুক্ত, মানবতাবাদী নতুন এক সমতার পৃথিবীর ঠিকানা যা আমরা খুঁজে পেয়েছি তার
‘সাম্য’ কবিতায়। কিন্তু ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কবির স্বপ্নের মডেল সমাজ-ব্যবস্থা
খুঁজে পাওয়া গেলো না। যে কারণে কবির বিদ্রোহী সত্ত্বা ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় প্রতিবাদ
মুখর হয়ে উঠতে দেখা গেলো:
“দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি বলে এক বাবুসাব তারে ঠেলে দিল নিচে
ফেলে।
চোখ ফেটে এল জল
এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দৃর্বল?”
১৩
কবির বিদ্রোহী
রণরূপ ও প্রতিবাদী উচ্চারণ আরো ধারালো শুনতে পাই এই কবিতার মাঝ দিকের পঙক্তিমালায়…
“আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে
হেইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায় ভাঙিল যারা
পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের
হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও
কুলি,
তোমারে বহিতে মযারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল
ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদের
গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
তুমি শুয়ে র’বে তেতালার ‘পরে, আমরা রহিব
নিচে,
অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে-ভরসা আজ মিছে!”
১৪
কবিতা: মানুষ
প্রকাশকাল: ১৯২৫
খ্রি. কাব্যগ্রন্থ:সাম্যবাদী। কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের মানবিক সত্ত্বাকে জাগরুক
করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছেন। স্থান-কাল-পাত্রের ভেদ তুচ্ছ করে অভিন্ন
সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চূড়ান্ত অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে কবির বিখ্যাত এই ‘মানুষ’
কবিতায়:
“গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু
মহীয়ান!
নাই দেশ কাল–পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে, সব কালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞ্যাতি।”১৫
কবিতা: নারী
প্রকাশকাল: ১৯২৫
খ্রি. কাব্যগ্রন্থ:সাম্যবাদী। কবি নজরুল উপলব্দি করেছিলেন শোষণমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত,
শ্রেণিহীন, বৈষম্যহীন একটি আদর্শ সমাজ গড়তে হলে প্রথমেই সামাজিক শ্রেণি-বিভক্তির
দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে বিদ্যমান অমিল
দূর করতে চেয়েছিলেন; ধনী-গরীব, নারী-পূরুষ ও সাদা-কালোর মাঝে বিদ্যমান বৈষম্য দূর
করে একটি বৈষম্যহীন নতুন সমাজ ব্যবস্থা উপহার দিতে চেয়েছিলেন। ‘নারী’ কবিতায় তিনি
নারী-পূরুষের সমমর্যাদা ঘোষণা করে মূলতঃ সমাজের অবহেলিত সম্প্রদায় নারীদের জয়োগান
গেয়েছেন:
“সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা
অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।”
১৬
মানব সভ্যতা
বিনির্মাণে নারী ও পুরুষের সমান ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করে দিয়ে পুরুষ
শাসিত সমাজে তিনি নারীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তিনি নারীর ভিতরে ঈশ্বরপ্রদত্ত্ব
ক্ষমতার স্ফুরণ ঘটিয়ে সমাজে তাদেরকে একটি সম্মানজনক স্থানে অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন।
একই কবিতায় তিনি আরো লিখেছেন:
“তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে
শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী,
শস্য-লক্ষ্মী নারী
সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রুপে রুপে
সঞ্চারি’।
পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ,
কামিনিী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ,
বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস, নিশীথে হয়েছে
বধু,
পূরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে, নারী যোগায়েছে
মধু।” ১৭
মানব সভ্যতার
সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় প্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ অর্জনের সাথে পুরুষের বীরত্বগাঁথার পাশাপাশি
নারীর কীর্তিগাঁথার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইতিহাস এই কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে। সমাজে
নারীর ক্ষমতাকে করুণা দিয়ে নয়, বরং মর্যাদার দৃষ্টি দিয়ে দেখার আহ্বান করেছেন কবি।
তিনি লিখেছেন:
“কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের
তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়
লক্ষ্মী নারী।
রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে
রানী,
রানীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজার যত
গ্লাণি।”১৮
সকল
শ্রেণি-বিভক্তি ও বৈষম্যের দেয়াল ভেঙ্গে কবির মানসপটে চিত্রিত অসম্প্রদায়িক ও
মানবিক সমাজ গড়তে হলে নারীর প্রতি অমর্যাদার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।
সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে কবি বোঝাতে চেয়েছেন নারীর প্রতি অবহেলার দিন শেষ।
“সে-যুগ হয়েছে বাসী,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক, নারীরা আছিল
দাসী!
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ
আজি,
কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা
বাজি’।” ১৯
কবিতা: পাপ
প্রকাশকাল: ১৯২৫
খ্রি. কাব্যগ্রন্থ:সাম্যবাদী। ‘পাপ’ কবিতায় কবি পাপীদেরকে ঘৃণার চোখে না দেখে
সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছে সমাজে
বসবাসরত সবাই কমবেশি পাপে নিমজ্জিত; কাউকে পাপী শ্রেণিভুক্ত না করে তিনি অভিন্ন
সমাজ নির্মাণের তাগিদ দিয়ে তিনি লিখেছেন:
“সাম্যের গান গাই।
যত পাপী-তাপী সব মোর বোন, সব হয় মোর ভাই।
এ পাপ-মুল্লুকে পাপ করেনি ক’ কে আছে
পুরুষ-নারী?
আমরা তো ছার; -পাপে পঙ্কিল পাপীদের কাণ্ডারি!” ২০
কবিতা: রাজা-প্রজা
প্রকাশকাল: ১৯২৫
খ্রি. কাব্যগ্রন্থ:সাম্যবাদী। নজরুলের সাম্যবাদী ভাবনাগুলো খুবই সরলভাবে উপস্থাপিত
তার লেখা ‘রাজা-প্রজা’ কবিতায়। তিনি অকপটে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন- একই ধরণীতে, একই
আকাশের নীচে বাস করে কেন কেউ রাজা হবে, কেউ হবে প্রজা?
“সাম্যের গান গাই
যেখানে আসিয়া সম-বেদনায় সকলে হয়েছি ভাই।
এ প্রশ্ন অতি সোজা,
এক ধরণীর সন্তান, কেন কেউ রাজা, কেউ
প্রজা?” ২১
কাজী নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী চিন্তায় আপাদমস্তক নিমজ্জিত একজন দেশপ্রেমিক। তিনি মর্মে মর্মে অনুভব করতেন মানবধর্মকে, মানুষকে ও মানবীয় চেতনাকে। তাই তো অধিকাংশ কবিতায় ‘সাম্যবাদ’ প্রধান উপজীব্য বিষয় হয়ে উঠেছে। কাজী নজরুল মানবপ্রেমের সঙ্গে দেশপ্রেম মিশিয়ে মানবতাকে সমুজ্জ্বল করেছেন। মাতৃভূমির দুর্দিনে দেশপ্রেম জাগরুক করার জন্য তিনি বারবার তার দেশবাসিকে সতর্ক করেছেন:
“মাভৈ! মাভৈ! এত দিনে বুঝি জাগিল ভারতে প্রাণ,
সজীব হইয়া উঠিয়াছে আজ শ্মশান-গোরস্তান!
ছিল যারা চির-মরণ-আহত,
উঠিয়াছে জাগি’ ব্যথা জাগ্রত,
‘খালেদ’ আবার ধরিয়াছে অসি, ‘অর্জুন’ ছোঁড়ে বাণ।
জেগেছে ভারত, ধরিয়াছে লাঠি হিন্দু-মুসলমান।
মরে হিন্দু, মরে মুসলিম এ উহার ঘায়ে আজ,
বেঁচে আছে যারা মরিতেছে তারা, এ মরণে নাহি লাজ।” ২৩
কাজী নজরুল ইসলাম এর মতো ইংরেজ কবি ‘পার্শি বিশি শ্রেলী’র কবিতাতেও আমরা বিদ্রোহের সুর শুনতে পাই; যদিও দুই কবির বিদ্রোহীসত্ত্বার ধরণ কিছুটা আলাদা। ‘‘‘Ode to the West Wind’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
“Wild Spirit, which art moving everywhere;
Destroyer and Preserver; hear, O hear!” ২৪
কবিতায় তিনি পুরাতন ও চলমান ঘুনেধরা সমাজকে
ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিতে চেয়েছেন একই সাথে কবিতার শেষ দিকে তিনি চরম আশাব্যঞ্জক
পঙক্তিমালা ছুঁড়ে দিয়ে তিনি তার কাঙ্ক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা খুঁজে পেতে চেয়েছেন:
“The trumpet of a prophecy! O Wind,
If Winter comes, can
Spring be far behind?”২৫
কিন্তু
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের এই ঘুণে ধরা সমাজকে ধ্বংশ করতে কবিতার
পরতে পরতে হাতুড়ি শাবল চালাতে দেখেছি। কিন্তু সাম্যবাদী চেতনায় লেখা নজরুলের অন্যান্য
অনেক কবিতার মর্মার্থ যদি একটি টেবিলে একত্রে উপস্থাপন করা যায় তাহলে দুই জগতের
দুই কবিতার বিদ্রোহী সত্ত্বার মাঝে যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়:
“আমি চিরদুর্দ্দম,
দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ,
আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ
পৃথ্বীর!
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙ্গে করি সব
চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন,
যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি
ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধুর্জ্জটী, আমি
এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির!”২৬
কাজী নজরুল ইসলাম
মার্ক্সিস্ট
মতাদর্শে
গভীরভাবে আকৃষ্ট ছিলেন। নজরুল রচিত ‘সাম্যবাদী’, ‘ঈশ্বর’, ‘মানুষ’, ‘নারী’, ‘পাপ’, ‘কুলি-মজুর’ ইত্যাদি কবিতা তারই নিদর্শন। এসব কবিতার মাধ্যমে তিনি মার্ক্সিজমের মতাদর্শকে সমুন্নত রেখে শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। ‘গণবাণী’তেই নজরুল ১৯২৭ সালে মে দিবসে শ্রমজীবীদের আন্তর্জাতিক সংগীত বা ‘ইন্টারন্যাশনাল’ গানের বঙ্গানুবাদ করেন। গানটি ফরাসি শ্রমিক কবি ইউজিন পাতিয়ের রচিত। গানটি এখনো সারা বিশ্বের কমিউনিস্টরা তাদের দলীয় সংগীত হিসেবে গেয়ে থাকেন। সাম্যবাদী এ কবি পরবর্তীকালে ধারাবাহিকভাবে লেখেন, ‘শ্রমিকের গান’, ‘লাল পতাকার গান’, ‘ধীবরের গান’ ইত্যাদি শ্রমজীবী অংশের মানুষের শ্রেণিচেতনার গান। মার্ক্সীয় চেতনার গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে নজরুলের ‘সাম্যবাদী’ ও ‘সর্বহারা’ কবিতায়। ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে মেহনতি মানুষের হৃদয়ের বেদনার কথা।
“ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দু’টো
ভাত একটু নুন
বেলা বয়ে যায়, খায়নি ক’ বাছা, কচি পেটে
তার জ্বালা আগুন!
কেঁদে ছুটে আসি পাগলের প্রায়,
স্বরাজের নেশা কোথা ছুটে যায়!
কেঁদে বলি, ওগো ভগবান তুমি আজিও আছ কি?
কালি ও চুন
কেন ওঠে না ক’ তাহাদের গালে, যারা খায় এই শিশুর
খুন?” ২৭
যুগে যুগে দেশে
দেশে দেখা গেছে সাম্যবাদীরাই মূলতঃ অসাম্প্রদায়িক
হয়। কাজী নজরুল ইসলামও ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক মূর্ত প্রতীক। তিনি মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করেননি, তাঁর কাছে
মানুষের কোনো জাতপাত ছিল না। সবার
মাঝে শুধু ‘মানুষ’ পরিচয়টাই তিনি খুঁজে
ফিরেছেন আজীবন। নজরুলের কবি চেতনায় যে সাম্যবাদী মূল্যবোধ প্রখরভাবে ক্রিয়াশীল ছিল, তা ঈদ
বিষয়ক কবিতাগুলোয় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। রিক্ত-নিঃশ্ব
ও না খেয়ে থাকা অভূক মানুষের জীবনে ঈদের খুশি কীভাবে আসে?
তিনি তাঁর সাম্যবাদী কলমের
খোঁচায় তুলে ধরেছেন নিঃস্ব
মানুষের জীবনের চালচিত্র; হানা দিয়েছেন আমাদের ঘুণে ধরা সমাজের ভোঁতা মগজে। বিভিন্ন কবিতায় ইসলামী সাম্যবাদী চেতনাকে
তিনি সর্বজনীন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
তার লেখা ‘নতুন চাঁদ’ কবিতায়ও এ চেতনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে—
সাম্যেও রাহে আল্লাহের
মুয়াজ্জিনেরা ডাকিবে ফের,
--------------------------------
রবে না ধর্ম জাতির ভেদ
রবে না আত্ম-কলহ ক্লেদ।
২৮
‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’—এ মর্মবাণী নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে
মহিমান্বিত করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, বৌদ্ধ হোক, খ্রিষ্টান হোক—নিপীড়িত মানবতার একটাই পরিচয়, তারা শোষিত-বঞ্চিত মানুষ। আর তাঁর কলম সব সময় শোষিত, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত মানুষের জন্য সোচ্চার ছিল। নজরুলের সাম্যবাদী ভূমিকার জন্যই সে সময় তিনি সমধিক পরিচিতি লাভ করেন। কারণ, তিনি মানুষের শোষণকে, নির্যাতনকে সরাসরি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন।
কবির নিজের মুখের এই দার্শনিক উচ্চারণে লুকিয়ে আছে মহাবিশের মহাকাল সম্পর্কে কবির পরিচ্ছন্ন ধারণা। এই বিশ্বচরাচরে, মহাশূণ্যতার মাঝে তন্নতন্ন করে কবি খুঁজে ফিরেছেন জীবন-সংসার ও মানবসৃষ্টির প্রকৃতি রহস্য। বাংলা কবিতায় কাজী নজরুল এনেছিলেন সাম্যবাদের সুর, প্রচার করেছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনুপম সহাবস্থান। তার কবিতা ও সংগীতে যেমন স্থান পেয়েছে ইসলামী জীবন-দর্শন, তেমনি শ্যামা-সংগীত ও সনাতন জীবনাদর্শ তার মানবিক মূল্যবোধে এনেছে তাৎপর্যপূর্ণ বৈচিত্র। ‘মানবপ্রেম’ কবির ব্যক্তি-জীবন ও মানবিক সত্ত্বাকে করেছিল মহিমান্বিত। প্রেমের আকুতি, অপ্রাপ্তি ও অতৃপ্তি তার কাব্যসরোবরে যেসব ফুল ফুটিয়েছিল সে ফুলগুলো নানা বর্ণে, গন্ধে ও সৌরভে বিকশিত হয়ে কবির অন্তর্জগতে সৃষ্ঠি করেছিল গভীরতম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পবিত্র মন্দির। ‘আর বাঁশি না বাজে’ অভিভাষণে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন:
’যেদিন আমি চলে যাবো, সেদিন হয়তো বড় বড় সভা হবে। কত প্রশংসা, কত কবিতা বেরোবে আমার নামে; দেশ্রপ্রমিক, ত্যাগী, বীর-বিদ্রোহী, বিশেষণের পর বিশেষণ! টেবিল ভেঙ্গে ফেলবে থাপ্পড় মেরে বক্তার পর বক্তা। সেই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের শ্রাদ্ধদিনে বন্ধ,ু তুমি যেন যেও না। যদি পার, চুপটি করে বসে আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্মরণ করো...’২৯
তিনি সব
ধর্মের
ঊর্ধ্বে উঠে
মানবধর্মকেই উচ্চাসনে বসিয়েছেন। মানবের
মাঝে
তিনি
স্রষ্টাকে আবিষ্কার করেছেন। কেননা
সৃষ্টিকর্তা তার
সৃষ্ট
জীব
মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা
‘সৃষ্টির সেরা
জীব’
বলে
ঘোষণা
দিয়েছেন। ফলে
কবি
নজরুলের সাম্যবাদ স্রষ্টাকে অস্বীকার করে
নয়।
কাল
মার্কসের মতো
তার
সাম্যবাদ নাস্তিক্য সাম্যবাদ নয়।
তার
সাম্যবাদ আস্তিক্য সাম্যবাদ। অসাম্প্রদায়িক হলেও
তিনি
পুরোপুরি আস্তিক
ছিলেন ‘আর বাঁশি
না বাজে’ অভিভাষণে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন:
“যদি
কোন দিন আপনাদের প্রেমের প্রবল টানে আমাকে আমার একাকীত্বের পরম শূন্যতা থেকে অসময়ে
নামতে হয় তাহলে সেদিন আমায় মনে করবেন না আমি সেই নজরুল; সেই নজরুল অনেকদিন আগে মৃত্যুর
খিড়কি দুয়ার দিয়ে পালিয়ে গেছে। মনে করবেন পূর্ণত্বের তৃঞ্চা নিয়ে যে অশান্ত তরুন এই
ধরায় এসেছিল, অপূর্ণতার বেদনায় তার বিগত আত্মা যেন স্বপ্নে আমাদের মাঝে কেঁদে গেল...”
৩০
আমরা দেখতে
পাই,
কাজী
নজরুলের কবিতার
প্রধান
বিষয়
বিপ্লব
আর
সাম্যবাদ। যুগ-চেতনা তাকে বিপ্লবের মন্ত্র
শিখিয়েছে আর
সামাজিক বৈষম্য
তাকে
সাম্য
প্রতিষ্ঠায় আগ্রাসী করে
তুলেছে। ‘আর বাঁশি
না বাজে’ অভিভাষণে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন:
“আমাকে বিদ্রোহী বলে খামাখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এই নীরিহ জাতটাকে আঁচড়ে-কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়ানোর ইচ্ছা আমার কোনদিনই নেই। আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অত্যাচারের বিরুদ্ধে। যা মিথ্যা, কলুষিত, পুরাতন, পঁচা, সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে। ধর্মের নাম ভণ্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে।” ৩১
তাঁর বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দুতে সাম্যবাদ, নারীর
মর্যাদা ও মানুষে মানুষে গড়ে
ওঠা
প্রেম।
কোনো
সচেতন
শিল্পী
তার
সময়
ও সমাজকে কখনো অস্বীকার করতে
পারেন
না।
কাজী
নজরুল
ইসলাম
তার
ব্যতিক্রম নন।
তিনি
দেশের
এমন
এক
সংকটময়
মুহূর্তে আবির্ভূত হয়েছিলেন; যখন
মুক্তি
সংগ্রামের স্লোগান আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছিল। ফলে,
এ আন্দোলন-সংগ্রামের প্রভাব পড়েছে তার
কাব্যে। দাসত্বের শৃঙ্খল
থেকে
মুক্তি
পেতে, ভারতবর্ষের মানুষকে স্বাধীনতা
উপহার দিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। যার হাতিয়ার হিসেবে তিনি সাম্যবাদকে
তার সাহিত্য সাধনার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
“কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই নয়। আমি কেবল মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিনত করার চেষ্টা করেছি। সে হাতে-হাত মিলানো যদি হাতাহাতির চেয়েও অশোভন হয়ে থাকে, তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয় যাবে, আমার গাট-ছড়ার বাঁধন কাটতে তাদের কোনো বেগ পেতে হবে না। কেননা, একজনের হাতে আছে লাঠি, আরেক জনের আস্তিনে আছে ছুরি। হিন্দু-মুসলমানে দিন রাত হানহানি, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মানুষের জীবনে একদিকে কঠোর দারিদ্র, ঋন, অভাব, অন্যদিকে লোভী অসুরের যক্ষের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা পাষাণ স্তুপের মত জমা হয়ে আছে। এই অসাম্য, ভেদ জ্ঞানকে দূর করতেই আমি এসেছিলাম। আমার কাব্যে, সংগীতে, কর্মজীবনে, অভেদ-সুন্দর সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। আমি যশ চাইনা, খ্যাতি চাইনা, প্রতিষ্ঠা চাইনা, নেতৃত্ব চাইনা। জীবন আমার যত দুঃখময়ই হোক, আনন্দের গান, বেদনার গান গেয়ে যাব আমি। দিয়ে যাবো নিজেকে নিঃশেষ করে সকলের মাঝে বিলিয়ে, সকলের বাঁচার মাঝে থাকবো আমি বেঁচে। এই আমার ব্রত, এই আমার সাধনা, এই আমার তপস্যা।” ৩২
উপরোক্ত তথ্য-উপাত্ত ও যৌক্তিক আলোচনা
থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় প্রেম, মানবতা, দ্রোহ সবকিছুকে ছাড়িয়ে তিনি যে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক সাম্যবাদী কবি
ছিলেন, তা সহজেই অনুমেয়। যদিও কিছু মানুষ
অন্ধের হাতী দেখার মতো নজরুলের খণ্ডিত মতাদর্শ উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। একদল বলেছেন, নজরুল মুসলমানের কবি, আর একদল বলেছেন নজরুল হিন্দুদের কবি। প্রকৃতপক্ষে, তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক
একজন আপাদমস্তক সাম্যের কবি। তিনি সাম্যবাদী কবি,
বাঙালির প্রাণের কবি।
তথ্যসূত্র:
০২. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: শ্রীশ দাস লেন, ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: বিদ্রোহী,পৃষ্ঠা: ০৭, লাইন ১২৯-১৩৩
০৩.https://en-m-wikipediaorg.translate.goog/wiki/Humanism/04 April 2025/ Friday/10:30 pm
০৬. https://bn.wikipedia.org/wiki/04 April 2025/Friday/09:০০ pm
০৭. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: সাম্যবাদী,পৃষ্ঠা: ১৫২, লাইন ০১-১২
০৮. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: সাম্যবাদী,পৃষ্ঠা: ১৫২, লাইন ১৯-২৪
০৯. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: সাম্যবাদী,পৃষ্ঠা: ১৫২, লাইন ৩১-৩২
১০. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: সাম্য,পৃষ্ঠা: ১৬৪, লাইন ০১-০৪
১১. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা,, জুন ২০০৪ (কবিতা: সাম্য,পৃষ্ঠা: ১৬৪, লাইন ০৭-১২
১২. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: সাম্য,পৃষ্ঠা: ১৬৪, লাইন ১৯-২০
১৩. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: শ্রীশ দাস লেন, ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: কুলি-মজুর,পৃষ্ঠা: ১৬৪, লাইন ০১-০৪
১৪. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: কুলি-মজুর,পৃষ্ঠা: ১৬৪, লাইন ১৪-২৩
১৫. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: মানুষ,পৃষ্ঠা: ১৫৩, লাইন ০১-০৪
১৬. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: নারী,পৃষ্ঠা: ১৬০, লাইন ০১-০৬
১৭. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা,, ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: নারী,পৃষ্ঠা: ১৬০, লাইন ১৩-২০
১৮. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: নারী,পৃষ্ঠা: ১৬১, লাইন ৩৭-৪০
১৯. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা,, জুন ২০০৪ (কবিতা: নারী,পৃষ্ঠা: ১৬১, লাইন ৫৫-৫৮
২০. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: পাপ,পৃষ্ঠা: ১৫৬, লাইন ০১-০৪
২১. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: রাজা-প্রজা,পৃষ্ঠা: ১৬২, লাইন ০১-০৪
২২. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: কাণ্ডারী হুশিয়ার,পৃষ্ঠা: ১৯২, লাইন ১১-১৪
২৩. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধ,পৃষ্ঠা: ২২৯, লাইন ০১-০৬
২৪. Dr. S Sen, Selected Poems of Percy Bysshe Shelley: New Delhi, Unique Publishers,1997 (Page: 223, Ode to the West Wind, Line: 13-14
২৭. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: বিদ্রোহী,পৃষ্ঠা: ১৯৭, লাইন ৬১-৬৬
২৮. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: ঢাকা, জুন ২০০৪ (কবিতা: বিদ্রোহী,পৃষ্ঠা: ৩৪৪, লাইন ১৫-৩১
২৯. কাজী নজরুল ইসলাম অভিভাষণ: যদি আর বাঁশি না বাজে;
৩০. কাজী নজরুল ইসলাম অভিভাষণ: যদি আর বাঁশি না বাজে;
৩১. কাজী নজরুল ইসলাম অভিভাষণ: যদি আর বাঁশি না বাজে;
৩২. কাজী নজরুল ইসলাম অভিভাষণ: যদি আর বাঁশি না বাজে;
সহায়ক গ্রন্থাবলী:
০১. কাজী নজরুল ইসলাম, সাম্যবাদী: কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা, জুন ২০২০
০২. ওসমান গনি, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা সংগ্রহ: (ঢাকা, আগামী প্রকাশনী, ২০০৪)
০৩. Dr. S Sen, Selected Poems of Percy Bysshe Shelley: New Delhi, Unique Publishers, 1997
০৪. কাজী নজরুল ইসলাম, রুবাইয়াৎ-ই ওমর খৈয়াম: (ঢাকা, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
০৫. ড. আনোয়ারুল করিম, নজরুল: তাঁর সমকালে: (ঢাকা, নওরোজ সাহিত্য সম্ভার, ২০১৪
০৬. শাহীনুর রেজা, নজরুলের সংগীত জীবন: প্রথমা প্রকাশনী, ঢাকা ২০১২ খ্রি
০৭. রফিকুল ইসলাম, নজরুল জীবনী: কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা,
০৮. Winston E. Langley, Kazi Nazrul Islam: The Voice of Poetry and the Struggle for Human Wholeness: February 2009.
০৯. রফিকুল ইসলাম, কাজী নজরুল ইসলাম: জীবন ও সৃজন, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা, জুন ২০১৮
১০. সংগ্রহ সুনীল কান্তি দে, নজরুলের লাঙ্গল পত্রিকায় কৃষক-শ্রমিক প্রসঙ্গ, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা, জুন ২০১০
১১. অনীক মাহমুদ, আধুনিক বাংলা কাব্যে সাম্যবাদী চেতনা: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৯৫
(শব্দসংখ্যা: ৪৬৭৪)
This composition has copyright issue. Researchers may collect this document taking prior recommendation from the writer.
No comments:
Post a Comment